যাদবপুরে সহ-উপাচার্যকে কেন দায়িত্ব নয়
খনই খোঁজা হচ্ছে না স্থায়ী উপাচার্য। আবার সহ-উপাচার্যকেও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে উচ্চশিক্ষা সংসদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তীর উপরেই ভরসা রাখছে রাজ্য।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সহ-উপাচার্য আছেন কলকাতা এবং যাদবপুরে। যাদবপুরে সাত বছর ধরে ওই দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবীণ অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তিনিই দায়িত্ব সামলান। তা হলে শৌভিক ভট্টাচার্যের ইস্তফার পরে অস্থায়ী ভাবে সহ-উপাচার্যকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হল না? শিক্ষক সংগঠন জুটার এক প্রবীণ সদস্য বলেন, “খেলার মাঠে অধিনায়ক না থাকলে নেতৃত্ব দেন সহ-অধিনায়ক। এ ক্ষেত্রেও সেটাই সঙ্গত হত। পরে দ্রুত সার্চ কমিটি গড়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যেত।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সদস্য, বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের কথায়, “এ নিয়ে আর কী বলব! সহ-উপাচার্যকেই তো দায়িত্ব দেওয়া যেত। স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব দূর না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উন্নয়ন সম্ভব নয়।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “সরকার চাইলে এই বিতর্ক এড়াতে পারত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগের আমলের রোগ এখনও রয়েছে। পদাধিকারীকে দলের পছন্দের লোক হতেই হবে!” আশিসবাবুর মতে, সহ-উপাচার্যকে অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব সামলাতে দিয়ে দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেই ভাল হত। একই মত প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও বলা ছিল, উপাচার্যের পদ আচমকা খালি হলে অস্থায়ী ভাবে সহ-উপাচার্যই দায়িত্ব সামলাবেন। নতুন সরকার এসে ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওই ধারায় পরিবর্তন ঘটিয়ে বলে, উপাচার্যের পদ খালি হলেই পরবর্তী স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। না হলে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করবেন আচার্য, অর্থাৎ রাজ্যপাল। শিক্ষামহলে অনেকের মতে, এই আলোচনার সূত্র ধরেই রাজনৈতিক পছন্দের অনুপ্রবেশ ঘটার আশঙ্কা বেড়েছে।
গত বছর এপ্রিলে অভিজিৎবাবু যখন অস্থায়ী উপাচার্য হন, তখন রাজ্যপালের বদলে তাঁকে সরাসরি নিয়োগ করেছিল সরকার। তাদের ব্যাখ্যা ছিল, উপাচার্য অবসর নিয়েছেন, কিন্তু পরবর্তী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য কমিটি তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫৫ ধারা অনুযায়ী উপাচার্যকে নিয়োগ করেছে রাজ্য। ওই ধারায় বলা রয়েছে, আইন মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর ক্ষেত্রে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তবে সেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অনেক বদল আনলেও বাম আমলের ওই ধারায় পরিবর্তন ঘটায়নি তৃণমূল সরকার।
মাস তিনেক যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব সামলেছিলেন অভিজিৎবাবু। তিনি থাকাকালীনই স্থায়ী উপাচার্য খুঁজতে সার্চ কমিটি হয়। তাতে ছিলেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন অধিকর্তা গোবর্ধন মেটা, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এম আনন্দকৃষ্ণন এবং পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী ছিলেন অভিজিৎবাবুও। রাজ্য সরকারও তাঁকেই চেয়েছিল বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। কিন্তু সার্চ কমিটির পছন্দের তালিকায় তাঁর নাম আসেনি। সেই অভিজিৎবাবুকে এখন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া উচিত হল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষানুরাগীরা। যে হেতু উপাচার্য পদে ইতিপূর্বে তাঁর নাম বিশেষজ্ঞদের পছন্দের তালিকায় স্থান পায়নি, তাই যাদবপুরে গিয়ে অভিজিৎবাবু শিক্ষক-ছাত্র-কর্মী মহলে যথেষ্ট সমীহ আদায় করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে।
শৌভিকবাবু যাদবপুরের স্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পরে অভিজিৎবাবুকে উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করে সরকার। শৌভিকবাবুর ইস্তফার পরে এখন ফের যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য পদে অভিজিৎবাবুর নামের যে প্রস্তাব রাজ্য সরকার দিয়েছে, রাজ্যপালও তাতে সায় দিয়েছেন। অনেকের মতে, প্রস্তাব অসঙ্গত মনে হলে রাজ্যপাল তাঁর অসম্মতি জানাতেই পারতেন। সার্চ কমিটির বিশেষজ্ঞেরা যে ব্যক্তিকে উপাচার্য পদের যোগ্য মনে করেননি, তাঁকেই আবার দায়িত্ব দিতে রাজ্যপাল রাজি হলেন কেন? অতীতে দেখা গিয়েছে, সার্চ কমিটি তাদের পছন্দের ক্রম অনুযায়ী উপাচার্য পদের জন্য তালিকা পাঠালেও রাজ্যপাল এক নম্বরে নাম থাকা ব্যক্তিকে নিয়োগ করেননি। যাদবপুরের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের বাধ্যবাধকতা কী ছিল, তা নিয়ে স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়েছে।
রাজ্য অবশ্য কোনও বিতর্কেই কান দিতে নারাজ। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার বলেন, “অভিজিৎবাবু সবে যোগ দিচ্ছেন, তাই এখনই সার্চ কমিটি গড়ার তাড়া নেই। ছ’মাসের মধ্যে গড়ে ফেলা হবে।” আর যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, “আমি সরকারি কর্মী। সরকার যেখানে, যখন, যে দায়িত্ব দেবে, তাই পালন করব। সরকার যখন মনে করবে সরিয়ে দেবে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতেই পছন্দ করি। আবেগকে গ্রাহ্য করি না।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.