কন্যাশ্রী, যুবশ্রী-র পরে এ বার বৃদ্ধশ্রী।
সরকারি হাসপাতালে রাজ্যের ১৭ লক্ষ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে নিখরচায় চিকিত্সা দেওয়ার জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য দফতর। আপাতত ঠিক হয়েছে, যে সমস্ত বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধা সরকারের কাছ থেকে বার্ধক্য ভাতা পান, তাদেরই প্রথম পর্যায়ে ‘বৃদ্ধশ্রী’ প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করা হবে। পরের ধাপে রাজ্যের যে কোনও বয়স্ক ব্যক্তিই সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিত্সার সুযোগ পাবেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রথম এই প্রকল্প চালু হচ্ছে। তার পরে অন্য জেলাগুলিতে। বৃদ্ধশ্রী প্রকল্পে পঞ্চায়েতগুলিকেও যুক্ত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বার্ধক্য ভাতা-প্রাপ্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাছাই করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করবে পঞ্চায়েতগুলি। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, এ রাজ্যে বয়স্কদের রোগব্যাধির ঠিকমতো চিকিত্সা হয় না। অনেক সময় আর্থিক কারণ দেখিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের দেখভাল করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখায় সন্তানেরা। এই সব কারণেই সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিত্সার প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই কর্তার কথায়, “স্বাস্থ্যের সব রকম পরীক্ষা তো বটেই, অস্ত্রোপচারও আসবে এই প্রকল্পের মধ্যে।”
স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বৃদ্ধশ্রী প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খুবই উত্সাহী। আমরা জেলায় জেলায় শিবির করে বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের চিহ্নিতকরণের কাজ করব।”
‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে ১৮ বছর পর্যন্ত ছাত্রীদের বছরে ৫০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ১৮ বছরের পরে অবিবাহিত পড়ুয়াদের এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। এই প্রকল্পে প্রতি বছর রাজ্যের কয়েক লক্ষ ছাত্রী সরকারি সাহায্য পাবে বলে জানিয়েছে রাজ্য। মূলত, পড়াশুনায় উত্সাহ দেওয়া এবং বাল্যবিবাহ আটকাতেই এই প্রকল্প চালু করেছে সরকার। একই ভাবে, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম লেখানো বেকারদের মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ‘যুবশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে সরকার। এই প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ১ লক্ষ বেকারকে ওই ভাতা দেওয়া হবে। এর পরের ধাপেই আসছে ‘বৃদ্ধশ্রী’ প্রকল্প।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্প নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পঞ্চায়েত দফতর ১৫ লক্ষ, সমাজ কল্যাণ দফতর ১.৫ লক্ষ এবং অনগ্রসর উন্নয়ন, হস্তশিল্প, কৃষি, মত্স্য এবং ক্ষুদ্র শিল্প দফতর মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বার্ধক্য ভাতা পান। এই ১৭ লক্ষ ভাতা-প্রাপককে নিয়েই প্রকল্প শুরু হবে। এই কাজের জন্য রাজ্যে ৫২০০টি স্বাস্থ্য-শিবির হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেই শিবির হবে। শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা বা মহকুমা স্তর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক পাঠানো হবে। সেখানে বয়স্কদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে যদি চিকিত্সকদের মনে হয় রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিত্সা করা প্রয়োজন বা অস্ত্রোপচার করতে হবে তা হলে তাঁদের শিবির থেকেই জেলা বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
প্রকল্প রূপায়ণের ভারপ্রাপ্ত এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “স্বাস্থ্য শিবিরগুলির আসল উদ্দেশ্য বয়স্কদের রোগ চিহ্নিত করা। এর পরে প্রয়োজন মতো সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বাত, পেটের রোগ, দাঁত, চোখ, কানের সমস্যার ধারাবাহিক চিকিত্সা শুরু হবে। এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত রোগ তো আছেই।” তিনি বলেন, “সরকারি ভাবে রাজ্যে এখন ১৭ লক্ষ বয়স্ক মানুষ বার্ধক্য ভাতা পান। কিন্তু ভাতা প্রাপকদের সকলেই জীবিত কি না, তা-ও এই শিবিরের মাধ্যমেই জানা যাবে। ভুয়ো প্রাপকদেরও চিহ্নিত করা যাবে।”
সরকারি কর্তারা জানান, পুজো শেষ হয়েছে। এ বার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জন্য দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে এক হাজার স্বাস্থ্য শিবির করা হবে। খরচ ধরা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। পরের ধাপ মিলিয়ে রাজ্যে মোট ৫২০০ শিবিরের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। প্রতিটি শিবির করতে গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তবে ধারাবাহিক চিকিত্সা ও অস্ত্রোপচারের জন্য যা খরচ হবে, তার পুরোটাই করা হবে রাজ্যের নিজস্ব বাজেট থেকে। |