পাচারকারীদের বাধা দিতে গিয়ে ফের তাদের মারধরে গুরুতর জখম হল এক পরিবার। আহত ওই দম্পতি ও তাঁদের একমাত্র মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বৃহস্পতিবার রাতে বসিরহাটের সীমান্তবর্তী ঘোজাডাঙা দক্ষিণপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, আহত কিশোরী প্রিয়া মণ্ডল দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে ও তার মা বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বাবা জটাই মণ্ডলকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের ইটিন্ডার ঘোজাডাঙার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা জটাইবাবুর বাড়ি একেবারে সীমান্ত লাগোয়া। ওই এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াও নেই। ফলে রাতে তাঁর বাড়ির উঠোন দিয়ে ধুর পাচার (মানুষ পারাপার) ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাচারের কাজ করত পাচারকারীরা। বেশ কয়েকবার জটাইবাবু আপত্তি জানালেও পাচারকারীদের হুমকির মুখে চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ প্রিয়া শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়। তারপর অন্ধকারে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে ডাকাত বলে চিৎকার করে ওঠে। মেয়ের চিৎকারে বাইরে বেরিয়ে আসেন বাবা-মাও। ততক্ষণে অবশ্য ওই দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে চলে গিয়েছে। জটাইবাবু জানান, এর কিছুক্ষণ পরে জনা তিনেক দুষ্কৃতী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁর মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। এতে জটাইবাবু ও তাঁর স্ত্রী বাধা দেন। এতে দুষ্কৃতীরা ভোজালি দিয়ে তাঁদের দু’জনের মাথায় কোপ মারে। বাবা-মাকে ওভাবে মারতে দেখে আটকাতে গেলে দুষ্কৃতীদের ভোজালির আঘাতে হাত কেটে যায় প্রিয়ার। এর পর তিনজনকেই প্রচণ্ড মারধর শুরু করে দেয় দুষ্কৃতীরা। এতে জটাইবাবুরা চিৎকার শুরু করলে ওই এলাকায় টহলদারি বিএসএফ জওয়ানেরা ছুটে আসেন। ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। অবস্থা বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরাই জটাইবাবুদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
শুক্রবার হাসপাতালে শুয়ে প্রিয়ার মা পূর্ণিমাদেবী বলেন, “প্রায় রোজই বাড়ির ভিতর দিয়ে পাচারাকারীরা বাংলাদেশে যাতায়াত করে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়। ঘরে মেয়ে রয়েছে, তাই আতঙ্কে চুপ করে থাকি। এদিন মেয়ে হঠাৎই ওদের দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে চিৎকার করে। ওর বাবা তারপর বেড়া দেওয়ার কথা বলে যাতে দুষ্কৃতীরা বাড়ির ভিতর দিয়ে যাতায়াত করতে না পারে। এতেই ওরা ক্ষেপে গিয়ে আমাদের এমন দশা করেছে। যা হল তাতে এর পর এখানে নিরাপদে থাকব কী ভাবে?”
পূর্ণিমাদেবীর মতোই বক্তব্য এলাকার অন্য বাসিন্দাদেরও। তাঁদের অভিযোগ, পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে সন্ধের পর ঘর থেকে বেরোতে পারা যায় না। মেয়েরাও বাইরে বেরোতে পারে না ভয়ে। বিএসএফ, পুলিশ সবই রয়েছে। কিন্তু তাতেও বিপদ কমছে কই।
প্রসঙ্গত, মাস কয়েক আগেই বসিরহাটেরই স্বরূপনগরের কৈজুড়ি সীমান্তেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করায় পাচারকারীরা দুই মহিলাকে মারধর করে ও একজনকে খুন করে। |