বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ধূপগুড়ি |
সবুজ খেকো ভাইরাস সংক্রমণে হলদে হচ্ছে কয়েকশো বিঘে খেতের সিম মাচা। ঝরে পড়ছে ফুল ও ফল। রকমারি ওষুধ ছড়িয়ে রোগ ঠেকাতে না -পেরে দিশেহারা দশা হয়েছে ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি ব্লকের কয়েক হাজার চাষির। কৃষি দফতরের কর্তারা কয়েক দফায় এলাকা ঘুরে দেখার পরেও দ্রুত রোগ প্রতিরোধের নিদান দিতে পারেননি। বিপর্যয় ঠেকাতে আনা হয়েছে কৃষি বিশেষজ্ঞদেরও। এ দিকে উত্তরবঙ্গের প্রসিদ্ধ সিম উপাদন এলাকা মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এবার বাজারে সিমের যোগান কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্তাদের একাংশ। জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি আধিকারিক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি নিজে এলাকা ঘুরে দেখেছি। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এটা পতঙ্গবাহী রোগ এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবুও কিছুটা ফলন রক্ষার জন্য চাষিদের কিছু নিয়মিত ওষুধ এবং অণুখাদ্য দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। |
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের বেতগাড়া, ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়াকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুর্শামারি, বগরিবাড়ি, ভাণ্ডানি, গাদং -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কারজিপাড়া, ডাঙাপাড়া, মাগুরমারি -১, ঝাড়আলতা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সিম খেতে ওই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় দুশো হেক্টর জমির খেতের ফসল টকটকে হলদে হয়েছে।
কুর্শামারি এলাকার চাষি ধনঞ্জয় রায়, বাদল সরকার, দিলীপ সরকার জানান, শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, তাঁদের এলাকা থেকে বিহার, অসম, নেপাল ও শিলিগুড়িতে ট্রাক বোঝাই করে সিম যায় রোগের কারণে এ বার এখনও বাজারে তেমন ভাবে সিম পাঠানো সম্ভব হয়নি। বেতগাড়ার চাষি বিমল সরকার বলেন, “গত দু’সপ্তাহ থেকে রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ওষুধ দিয়ে কোন লাভ হচ্ছে না। পুরো সিম মাচা হলদে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছর থেকে সিম চাষ করছি। প্রথম এমন রোগ দেখছি।”
কেন ওই রোগ? জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় জানান, যে ভাইরাস ওই মারণ রোগের কারণ সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ভাইরাসের নাম ‘ইয়েলো ভেন মোজাইক’ এক ধরণের সাদা মাছি ভাইরাসের বাহক গাছে। বাহক মাছি বসার পড়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। ভাইরাসটি সিম পাতার ছড়িয়ে ক্লোরোফিল নষ্ট করে দেয়। ফলে খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়ে গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়।
কিন্তু রোগের কারণ জানার পরে প্রতিরোধ অভিযানে নেমে কৃষি কর্তাদের মাথায় হাত পড়ে। তাঁরা দেখেন, বাহক মাছি মারার জন্য যে সমস্ত ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ চাষিদের দেওয়া হয়েছে, সেটাতে কাজ হচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিশেষজ্ঞ এলাকা ঘুরে একই ঘটনা লক্ষ্য করেন। পাশাপাশি, কৃষি কর্তারা কারণ অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন, একই বীজ বারবার ব্যবহারের ফলে রোগের প্রকোপ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাহক মাছির প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি বিপদ দেখা দিয়েছে। ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সরকার বলেন, “সাদা মাছির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। যে সমস্ত গাছ পুরোপুরি হলদে হয়েছে। সেখানে কিছু করার নেই। এটা অনেকটা ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ের মতো।” |