|
|
|
|
জলপথ সমবায়ের বোর্ড ছেড়ে জট পাকাল সিপিএম
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
বছরখানেক আগে ‘আমরা-ওরা’র বেড়া ভেঙে দিয়েছিল তৃণমূল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই বেড়া ফের গড়ে তুলল সিপিএম।
হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির অচলাবস্থা কাটাতে গত ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর ৯ সদস্যের একটি মনোনীত পরিচালন বোর্ড গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। তখন মনোনীত বোর্ড গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ। আমরা-ওরার বেড়া ভেঙে ওই বোর্ডে তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএমকেও জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নির্বাচিত বোর্ড গঠনের দাবি তুলে এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বোর্ডের সম্পাদক, সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নেতা তারকেশ্বর ওঝার নেতৃত্বে পাঁচ জন সদস্য রাজ্য সরকারের মনোনীত বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ দিকে, মনোনীত বোর্ডের সময়সীমা গত ১৫ তারিখ শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে পরিচালন বোর্ডের পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করায় নতুন করে বোর্ডের সময়সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছে রাজ্য। ফলে হুগলি নদী জলপথ সমবায়ে ফের অচলাবস্থা হয়েছে।
যদিও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র শুক্রবার বলেন, “হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে। পুজোর ছুটির পরেই সংস্থার চেয়ারম্যান-সহ অন্যদের ডেকে পাঠানো হবে। পরিচালন কমিটির নির্বাচন হবে কি না, পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করছে।”
কিন্তু এক বছর পরে হঠাৎ সিপিএমের পাঁচ নেতার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কেন? পদত্যাগীদের বক্তব্য, বোর্ডের চেয়ারম্যান নানা অনিয়ম করছিলেন। বোর্ডের অন্য সদস্যদের কথা কানে তুলছিলেন না। বারবার বলা সত্ত্বেও পরিচালন বোর্ডের নির্বাচন করা হচ্ছিল না। বেআইনি ভাবে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছিল। মনোনীত বোর্ডের সম্পাদক তারকেশ্বরবাবু বলেন, “সংস্থায় নানা রকম অনিয়ম চলছে। এ নিয়ে চারটি মামলাও হয়েছে। এ সবের দায়ভার আমরা নেব না। রাজ্য সরকারকে এর আগে সব জানিয়ে বারবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
হুগলি নদী জলপথ সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়কের সুপারিশে বোর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন সিপিএমের তিন প্রাক্তন কাউন্সিলর-সহ দু’জন নেতা। ওই সমবায় সমিতির পরিচালন বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে দলীয় শ্রমিক নেতা প্রণব ঘোষকে বসালেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে সমিতির সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর তারকেশ্বরবাবুকে। এ ছাড়া পরিচালক মণ্ডলীতে ছিলেন আরও দুই প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর শ্যামনরেশ সিংহ এবং রমেশ কপূর। সেই সময়ে তৃণমূলের তরফে বলা হয়, সমিতিতে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ও সমিতিকে বাঁচানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত। যদিও সিপিএমের দাবি, তৃণমূল নয় সরকারের সমবায় দফতর থেকে ওই পাঁচ জনের নাম পাঠিয়ে মনোনীত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ওই পাঁচ জন কিছু জানতেন না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, “ওই সমবায় সংস্থায় যা হচ্ছে, তা হল গা জোয়ারি করে ক্ষমতা দখল। যা দিয়ে সমবায় চালানো যায় না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছেন, ঠিকই করেছেন।”
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই পরিচালন কমিটির সদস্যেরা সকলে পদত্যাগ করেন। ফলে সমিতির অচলাবস্থা তৈরি হয়। এই অবস্থা কাটাতে ২০১২ সালের শেষ দিকে ৯ জনের মনোনীত বোর্ড গঠন করে রাজ্য সরকার। নতুন মনোনীত বোর্ড তৈরি হওয়ার পরে জলপথের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি হয় এক দফা। পুজোয় বোনাসও হয়। কিন্তু তার পরেও কেন বোর্ড সদস্যদের মধ্য পাঁচ জন এই সিদ্ধান্ত নিলেন?
উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোকবাবু বলেন, “সিপিএমের পাঁচ জনকে সুযোগ দিয়ে যে ভুল হয়েছে, তা বুঝতে পারছি। ওঁরা এখন একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন। আমরা ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই তদন্ত কমিশন বসিয়ে গত ২৫ বছর ধরে ওই সমবায় কী কী দুর্নীতি করেছে, তা সকলের সামনে হাজির করব।” |
|
|
|
|
|