বাড়ি আছে, জাঁক বারোয়ারিরও
ক্ষ্মী এলেন গজে চড়ে। বছরের পর বছর ধরে বিষ্ণুপুরের আঁইশবাজারে দত্তবাড়িতে এ ভাবেই আসে দেবী প্রতিমা। শতবর্ষ ছাড়িয়েছে এই বাড়ির গজলক্ষ্মীর পুজো। শতবর্ষ ছুঁয়েছে বিষ্ণুপুরে কয়েকটি বারোয়ারি পুজোও। সেখানে আলো, মণ্ডপ সজ্জাতেও যেন দুর্গাপুজোর জাঁকজমক!
মল্লরাজাদের রাজধানী এই শহরের বয়স অনেক। তাই এখানকার বনেদি বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর বয়েসও কম নয়। পুজোর রীতি নীতিও অনেক জায়গায় একটু ভিন্ন। দত্তবাড়ির বর্ষিয়ান সদস্য রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা তসর, গুড় ও ধানের ব্যবসা করতেন। বংশ পরাম্পরায় তাঁর শুনে আসছেন, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নে লক্ষ্মীপুজো করার নির্দেশ পেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্মী গজে আরোহন করেছিলেন। তাই এখানে দেবীর বাহন গজ অথাৎ হাতি, পেঁচা নয়। পুজোর গোড়া থেকে এখানকার প্রতিমার মূর্তি গড়ছেন এলাকার ফৌজদার পরিবারের শিল্পীরা। একেবারে সাবেকি প্রতিমা। গায়ে মাটির গয়না, মাটির শাড়ি। এই বাড়ির পুজো ১০০ বছর ছাড়িয়েছে।
গজলক্ষ্মী। —নিজস্ব চিত্র।
এখানকার লক্ষ্মীপুজোর আরও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “চার দিন ধরে পুজো হয়। তিন দিনের তিন রকম ভোগ। প্রথম দিন বাদশা ভোগ- চিঁড়ের সঙ্গে নারকোল কুচি। দ্বিতীয় দিন লুচি-মিষ্টি, তৃতীয় দিনে দুধ-লুচি। মাঝে একদিন ব্রাক্ষণ ভোজন করানো হয়।”
মাধবগঞ্জ বৈদ্য পাড়ায় বিশ্বাস বাড়ির লক্ষ্মী পুজোও অনেক দিনের। ওই বাড়ির প্রবীণ সদস্য শামাপ্রসাদ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের পুর্বপুরুষ কার্তিক বিশ্বাস ১৮৭৫ সালে বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেছিলেন। শোভাযাত্রা করে বাড়ির পুরুষরা জলাশয় থেকে ঘট নিয়ে আসেন। বাড়ির মেয়েরা তাঁদের ধান-দুর্বোয় বরণ করেন। সেই রীতি এখনও বজায় রয়েছে।” এই বাড়ির পুজোকে ঘিরে বিশ্বাসবাড়ির সব সদস্য জড়ো হন। এ বারেও দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এসেছেন। রয়েছে দু’দিনের বিচিত্রানুষ্ঠানও। একই পরিবেশ মটুকগঞ্জের শতবর্ষ প্রাচীন মণ্ডল বাড়ির লক্ষ্মী পুজোতেও। পরিবারের সদস্য কাঞ্চন মণ্ডল বলেন, “এই পুজো আমাদের কাছে সত্যিই এক মিলন মেলা। পরিবারের ছেলেদের শ্বশুর বাড়ির লোকজন থেকে বোন-ভগ্নিপতি কেউ বাকি থাকেন না। যত দূরেই থাক সকলেই আসেন। জমে ওঠে চার দিনের তুমুল আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া।”
পারিবারিক এই সব পুজোর বাইরেও বিষ্ণুপুর শহর এখন বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজোয় জমজমাট। চকবাজার লক্ষ্মীমাতা ষোলোআনা, বোলতলা ষোলোআনা ও স্টেশন রোড লক্ষ্মীমেলা কমিটির পুজ়োয় ঘিরে পুরবাসী মাতোয়ারা। ওই তিনটি পুজো শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। মণ্ডপ সজ্জায়, আলোকমালায়, বাদ্যযন্ত্রে গমগম করছে পুজো চত্বর।
চকবাজার ষোলআনা কমিটির সম্পাদক তথা বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “তিন দিন ধরে পূজার্চনা হবে। এক রাতে প্রসাদ বিতরণেরও আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে।” এ দিন সন্ধ্যা নামতেই ভিড় বাড়তে শুরু করে ওই পুজো মণ্ডপগুলিতে। বোলতলা ষোলোআনা কমিটির সম্পাদক শিবপ্রসাদ রক্ষিত বলেন, “আমরা চার দল বাজনদার এনেছি। আলোক সজ্জাতেও নতুনত্ব রয়েছে। প্রথম দিনেই প্রচুর দর্শক এসেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.