|
|
|
|
বেড়াতে গিয়ে অব্যবস্থা, অভিযুক্ত ভ্রমণসংস্থা
শান্তনু ঘোষ |
এর্নাকুলাম স্টেশন ছেড়ে ধীর গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে একটি ট্রেন। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে তখন ট্রেন থামানোর জন্য চিৎকার করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এক বয়স্ক মহিলা। ট্রেন না থামায় তাঁর বয়স্ক পুরুষ সঙ্গীটি চলন্ত ট্রেনের পাশে ছুটতে শুরু করলেন। কিছুটা দৌড়নোর পরে লাফিয়ে ট্রেনে উঠে চেন টানতে থামল ট্রেন। এর পরে অবশ্য ওই বয়স্ক মহিলা ট্রেনে উঠতে পারলেন।
সিনেমার শ্যুটিং নয়! স্ট্র্যান্ড রোড এলাকার একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে কেরল বেড়াতে গিয়ে এমনই বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার অভিযোগ তুলেছেন কলকাতার বাসিন্দা ১৮ জন পর্যটক। অভব্য ব্যবহার, নিম্ন মানের খাবার দেওয়া, অব্যবস্থার হোটেলে রাখা, প্রতিশ্রুতি মতো না ঘোরানো-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁরা ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এবং পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই ভ্রমণ সংস্থার মালিক ও পর্যটকদের একসঙ্গে ডেকে সব শোনা হবে। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য দিকে বড়বাজার থানার পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের সঙ্গে যে সংস্থা এমন প্রতারণা করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই পর্যটকেরা আমাদের দফতরে অভিযোগ জানালে তদন্ত করে দেখা হবে।”
কলকাতা, হাওড়া, লিলুয়া, বরাহনগর এলাকার ১৮ জন পর্যটক গত ১০ই অক্টোবর স্ট্র্যান্ড রোডের ওই ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে কেরলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অভিযোগ, চেন্নাই পৌঁছনোর পরে তাঁদের একটি নিম্ন মানের হোটেলে রাখা হয়। যদিও বয়স্কদের মাথাপিছু ১৫ হাজার ও শিশুদের জন্য ১২ হাজার টাকা
দিয়ে ট্যুর বুকিং করার সময় তেমন কিছু জানানো হয়নি বলেই দাবি করেছেন পর্যটকেরা।
পর্যটকদের অভিযোগ, প্রথমে ১৪ দিন বলা হলেও চেন্নাই পৌঁছনোর পরে জানানো হয় ট্রেনের টিকিটের সমস্যার জন্য ১২ দিনেই চেন্নাই, কন্যাকুমারী, কেরল এই তিনটি জায়গা ঘোরানো হবে। সেই মতো যে সমস্ত জায়গায় দুই রাত্রি থাকার কথা ছিল, সেখানে কোনও মতে এক রাত রাখা হয়েছে, কিংবা এক দিনেই ঘুরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন, ১৪ তারিখ সকালে কন্যাকুমারীতে পৌঁছে দু’রাত থাকার কথা থাকলেও মাত্র দু’ঘণ্টায় ওই জায়গা ঘুরিয়ে দিয়েছেন বলেই অভিযোগ। আবার এক দিনেই কেরল ব্যাকওয়াটার ও রাত ৮টার সময়ে কোভালাম বিচ দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পর্যটকদের। এমনকী অনেক জায়গা পর্যটকদের নিজেদের খরচে ঘুরে দেখতে হয়েছে বলেও অভিযোগ।
স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে পুজোর ছুটিতে আন্দামান যাওয়ার জন্য ওই ভ্রমণ সংস্থায় বুকিং করেছিলেন সেচ দফতরের এক এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ দেব। তাঁর অভিযোগ, “শেষ মুহূর্তে ভ্রমণ সংস্থার ভুলেই আন্দামান যাওয়া হল না। কিন্তু বুকিংয়ের টাকা ফেরত না দেওয়ায় অগত্যা ওঁদের সঙ্গে কেরল গিয়েছিলাম।” তাঁর আরও অভিযোগ, প্রতিটি জায়গাই বুড়ি ছোঁয়ার মতো করে দেখিয়ে দায় সেরেছেন ওই ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার। খাবার, হোটেলের মানও ছিল খুব খারাপ। অন্য দিকে আর এক পর্যটক পুষ্প দত্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অধিকাংশ সময়েই নিরামিষ খেয়ে কাটাতে হয়েছে। চেঁচামেচি করার পরে মাছ দেওয়া হলেও তা মুখে দেওয়া যেত না। মাঝেমধ্যে মাংস দেওয়া হলেও তা-ও ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের। জলখাবারও ছিল না দেওয়ার মতো।”
পর্যটকদের অভিযোগ, ১৬ অক্টোবর কুমিলি নিয়ে যাওয়ার পরে পেরিয়ার জঙ্গলও দেখাতে চাইছিলেন না ভ্রমণ সংস্থার কর্মীরা। প্রবল প্রতিবাদ করায় শেষ পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে তা দেখানো হয়েছে। আর এক পর্যটক বি অর্নবের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। দুই বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধ গিয়েছিলেন কেরল ঘুরতে। তাঁর অভিযোগ, কোচি থেকে ফেরার সময়ে তাঁকে ও তাঁর দুই সঙ্গিনীকে তিনটি বড় ব্যাগ নিয়ে এর্নাকুলাম স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ভ্রমণ সংস্থার কর্মীরা নিজেরা ট্রেনে উঠে পড়েন। ওই বৃদ্ধ বলেন, “আমি ছুটে ট্রেনে উঠে চেন না টানলে বিপদ হয়ে যেত। স্টেশনে যে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, সে ব্যাপারে ম্যানেজারের হুঁশই ছিল না।”
আবার ২১ অক্টোবর চেন্নাই থেকে ট্রেনে তুলে দিয়ে ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার আশিস বিশ্বাস পালিয়ে যান বলেও অভিযোগ পর্যটকদের। ফলে ট্রেনে নিজেদেরই খাবার কিনে খেতে হয়েছে তাঁদের। আশিসবাবুর দাবি, “খাবার কিনতে গিয়ে ট্রেন বেরিয়ে যায়। আমাদেরও প্ল্যানিংয়ে কিছু ভুল হয়েছিল। তাই সমস্যা হয়েছে। তবে ওই পর্যটকেরা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।”
অভিযুক্ত ভ্রমণ সংস্থার মালিক মানিক ঘোষ বলেন, “দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে দলটিকে পাঠিয়েছিলাম। সব না হলেও কিছু সমস্যা হয়েছে। ম্যানেজার যে এমন ডুবিয়ে দেবে, তা কী করে বুঝব! ম্যানেজার দক্ষিণ ভারতে। তিনি ফিরলে ওই পর্যটকদের সবাইকে নিয়ে বসে কথা বলব।”
|
|
|
|
|
|