|
|
|
|
ডায়েরিয়ার পর এ বার জ্বরের প্রকোপ, এলাকায় স্বাস্থ্যকর্তা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে জলমগ্ন এলাকায় অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ইতিমধ্যে দাঁতন- ১, কেশিয়াড়ির মতো এলাকায় বেশ কয়েকজন অজানা জ্বরে ভুগছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার জেলায় আসেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শথপতি। বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল ক্যাম্প ঘুরে দেখেন তিনি। দেখা করে ত্রাণ শিবিরে থাকা মানুষদের সঙ্গে। প্রতিটি ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র মজুত রাখার নির্দেশ দেন। সঙ্গে ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা সহ অনান্য আধিকারিকেরা। ব্লক পরিদর্শন শেষে মেদিনীপুরে এসে দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে মেদিনীপুরে এক বৈঠকও করেন তিনি।
ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবারই পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’জনের মৃত্যু হয়। বেলপাহাড়ির ভেলাইডিহা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুর খবরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে শোরগোল পড়ে। ওই এলাকায় পুকুরের জলই পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করেন গ্রামবাসীরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, দূষিত জল থেকে রোগ ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওই এলাকার জলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বৃহস্পতিবারই বেলপাহাড়ির ওই এলাকায় ৮ হাজার জলের পাউচ পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার আরও ৫০ হাজার জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তাই নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। এলাকায় মেডিক্যাল টিম রয়েছে। প্রয়োজনে জেলা থেকেও মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে জল নামছে। জ্বর ছড়াতে পারে। আমরা সতর্ক আছি। গ্রামবাসীদেরও সতর্ক করা হচ্ছে।” জেলার কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, “ ভেলাইডিহা গ্রামে পানীয় জলের কোনও নলকূপ নেই। বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীরা পচা জল পান করছেন এবং অসুস্থ হচ্ছেন।” পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তৎপর হতে অনুরোধ করেছেন মানসবাবু। |
|
জমা জলেই মাছের খোঁজে। কেশপুরের ঝলকাতে শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন সকালে জেলায় এসে শুরুতে দাঁতন- ১ ব্লকে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা। সেখান থেকে কেশিয়াড়িতে আসেন। এই দুই ব্লকের বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল ক্যাম্প ঘুরে দেখেন তিনি। দুপুরে মেদিনীপুরে এসে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে এক বৈঠক করেন। শুধু বেলপাহাড়ির ভেলাইডিহাই নয়, চন্দ্রকোনাতেও ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত, জলমগ্ন এলাকাতেই এই রোগ ছড়ায়। মাস খানেক আগে জেলার একের পর এক এলাকায় অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। বেশ কয়েকজন ডেঙ্গি, ডায়েরিয়া, টাইফয়েড, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। সেই সময় অতিবৃষ্টির পরপরই বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়েরিয়া, অজানা জ্বরের প্রকোপ ছড়ানোর খবর আসতে শুরু করে। সম্প্রতিও জেলায় অতিবৃষ্টি হয়েছে। জলাধারের ছাড়া জলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ফলে, জল নামতে শুরু করলে এ বারও এই সব এলাকায় অজানা জ্বরের প্রকোপ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। পরিস্থিতি দেখে জেলা স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য ইতিমধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারও শুরু করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানাচ্ছেন, জ্বরের ক্ষেত্রে কী কী উপর্সগ দেখা দিতে পারে। কী ভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সাবধানতার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “কয়েকটি এলাকায় জ্বর ছড়াচ্ছে। আক্রান্তরা চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। যে সব এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল, সেই সব এলাকার দিকে বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। এলাকায় মেডিক্যাল টিম রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।” |
|
|
|
|
|