|
|
|
|
বিপর্যয় চলছেই, ফুকুশিমা দাইচি ঘিরে বাড়ছে আতঙ্ক |
সংবাদ সংস্থা • টোকিও |
ভূকম্প আর সুনামির আতঙ্ক ধীরে ধীরে অনেকটাই কাটিয়ে উঠছেন জাপানের বাসিন্দারা। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি হয়ে গেল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ফুকুশিমা দাইচি এখন একটা আতঙ্কের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাপানের মানুষের কাছে।
গত এক মাসে ফুকুশিমা দাইচি থেকে তেজস্ক্রিয় বস্তু সমেত জল লিক করার পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে ফুকুশিমার কাছাকাছি এলাকার বাস্তুতন্ত্র ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
তবে ফুকুশিমার দায়িত্বে থাকা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন (টেপকো) কর্তৃপক্ষ পরিবেশবিদদের দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ফুকুশিমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। যদিও টেপকোর এই দাবি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
শুধু অক্টোবর মাসেই বেশ কয়েক গ্যালন জল ফুকুশিমা দাইচির জলাধার থেকে জল লিক করে প্রশান্ত মহাসাগরে মিশেছে। এই জলে অনেক বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিশে রয়েছে বলে খবর। এই ঘটনার জন্য টেপকো কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রচণ্ড বৃষ্টির জেরে ফুকুশিমার জলাধারগুলো উপচে গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, অতিরিক্ত জল পাম্প করে কতগুলো খালি পাত্রে রাখা হবে। কিন্তু অনুমানের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় অতিরিক্ত জল উপচে গিয়ে মেশে সমুদ্রে। অক্টোবরেই টেপকোর কর্মচারীদের গাফিলতিতে ফুকুশিমার একটি পাম্প খুলে জল গিয়ে মেশে সমুদ্রে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ মেশানো প্রায় ৭ টনের জল পাম্প খুলে ৬ কর্মচারীর উপর এসে পড়ে। ওই কর্মচারীরা তখন প্রয়োজনীয় নিরাপদ পোশাক পরে ছিল না বলে অভিযোগ।
২০১১ সালের মার্চ মাসে সুনামির পরে ফুকুশিমায় পুনর্নিমাণের কাজ পেয়েছিলেন হায়াসি। তাঁর অভিযোগ, কর্মচারীদের ওখানে কাজ করার মতো প্রয়োজনীয় জামাকাপড় দেওয়া হয় না। শুধু তা-ই নয়, কেউ বিকিরণের কবলে পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া তো দূর, ওই কর্মচারীদের কয়েক দিন অপেক্ষা করতে বলা হয়। হায়াসির অভিযোগ, তাঁর বস তাঁকে বলেছিলেন, এক সপ্তাহ অপেক্ষা করলেই শরীরে বিকিরণের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। হায়াসি সেই ঘটনা ভিডিও করে রেখেছিলেন। পরে স্থানীয় একটি চ্যানেলে সেই খবর প্রকাশ পেতে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। টেপকোর এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষুব্ধ জাপানের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী মোতেগি তো প্রকাশ্যে বলেই ফেলেছেন, “কর্মচারীদের নিরাপত্তার দিকটা টেপকোর আরও দায়িত্ব আর যত্ন নিয়ে দেখা উচিত।” দেশের পরমাণু শক্তি সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর শিনচি নাকাইয়ামা বললেন, “অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। এ বার টেপকো পরিষ্কার করে বলুক তারা কর্মচারীদের আদৌ সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত কি না।”
সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার পাশাপাশি কর্মচারীদের ঠকানোর অভিযোগও উঠছে টেপকোর বিরুদ্ধে। মোটা বেতনের টোপ দেখিয়ে কাজ শেষে কর্মচারীদের অনেক কম অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে ভবিষ্যতে যদি আর কাজ না পাওয়া যায় তাই বেশির ভাগই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। এক দিকে একের পর এক অব্যবস্থা আর গাফিলতির অভিযোগ, অন্য দিকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বন্ধ করতে না পারা উভয় সঙ্কটে জেরবার টেপকোর চিন্তা বাড়িয়েছে কর্মচারী সঙ্কটও। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ফুকুশিমা ছেড়ে পালাচ্ছেন। যেখানে প্রায় ১২ হাজার কর্মচারীর কাজ করার কথা, সেখানে মাত্র ৬ হাজার কর্মচারী কাজ করছেন। ২০১৫ সালের মধ্যে ফুকুশিমার চুল্লি ঘিরে বরফের প্রাচীর তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে জাপান। তার আগে দুর্যোগ কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। |
পুরনো খবর: শেষ পরমাণু চুল্লি বন্ধ হল জাপানে |
|
|
|
|
|