|
|
|
|
স্টিয়ারিং-বিপ্লব থেকে পিছোলেন সৌদি মেয়েরা |
সংবাদ সংস্থা • রিয়াধ |
প্রস্তুতি ছিল পুরোদমে। স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে আগামিকাল পথে নামতে চলেছিলেন সৌদি মহিলারা। তবে সরকারি ফতোয়ার মুখে পিছিয়ে গেলেন তাঁরা।
যদিও মেয়েদের বক্তব্য, তাঁরা কালকের কর্মসূচিটুকুই পিছিয়েছেন। আন্দোলন চলবে।
বুধবার সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক ঘোষণা করে “নিয়ম ভাঙলেই কড়া শাস্তি। সে বিক্ষোভে যোগ দেওয়াই হোক বা মেয়েদের গাড়ি চালানো।” সেই হুমকির মুখেই এ দিন পিছিয়ে গেলেন মেয়েরা। ২৬ অক্টোবরকে প্রতীকী করার তোলার ইচ্ছে ছিল তাঁদের। তবে পিছিয়ে এসেও আরও কয়েক পা এগিয়ে যাওয়ার ডাক দিলেন। আন্দোলনকারী নাজলা আল-হারিরি বললেন, “অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের সতর্কবার্তাকে সম্মান জানিয়ে মেয়েদের কাল স্টিয়ারিং ধরতে বারণ করছি। বরং ‘অক্টোবর-২৬’ আন্দোলনকে লাগাতার আন্দোলনের চেহারা দেওয়া হোক।”
সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা-শাস্তি-বিক্ষোভ, নতুন কিছু নয়। প্রতিবাদ স্বরূপ ২০১১ সালে গাড়ি চালিয়ে ইন্টারনেটে ছবি পোস্ট করেছিলেন মানবাধিকার কর্মী মানাল আল-শরিফ। পরিণামে সপ্তাহ খানেক জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। মানালের মতো মেয়ের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে আরবে। সেপ্টেম্বরেও এক বার অনলাইন আন্দোলন শুরু হয়। উদ্দেশ্য, স্টিয়ারিংয়ের সামনে আনতে হবে মেয়েদের। সমর্থনে ১৬ হাজার স্বাক্ষর জমা পড়ে অনলাইনেই। তাতেই গতি পায় ২৬ অক্টোবরের আন্দোলন।
মেয়েদের এই বেপরোয়া আচরণে মাথায় হাত পড়েছিল প্রশাসনের। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে নোটিস জারি করা হয়, “মেয়েরা গাড়ি চালালেই কঠিন শাস্তি। সে ২৬ তারিখ হোক, কী তার পর।” আন্দোলনে যুক্ত কয়েক জন মহিলার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকে হুমকি-ফোন আসতে শুরু করেছে তাঁদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলারা জানিয়েছেন, ফোনের ও পারে যারা ছিল, তারা মন্ত্রীর লোক। নাম ভাঁড়িয়ে ভয় দেখাচ্ছে তারা। মন্ত্রকের মুখপাত্র মানসুর আল-তুর্কি প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। পরে তিনি জানান, বুধবার সরকারি ভাবে নোটিস দেওয়া হয়েছিল, ২৬ তারিখ পথে নেমে সমাজের শান্তি-ভঙ্গ করলেই শাস্তি। সেটাই শুধু ফোন করে বোঝানো হয়েছিল ওই মহিলাদের।
আল-তুর্কি বলেন, “মন্ত্রকের তরফ থেকে ফোন করে কয়েক জন মহিলাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, গাড়ি চালাবেন না। এর মধ্যে কোনও হুমকি ছিল না। সরকারি নোটিস সম্পর্কে ওঁরা যাতে অবগত হন, সেটাই শুধু নিশ্চিত করা হয়েছে।” তুর্কি পরে এ-ও জানান, কেউ যদি অনলাইন প্রচারেও যোগ দেয়, সাইবার-অপরাধে তার পাঁচ বছর জেল হবে।
আল-তুর্কির ‘হুমকি’কে অবশ্য শাপে বর ভাবছেন মানাল আল-শরিফ। তাঁর কথায়, “এত দিন ওরা গোটা দুনিয়াকে বলে বেড়াত, মেয়েদের গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে কি না, সেটা সৌদি সমাজের সিদ্ধান্ত। কিন্তু সরকারি প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।” মানালের মতে, “দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিলাম। এখন আমরা জানি, কোন পরিস্থিতিতে বাস করছি।” তাঁদের বক্তব্য, সৌদি আরবে কিন্তু এমন কোনও আইন নেই, যাতে মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। ধর্মীয় সংগঠনগুলোই ফতোয়া জারি করে রেখেছে।
সম্প্রতি গাড়ি চালিয়ে জেড্ডা যাওয়ার ভিডিও ইন্টারনেটে পোস্ট করেছিলেন তামাদোর আলইয়ামি। আহ্বান জানিয়েছিলেন এই দিনের সুযোগটা নিতেই হবে। সমাজের কিছু লোক যে মেয়েদের পাশে, সে কথা তুলে বলেছিলেন, “এক দিন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় এক পুলিশ অফিসার আমায় দেখতে পান। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, উনি আমার পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন। খুব আনন্দ হয়েছিল। সে দিনই ঠিক করেছিলাম, ২৬ তারিখ বেরোবই বেরোব।” আলইয়ামির ইচ্ছে পূরণ হল না। তবে আরও দীর্ঘায়িত হল। |
|
|
|
|
|