|
|
|
|
উদ্ধার প্রাচীন মিশরের জাদু-পুরোহিতের স্মৃতিসৌধ |
সংবাদ সংস্থা • কায়রো |
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। তা-ও প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে। রাষ্ট্রবিপ্লব, গৃহযুদ্ধ, কিছুই ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি সেই ঘুমে। সম্প্রতি তাতেই বাদ সাধলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। মিশরের গিজার কাছে আবুসির প্রত্নতাত্ত্বিক গোরস্থান থেকে তাঁরা হদিস পেয়েছেন এক সৌধের। এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ্দের ধারণা, সৌধটি মিশরের ‘পঞ্চম রাজবংশ’ বা ‘ফিফথ ডাইন্যাস্টি’র সময়কার প্রধান চিকিৎসকের। তথ্য বলছে, সৌধটি প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পুরনো।
৬৯ ফুট লম্বা, ৪৫ ফুট চওড়া এবং ১৩ ফুট উচ্চতার সৌধটি প্রথম বার দেখেই প্রত্নতত্ত্ববিদেরা আন্দাজ করেছিলেন, প্রাচীন মিশরের কোনও সাধারণ বাসিন্দার ‘জীবনাতীত’ বাসস্থান নয় ওটি। হাইরোগ্লিফে লেখা সৌধের মালিকের বর্ণনা বিশেষজ্ঞদের সেই ধারণাতেই সিলমোহর দিয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, প্রাচীন মিশরের ‘পঞ্চম রাজবংশ’-এর আমলে প্রধান রাজ-চিকিৎসক ছিলেন শেপসেসকাফ’ অনখ। জীবদ্দশাতেই তাঁকে ‘প্রিস্ট অফ খাম’ বা জাদু-পুরোহিত তকমা দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই প্রধান চিকিৎসকের ঠিকানা ওই সৌধ। এত দিন অবশ্য কোনও পিরামিডের ভিতরে নয়, একটি চ্যাপেলের ভিতর ছিল সৌধটি। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, চ্যাপেলের ভিতরে একটি নকল দরজার ওপারে বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল সেটি। তাকে ঘিরে রয়েছে উঁচু দেওয়ালও। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, এলাকাটিতে কোনও পরিবারের বসবাস ছিল। তার পরে সেই জমিতে প্রধান চিকিৎসককে সমাহিত করা হয়।
তথ্য বলছে, এই নিয়ে তৃতীয় বার আবুসির গোরস্থান থেকে কোনও চিকিৎসকের সৌধ উদ্ধার হল। কায়রোর অদূরে নীল নদের ওপারে এই গোরস্থান থেকে আগেও বহু বার সৌধ উদ্ধার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রাচীন মিশরের রাজধানী মেমফিসের বাসিন্দাদের জন্য অভিজাত সমাধিস্থল ছিল ওই এলাকা। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এলাকাটিকে ‘নেক্রোপলিস’ বা ‘মৃতের শহর’ আখ্যা দিয়েছিলেন আগেই। তাঁদের ধারণা, পঞ্চম রাজবংশের ফারাওদের সৌধে গিজা উপচে পড়ায় নতুন এলাকায় সৌধ বানাতে শুরু করেন প্রাচীন মিশরের বাসিন্দারা। গিজার উত্তর থেকে সাক্কারা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছিল সেই নতুন সমাধিস্থল। সম্প্রতি যে আবুসির গোরস্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রধান চিকিৎসকের দেহ, সেটি প্রাচীন মিশরের ওই নয়া সমাধিক্ষেত্রের চৌহদ্দির মধ্যেই পড়ে বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ হলেও সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় শেপসেসকাফ’ অনখ-এর এই সৌধের সন্ধান মেলার তাৎপর্য বিশেষজ্ঞদের কাছে আলাদা। কারণ, তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, ২০১১য় মিশরে বিক্ষোভ চলাকালীন সাক্কারা-দহশুরে সৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বীভৎস ভাবে।
কিন্তু সেই গৃহযুদ্ধের আঘাতও ক্ষত তৈরি করতে পারেনি শেপসেসকাফ’ অনখ-র সৌধে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর কেটেছিল নিশ্চিন্তে। কিন্তু এ বার চলবে কাটাছেঁড়া। গবেষণার বিষয়বস্তু হবেন প্রাচীন মিশরের জাদু-পুরোহিত। |
|
|
|
|
|