উধাও প্রলেপ, যন্ত্রণার যাত্রা বাইপাসে
মাত্র দু’মাস আগেই ক্ষতে প্রলেপ পড়েছিল। কিন্তু ফের সেই ক্ষত দগদগে হয়ে উঠেছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে। রুবি মোড়ের পরে কালিকাপুর, সিংহবাড়ি, অজয়নগর মোড় থেকে বাঘা যতীন উড়ালপুল এলাকায় গোটা ই এম বাইপাস জুড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত।
পুজোর আগেই গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে গর্ত তৈরি হয়েছিল। প্রতিনিয়ত ঘটছিল দুর্ঘটনা। যানজট ছিল নিত্যসঙ্গী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তখন রাস্তার দুর্দশা ঘোচাতে খোদ পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বাইপাস পরিদর্শন করেন। কেএমডিএ-র কর্তাদের তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে। তার পরেই তড়িঘড়ি করে রাস্তার গর্তে বিটুমিন-পাথরকুচির প্রলেপ পড়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজোর পরে ভারী বৃষ্টি হতেই ফের খানাখন্দ বেরিয়ে পড়েছে নানা অংশে। চলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে যানবাহন। ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের কথায়, “ভাঙা রাস্তার জন্য প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকছে। অ্যাম্বুল্যান্স আটকে থাকলেও কিছু করা যাচ্ছে না।”
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী
যেমন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ রুবি মোড়ের কাছে দেখা গেল, গাড়ির লম্বা লাইন। তার মাঝে দাঁড়িয়ে তারস্বরে একনাগাড়ে হর্ন বাজাচ্ছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু তাতেও সামনের গাড়ির কোনও নড়াচড়া নেই। আবার রাস্তার মাঝে ডিভাইডার থাকায় উল্টো রাস্তা দিয়েও যাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ এমন ভাবে চলার পরে বাধ্য হয়েই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক এগিয়ে গেলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে। কিন্তু যানজট ছাড়ানো গেল না। দীর্ঘক্ষণ এমন চলার পরে শম্বুক গতিতে এগোতে শুরু করল গাড়ির লাইন। আর তাতেই চলতে থাকল ওই অ্যাম্বুল্যান্স।
শুধু এই একটি দৃশ্যই নয়। ভাঙা রাস্তার জেরে প্রতিনিয়ত গতি হারাচ্ছে দক্ষিণ শহরতলির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি। তবে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, এই যানজটের প্রভাব মুমূর্ষু রোগীদের উপরেও পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ই এম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। যানজটের জালে ফেঁসে অথবা খারাপ রাস্তার কারণে ঝাঁকুনিতে অনেক রোগীর হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্‌সকেরা। বেহাল রাস্তার জেরে কামালগাজি মোড় থেকে চিংড়িহাটা মোড় পর্যন্ত ১২ কিমি পেরোতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগছে। যেখানে আসলে খুব বেশি আধ হলে ঘণ্টা লাগার কথা বলেই দাবি করেছেন গাড়ির চালক ও স্থানীয়েরা।
নিত্যযাত্রী ও স্থানীয়েরা প্রশ্ন তুলেছেন রাস্তা মেরামতের গুণমান নিয়েও। তাঁদের কথায়, “আগে মেরামতের পরে অন্তত ছ’মাস রাস্তার অবস্থা ঠিক থাকত। কিন্তু এখন এক মাস যেতে না যেতেই ফের বেহাল অবস্থা রাস্তার।” যদিও ফের রাস্তা খারাপ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা বর্ষার জমা জলকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “জলের জন্যই রাস্তা খারাপ হয়েছে। জমা জলের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ি চলাচল করার ফলে রাস্তায় ফাটল তৈরি হয়েছে। তবে শীঘ্রই রাস্তা মেরামতি হবে।”
বছর দু’য়েক হল ই এম বাইপাসের যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। ওই ১২ কিমি রাস্তা পূর্ব যাদবপুর, কসবা, বেলেঘাটা ও তিলজলা ট্রাফিক গার্ডের অধীনে রয়েছে। ভাঙা রাস্তায় যানজট নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন লালবাজারের কর্তারাও। এক ট্রাফিককর্তা বলেন, “ই এম বাইপাসের মাঝে প্রায় ১৬ ফুট জায়গা দখল করে মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাতে দু’দিকের লেনের জায়গাই কমেছে। তার উপরে ভাঙচোরা থাকায় যানবাহনের গতি থমকে যাচ্ছে।”
যানজট এড়াতে কী ব্যবস্থা? লালবাজার সূত্রে খবর, অধিকাংশ সময়েই ম্যানুয়াল সিগন্যাল ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সকাল ও বিকেলে ম্যানুয়াল সিগন্যালে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় নেমে ট্রাফিক সার্জেন্টরা যানজট ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছেন। তা ছাড়া, মেট্রো-কর্তৃপক্ষ ও কেএমডি-এ অনুরোধ করে তাড়াতাড়ি রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.