|
|
|
|
পথের দুঃখ |
সারানো দূর অস্ত্, গর্তেও তাপ্পি পড়েনি সল্টলেকে |
কাজল গুপ্ত |
কাদাপাড়া-ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস মোড় থেকে গাড়ি চালিয়ে সল্টলেকে যাচ্ছিলেন তালতলার বাসিন্দা গৌতম ধর। তার কিছুক্ষণ আগেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে। জল জমে থাকায় সল্টলেকের প্রবেশপথের মুখে গর্ত ঠাহর করতে পারেননি তিনি। সেই গর্ত এড়াতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে গাড়িটি। বুলেভার্ডে ধাক্কা মেরে আহত হয়েছিলেন গৌতমবাবু। তাঁর অভিযোগ, “রাস্তা মেরামত তো দূর অস্ত্, বড় বড় গর্তগুলি পর্যন্ত বোজানো হয়নি। অথচ, প্রতিশ্রুতির শেষ নেই। এমনই খারাপ অবস্থা যে, রাস্তার ওই অংশে অবিলম্বে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”
শুধু একটি-দু’টি জায়গাই নয়, সল্টলেকের একাধিক এলাকায় রাস্তার এমনই বেহাল দশা। বাসিন্দাদের দাবি মেনে পুজোর আগেই রাস্তা মেরামতির কাজে হাত দিয়েছিল বিধাননগর পুরসভা। করুণাময়ী মোড়-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাস্তা জোরকদমে মেরামত করা হয়েছিল। কিছু কিছু অঞ্চলে আপৎকালীন ব্যবস্থায় গর্ত বোজানোও হয়েছিল। কিন্তু বাকি সব জায়গায় রাস্তার অবস্থা রয়ে গিয়েছে যে কে সে-ই। ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে অনিন্দিতা মোড়, এ-এল ব্লকের একাধিক রাস্তা, ১০ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে হোমিওপ্যাথি হাসপাতালের মোড় ইত্যাদি জায়গায় রাস্তার হাল এখন খুবই খারাপ। |
এফ ই ব্লকের কাছে। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার সমস্যা নতুন নয়। সমস্যা হল, রাস্তা মেরামতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনাই নেই প্রশাসনের। পুজোর সময়ে মানুষ ও গাড়ির চাপ সব চেয়ে বেশি থাকে। সে সময়েই বেহাল রাস্তার জেরে প্রবল দুর্ভোগে পড়েছিলেন বাসিন্দারা। পুজোর পরেও সেই দুর্ভোগ বহাল রয়েছে।
সর্বত্র রাস্তা মেরামত করা হল না কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, অস্থায়ী ভাবে তাপ্পি দিয়ে রাস্তা মেরামত করাতে চাইছেন না কাউন্সিলরেরা। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চাইছেন। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “পুজোর আগে জরুরি ভিত্তিতে প্রায় চল্লিশ শতাংশ জায়গায় কাজ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব ক’টি রাস্তা মেরামতের টেন্ডার করা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবং উন্নত মানের বিটুমিন না পেলে রাস্তা মেরামত করতে আমরা রাজি নই। কারণ, তাতে কোনও লাভই হচ্ছে না। তাই বর্ষা বিদায় নিলেই আমরা দ্রুত উন্নত মানের কাজ করব।”
রাস্তার হাল খারাপ সল্টলেকের শিল্পতালুক পাঁচ নম্বর সেক্টরেও। শিল্পতালুকের একাধিক জায়গায় পিচ উঠে গিয়ে রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় বিপজ্জনক গর্ত তৈরি হয়েছে। উপরন্তু গাড়ির চাপ বাড়ছে এলাকায়। অথচ মেরামত করা হচ্ছে না।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের কলেজ মোড়ের কাছেই একটি জায়গায় দেখা গেল রাস্তাটি আড়াআড়ি এমন ভাবে ভেঙে রয়েছে যে, একটু সতর্ক না হলেই বিপদ অনিবার্য। গাড়িচালকদের অভিযোগ, রাতে আলো-আঁধারিতে দূর থেকে গর্ত বুঝতে না পারায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। |
সেক্টর ৫। |
কেন পাঁচ নম্বর সেক্টরের রাস্তার এমন হাল? নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী আধিকারিক বদ্রীনারায়ণ কর বললেন, “তাপ্পি মারার কাজ তো চলছেই। কিন্তু দেখা গিয়েছে যে, তাতে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না। সে কারণেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে সব রাস্তাই ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় পনেরো কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারও করা হয়ে গিয়েছে। নভেম্বর মাস থেকেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। আশা করা যায়, কাজ শেষ হয়ে যাবে দু’-আড়াই মাসের মধ্যেই।”
শিল্পতালুকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, পরিকল্পনার কথাই বহু দিন থেকে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
|
ছবি: শৌভিক দে। |
|
|
|
|
|