প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রার চড়া বাজনা ডিজে সাউন্ডবক্সের শব্দের জন্যই ট্রেনের হুইসল শুনতে না পাওয়ায় এক দম্পতি-সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার রাতে কোচবিহার শহরের রেলগুমটি এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দিনহাটা-মালদহ ডিএমইউ ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সুনীল মোহন্ত, গীতা মোহন্ত নামের এক দম্পতি এবং তাঁদের প্রতিবেশী শম্ভু সিংহ ও তার মা রেজিয়া সিংহ। রেল লাইনের ধারের বস্তির অনেক বাসিন্দাই রাত দশটা নাগাদ লাইনে দাঁড়িয়ে লাগোয়া রাস্তায় দুর্গাপুজোর প্রতিমা বিসর্জনের শোভা যাত্রা দেখছিলেন। মৃতের পরিবারের লোকদের পাশাপাশি বাসিন্দাদের অভিযোগ, শোভাযাত্রায় প্রচণ্ড শব্দে ডিজে বাজানো হচ্ছিল। ফলে অনেকেই ট্রেনের হর্ন শুনতে পাননি। ঘটনাস্থলেই ওই চার জন কাটা পড়ে মারা যান। জখম হন মৃত দম্পতির ছেলে সহ আরও দুই জন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে অবশ্য অভিযোগ জমা পড়েনি। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগ পেলে কী ধরণের বাজনা ওই শোভাযাত্রায় বাজানো হচ্ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী রাতেই ঘটনাস্থলে যান। জেলাশাসকের কাছে মৌখিকভাবে ওই বাজনার চড়া শব্দ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন বাসিন্দারা। জেলাশাসক বলেন, “জখমদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি বিশদে খতিয়ে দেখতে পুলিশকে বলা হয়েছে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়া দশমীতে নব্বই শতাংশের বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয়। বাকি পুজো কমিটিগুলি অনুমতি নিয়েই বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জন দেয়। রাতে একটি পুজো কমিটির বিসর্জনের শোভাযাত্রার শব্দ শুনে লাইন লাগোয়া বস্তির বাসিন্দারা বাড়ির বাইরে এসে লাইনে উঠতেই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত সুনীল মোহন্তর মেয়ে রীতা মোহন্ত বলেন, “ডিজের শব্দের আওয়াজ এতটাই চড়া ছিল যে কেউ ট্রেনের হর্ণের শব্দ শুনতে পাননি।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ বর্মন, সুমিতা রায়দের কথায়, “ডিজের আওয়াজের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দরমা টিনের ঘর কাঁপছিল। দাহপর্ব মিটলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোব কথা ভাবা হচ্ছে।”
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডু অবশ্য বলেন, “শুধু শোভাযাত্রার বাজনার শব্দ নয়। ট্রেনের গতিবেগ প্রচণ্ড বেশি ছিল। তার ওপর পর্যাপ্ত আলো ছিল না। সব মিলিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে।” রেলের তরফে আলিপুর দুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “ট্রেনের লাইট হর্ণ সব ঠিক ছিল। দুর্ঘটনার পর তা খতিয়ে দেখা হয়। প্রাথমিকভাবে শোভাযাত্রার ডিজের শব্দের জেরেই ওই ঘটনা হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।” |