মেরুকরণ উস্কে দিয়েও মোদী চৌকিদার হতে চান উন্নয়নের
কানপুরে সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। আজও সম্প্রীতির পথ থেকে সরে এলেন না বটে, কিন্তু বুন্দেলখণ্ডে এসে উস্কে দিলেন মুজফফ্রনগরে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের স্মৃতি। সুকৌশলে রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করার অছিলায় মেরুকরণের তাস খেলার ইঙ্গিত দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার আগে থেকে গোধরা দাঙ্গার ক্ষত মুছতেই তৎপর ছিলেন হিন্দুত্বের পোস্টার বয় মোদী। এ পর্যন্ত একাধিক সভায় কোনও দাঙ্গা নিয়েই মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে। তাঁর ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার কৌশল নিয়েছে, দলের কট্টরবাদী নেতাদের মুখে থাকবে হিন্দুত্বের জিগির। আর মোদী বুনবেন উন্নয়নের স্বপ্ন। কানপুরেও সেই সমীকরণ মেনে এগিয়েছেন মোদী ও বিজেপি নেতৃত্ব। ঝাঁসিতেও তার অন্যথা হয়নি। উমা ভারতী, কল্যাণ সিংহের মুখে যখন জয় শ্রীরাম ধ্বনি, তখন মোদী জোর দিয়েছেন দেশের অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা বুন্দেলখণ্ডের উন্নয়নে। স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে পাল্টে দেবেন বুন্দলখণ্ডের ভবিষ্যৎ। জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি তাঁর লক্ষ্য নয়। মানুষ যেন তাঁকে উন্নয়নের চৌকিদার নিযুক্ত করেন।
কিন্তু একই উন্নয়ন-বার্তা ও বিনয়ী আচরণের মধ্যেও ঝাঁসিতে মোদী যেন কানপুরের থেকে কিছুটা আলাদা চেহারায়। কংগ্রেসের প্রচারের প্রধান মুখ হয়ে ওঠা রাহুলকে আক্রমণের সূত্রে সুকৌশলে তিনি আজ মুজফফ্রনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। মুসলিম ভোট পাবেন না জেনেও তাঁদের পক্ষ নিয়ে বেঁধেন কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে। রাহুল কাল ইনদওরে এক সভায় দাবি করেছেন, মুজফফ্রনগরে হিংসায় স্বজন হারানো মুসলিম যুবকদের সঙ্গে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যোগাযোগ করেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর এক অফিসার তাঁকে ওই তথ্য দিয়েছেন রাহুল জানিয়েছেন।

ঝাঁসির সমাবেশে নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
এই সূত্রেই মোদীর প্রশ্ন, “শাহাজাদা ছাড়া রাহুলের আর কী পরিচয় রয়েছে? তিনি একজন সাংসদ মাত্র। তিনি কোনও মন্ত্রগুপ্তির শপথ নেননি। তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে গোয়েন্দাবাহিনী তথ্য দেবে?” পাশাপাশি কোন মুসলিম যুবকদের সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগাযোগ রয়েছে তা নিয়েও রাহুলকে জনসমক্ষে তথ্য পেশ করার দাবি তোলেন তিনি। কৌশলে সংখ্যালঘু সমাজের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, “রাহুল নাম না বলতে পারলে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। তা না হলে কোনও গোষ্ঠীর নামে এ ভাবে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া উচিত নয়।”
সন্দেহ নেই মোদীর এই মন্তব্য ভোট মেরুকরণের স্বার্থেই। উদারপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ যে সব ভোটার মোদীকে সমর্থনের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত, এটা তাঁদের প্রতি একটা বার্তা বলেই মনে করছেন বিজেপি-র নেতারা। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের একটা সর্বভারতীয় ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে তৎপর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি শিবির খুব ভাল করেই জানে, দেশের সংখ্যালঘু সমাজের বড় অংশের সমর্থন তারা পাবে না। কিন্তু দলের কাছে তার থেকেও বড় সমস্যা হল গোটা দেশে ধর্মনিরপেক্ষ একটি বড় ভোট রয়েছে যারা বিজেপির কট্টর হিন্দুত্বের নীতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু দিল্লির দখলের স্বপ্নকে ছুঁতে হলে কট্টর ও উদারবাদী সব হিন্দু ভোট সংহত করাটা একান্ত জরুরি মোদীর পক্ষে। সে জন্য উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো গো-বলয়ের রাজ্যে ভাল ফল করতে হলে উন্নয়নের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মেরুকরণের রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বিজেপি-র। অথচ সেই কাজ করতে গিয়ে কট্টর হিন্দত্বের জিগির তোলা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। সরাসরি দাঙ্গা নিয়েও কিছু বলা সম্ভব নয়। তাই ঘুরিয়ে রাহুলকে আক্রমণ শানিয়ে মেরুকরণের চেনা ছকে হাঁটার ইঙ্গিত দিলেন মোদী। তা ছাড়া খোদ রাহুল যেখানে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন তখন বিজেপি কেন তার সুযোগ নেবে না, এই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতারা।
মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব ভাল করেই জানে, দিল্লি দখল করতে হলে ১৯৯৮ সালের ধাঁচে উত্তরপ্রদেশে আসন পেতে হবে তাদের। সে বারের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রায় ৬০টির কাছাকাছি আসন জিতেছিল। তাই আজ শুধু মুজফফ্রপুর দাঙ্গাই নয় আজ কৌশলে রাহুলকে আক্রমণ করতে গিয়ে শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গও তুলে আনেন মোদী। সম্প্রতি ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যু প্রসঙ্গে রাহুল নিজের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। আজ সেই কথার সূত্র ধরে মোদী রাহুলকে বিঁধে, সেই ঘটনার পরে প্রায় তিন হাজার শিখের হত্যা করা হয়। কিন্তু এখনও কেই সাজা পায়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদী। রাহুলের কথার প্রসঙ্গে উস্কে দিয়েছেন দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে শিখ সমাজের ক্ষোভও।
আগামী রবিবার গো-বলয়ের অন্য রাজ্য বিহারে যাচ্ছেন তিনি। দল মনে করছে আজ মেরুকরণের ইঙ্গিত দিয়ে পটনার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখলেন তিনি।
সেখানে নীতীশ কুমার ও তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর সামনে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.