পুলিশ ও আবগারি দফতরের নিষ্ক্রিয়তায় রায়গঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেলবস্তি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে চোলাই মদের কারবার চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই বস্তিরই বাসিন্দা নেশাগ্রস্ত এক যুবকের হাতে তারই বাবা খুন হন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় চোলাই মদের কারবারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। শুক্রবার দুপুরে বাসিন্দারা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অবিলম্বে এলাকার সমস্ত চোলাই মদের কারবার বন্ধের দাবি জানান।
বরুণবাবু বলেন, “গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পুলিশ ও আবগারি দফতরের নজরদারির অভাবে রেলবস্তি এলাকায় বেআইনিভাবে চোলাই মদের কারবার চলছে। চোলাই খেয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ছাত্র ও যুবরা বিপথে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই পারিবারিক ও সামাজিক গোলমাল বাড়ছে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রায়গঞ্জ থানায় চোলাই মদের কারবার বন্ধ করতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।”
রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক রেলবস্তি এলাকায় চোলাইয়ের কারবারের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “রেলবস্তি এলাকায় পুলিশ ও আবগারি দফতরের নজরদারি চালানো হয়। তবে নিয়মিত নজরদারি না হওয়ার সুযোগে রাতের অন্ধকারে বাসিন্দাদের একাংশ চোলাই মদের কারবার করছেন। আমরা বিষয়টি দেখছি।” জেলা আবদারি দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত এলাকায় অভিযান চালানো হবে। পুলিশ ও আবগারি দফতরে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান জেলাশাসক পাশাং নরবু ভুটিয়া।
রেলবস্তি এলাকায় ২৫ টি ঝুপড়ি রয়েছে। বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিনমজুরি, পরিচারিকা, ফেরিওয়ালা, ভ্যান রিকশা ও গাড়ি চালানোর কাজ করেন। কাউন্সিলর বরুণবাবুর অভিযোগ, “বাসিন্দাদের একাংশ সন্ধ্যার পর তিনটি এলাকায় চোলাই মদ বিক্রি করেন। প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর যত্রতত্র মদের আসর বসতে দেখা যায়। এছাড়াও কাশির সিরাপ, ট্যাবলেট-সহ নানা ওষুধের নেশা করতে অনেককে দেখা যায়। বাসিন্দাদের সতর্ক করেও কোনও কাজ হয়নি। পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পুলিশের কাছে ওই বস্তি এলাকায় এর আগে কোনও খুন, মারপিট বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ অবশ্য নেই। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বস্তির বাসিন্দা পেশায় ফেরিওয়ালা রাম পাশোয়ান (৬২) নামে এক বৃদ্ধের বাড়িতেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। ঘটনার পর মৃতের বড় ছেলে প্রতীক পাশোয়ানের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতের ছোট ছেলে রাজেন পাশোয়ানকে গ্রেফতার করেছে। তিনি পেশায় রিকশা চালক।
গাড়ি চালক প্রতীকবাবুর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ভাই রাজেন নেশার জন্য টাকা চেয়ে বাবাকে মারধর করত। রাতে নেশাক্ত অবস্থায় ভাই বাবাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। সেই সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। আমরাও চাই এলাকায় চোলাই মদের কারবার বন্ধ হোক। নইলে এমন ঘটনা ঘটবে।” আইসি দীনেশবাবু বলেন, “ধৃত যুবক বাবাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।” |