ফ্ল্যাটে উদ্ধার গৃহকর্তার গলা কাটা মৃতদেহ
বাড়ির পরিচারিকা এসে কলিং বেল বাজিয়ে সাড়া পাননি। সন্দেহ হওয়ায় তিনি ফোন করেছিলেন বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে। তড়িঘড়ি অফিস থেকে ছুটে এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকে আতঙ্কে চিত্‌কার করে উঠেছিলেন ওই মহিলা। ঘরের ভিতরে পড়ে ছিল তাঁর স্বামীর রক্তাক্ত মৃতদেহ। গলার নলি কাটা।
সুনীল চাকি
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইআটির স্কুলপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সুনীল চাকি (৬৩)। তাঁর স্ত্রী নূপুরদেবী জানিয়েছেন, শোয়ার ঘরে পড়েছিল তাঁর স্বামীর দেহটি। ঘরের ভিতরে কাঠের আলমারি ও স্টিলের আলমারির তালা ভাঙা এবং জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ডাকাতির উদ্দেশ্যে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। তবে তদন্তের পরেই বোঝা যাবে খনুরে আসল কারণ বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে তারা সুনীলবাবুকে হত্যা করেছে। দেহটি শোয়ানো ছিল ঘরের বিছানায়। তখনও কান দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে সুনীলবাবুর। বিছানা জুড়ে চাপ চাপ রক্তের দাগ। রক্তের ছিটে দেখা যায় ঘরের দরজাতেও। নূপুরদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, যখন তিনি বাড়িতে ঢোকেন, তখন ঘরটির সব আলো নেভানো ছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, দোতলা বাড়ির উপরতলায় ছোট ছেলে সৌম্যকে নিয়ে থাকতেন ওই দম্পতি। তাঁদের বড় ছেলে শৌভিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। তিনি নিউ টাউনে থাকেন। স্কুলপাড়ার ওই বাড়িটির নীচের তলা ভাড়া দেওয়া থাকলেও অধিকাংশ সময়েই ভাড়াটেরা থাকেন না।
সুনীলবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে আসামে কাঠের ব্যবসা করতেন তিনি। কয়েক বছর আগে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় তাঁর। এর পরে ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি। সারা দিন তিনি একাই বাড়িতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী নূপুরদেবী বাগুইআটি দক্ষিণপাড়ায় একটি ব্যাঙ্কের অফিসার। ছোট ছেলে একটি কম্পিউটার সংস্থায় কর্মরত।
পুলিশ জানায়, প্রতিদিনই নুপূরদেবী এবং ছোট ছেলে সৌম্য বেরিয়ে যাওয়ার পরে পরিচারিকা এসে সকালের কাজ করে চলে যান। তিনি ফের বিকেলে আসেন। সুনীলবাবুর পরিবার জানিয়েছে, পরিচারিকা এলে সুনীলবাবু উপর থেকে দরজার চাবি ফেলে দিতেন। সেই চাবি দিয়ে দরজার তালা খুলে উপরে উঠতেন পরিচারিকা। দীর্ঘদিন ধরেই ওই বাড়িতে কাজ করেন এলাকারই বাসিন্দা ওই মহিলা।
পুলিশকে শিখা নামে ওই পরিচারিকা জানিয়েছেন, অন্য দিনের মতো এ দিনও বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি এসে কলিং বেল বাজিয়েছিলেন। বারবার বেল বাজিয়েও কেউ দরজা খোলেননি। শিখা তখন ফোন করেন নূপুরদেবীকে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাড়ির দরজা খোলেন নূপুরদেবী। খবর দেওয়া হয় বাগুইআটি থানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সুনীলবাবুর বাড়ির দোতলার দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকলেও উপরের বারান্দার একটি গ্রিল এবং পিছনের দিকের একটি বাথরুমের জানালা খোলা ছিল। এমনকী, ছাদের দরজাও ছিল খোলা। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দুষ্কৃতীরা ডাকাতির উদ্দেশ্যেই এসেছিল। ছাদের খোলা দরজা দিয়েই তারা পালিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, কয়েক দিন আগে বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ হয়েছিল। তাদেরই কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় ওই বাড়ির গাড়িচালক ও এক রাজমিস্ত্রিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে শিখাকেও।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ভিড় করেছে আত্মীয় প্রতিবেশিরা। সকলের মুখেই আতঙ্কের ছাপ। স্থানীয় বাসিন্দা শৈলেন ভট্টাচার্য বলেন, “আগে ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ডাকাতির জন্য এমন নৃশংসতা, তা-ও দিনেদুপুরে! এলাকার সকলেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি ভি আর এস অনন্তনাথ জানান, ঘরের আলমারি খোলা থাকলেও নিহতের পরিবার এখনও জানাতে পারেনি কিছু খোয়া গিয়েছে কি না। মূল্যবান কিছু ছিল না বলেও পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে পুলিশকে। বাকি সব ঘরের অবস্থা দেখেও সন্দেহ হচ্ছে পুলিশের। কারণ অন্য কোনও ঘরই লণ্ডভণ্ড করেনি দুষ্কৃতীরা। তাই এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তের জন্য রাতের দিকে পুলিশ-কুকুরও নামানো হয় ঘটনাস্থলে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.