|
|
|
|
বাগুইআটি |
গৃহকর্তার পরিচিত কেউ খুনি, অনুমান পুলিশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বাগুইআটির স্কুলপাড়ার বাসিন্দা সুনীল চাকীকে তাঁর পরিচিত কেউই খুন করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। এমনকী, সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না সুনীলবাবুর কয়েক জন নিকট আত্মীয়ও। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “আপাতত সুনীলবাবুদের গাড়িচালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। সুনীলবাবুর পরিচিত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর স্ত্রী নুপূরদেবী ও বড় ছেলে শৌভিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” সন্তোষবাবুর দাবি, “বাড়িতে অনেক দামি জিনিস থাকলেও কিছুই খোয়া যায়নি। তাই খুনের পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্যও থাকতে পারে বলে অনুমান।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগুইআটির স্কুলপাড়া এলাকায় নিজের ঘরেই সুনীল চাকী (৬৩) নামে ওই ব্যক্তির গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার সময়ে বাড়িতে আর কেউ ছিলেন না। সুনীলবাবুর স্ত্রী ও এক পরিচারিকা ঘরে এসে প্রথমে দেহটি দেখতে পান। পরে আসে বাগুইআটি থানার পুলিশ।
কেন খুন হতে হল সুনীলবাবুকে? সন্তোষবাবু বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পারিবারিক সম্পত্তির কারণে এই খুন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর পাশাপাশি সুনীলবাবুদের বাগুইআটির ওই বাড়ির প্রোমোটিং সংক্রান্ত কোনও বিবাদ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুনীলবাবুর ছেলে ও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
শুক্রবার সকালে সুনীলবাবুর বাড়িতে যায় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। যায় সিআইডি-র একটি দলও। বেলার দিকে যান ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরা এবং ফরেন্সিকের তিন সদস্যের একটি দল। তদন্তকারী দলের সদস্যেরা পরে জানান, প্রাথমিক ভাবে বাড়ির পিছনের খোলা জানলা বা ছাদের দরজায় পায়ের ছাপ বা ওই জাতীয় কিছু মেলেনি। এক তদন্তকারী বলেন, “বাড়ির পিছন দিকের পাইপ বেয়ে কেউ জানলায় উঠে এলে বা নামলে তার কিছু প্রমাণ মেলে। এখানে তেমন কিছু এখনও মেলেনি। আমাদের অনুমান, আততায়ী সামনের দরজা দিয়েই ঢোকে। সে পরিচিত ছিল বলেই সুনীলবাবু তাকে দোতলা থেকে দরজার চাবি দেন।”
পুলিশ জানায়, সুনীলবাবু যে ঘরে খুন হন, সেই ঘরের দু’টি আলমারিতে ছিল সোনার গয়না, দামি ক্যামেরা, কয়েক হাজার টাকা। আলমারি থেকে কিছু খোয়া না গেলেও সেগুলির লকার ছিল ভাঙা। গয়নার বাক্স বিছানায় ছড়ানো ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, কোনও দামি জিনিস না নিলে দুষ্কৃতীরা লকার ঘাঁটল কেন? তবে কি দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতেই এই কাজ? না বিশেষ কোনও জিনিসের খোঁজে দুষ্কৃতীরা আলামারি ঘাঁটা হয়েছে? সেটি কী, তার উত্তর অবশ্য মেলেনি।
এমন নানা প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ৬৩ বছরের সুনীলবাবু শারীরিক ভাবে এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, আততায়ীদের কি সুনীলবাবু চিনে ফেলেছিলেন? এক তদন্তকারী জানান, ওই বৃদ্ধের মাথায় ও গলায় ধারালো ভোজালি জাতীয় অস্ত্রের কোপ ছিল। খুন করার ধরনে প্রতিহিংসার একটা ছাপ পাওয়া যায়। প্রশ্ন উঠেছে, ডাকাতি করতে এসে এক জন অসুস্থ লোককে আততায়ীরা এ ভাবে আঘাত করবে কেন? পুলিশ জানায়, সুনীলবাবুর ঘরে কোনও অস্ত্র মেলেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ-কুকুর সুনীলবাবুদের বাড়ির পিছনে একটি কলতলা শনাক্ত করেছে। সুনীলবাবুকে খুন করে আততায়ী ওই কলতলায় অস্ত্রশস্ত্র ধুতে এসেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা এ দিন সুনীলবাবুর পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, পুজোর আগে বোনাস নিয়ে মতানৈক্যের জেরে ওই বাড়ির গাড়ির চালক কাজ ছেড়ে দেন। ওই চালকের সঙ্গে সুনীলবাবুর সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়। এই খুনের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বাড়ির দুই পরিচারিকা এবং মাস দেড়েক আগে ওই বাড়িতে কাজ করে যাওয়া রাজমিস্ত্রিকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
|
পুরনো খবর: ফ্ল্যাটে উদ্ধার গৃহকর্তার গলা কাটা মৃতদেহ |
|
|
|
|
|