রাতের ট্রেনে বুধবার শিয়ালদহ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা এক ব্যক্তি। রানাঘাট ছাড়ানোর পরে ফাঁকা কামরায় গৌতম দাস নামে ওই ব্যক্তির উপরে আচমকা হামলা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী গৌতমবাবুর অভিযোগ, তাঁকে অপহরণ করা হয়। দুষ্কৃতীরা তাঁকে কালীনারায়ণপুরে ট্রেন থেকে মারতে মারতে নামিয়ে আনে। তারপরে তাঁর বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা ও বেশ কয়েক ভরি সোনা দাবি করা হয়। গৌতমবাবুর পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার ভোরে রানাঘাটের নাসরা বেলতলা বাজার এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ভবতোষ মজুমদার নামে এক ব্যক্তিকেও।
কৃষ্ণনগরের আইসি অলোকরঞ্জন মুন্সি বলেন, “ওই রাতে গৌতমবাবুর পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়েই কৃষ্ণনগর জিআরপি ও রানাঘাট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ও মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার টোপ দিয়ে অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধরা হয় অপহরণ কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত একজনকেও।” গৌতমবাবু কৃষ্ণনগরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা। ধৃত ভবতোষের বাড়িও কৃষ্ণনগরের চাঁদমারি এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজকারের মতো বুধবার রাত ৮টা ৫০-এর ট্রেন ধরে কৃষ্ণনগরে ফিরছিলেন গৌতমবাবু। রানাঘাটে এসে কামরা ফাঁকা হয়ে যায়। গৌতমবাবু বলেন, “হঠাত্ হামলা করে দুষ্কৃতীরা। জামা কাপড় তন্নতন্ন করে খুঁজেও তেমন কোনও পয়সাকড়ি না পেয়ে, ট্রেন থেকে আমাকে নামতে বাধ্য করে। বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য এক লক্ষ টাকা ও বেশ কয়েক ভরি সোনার কথা বলতেও বাধ্য করে তারা।” অপহরণকারীরা সারা রাত তাঁকে ওই এলাকাতেই নানা জায়গায় নিয়ে যায়। ভোরের দিকে তাঁকে হাঁটিয়ে রানাঘাটের নাসরা বেলতলা এলাকার রেলের একটি পুরোনো আবাসনের দোতলার ঘরে তোলা হয়। এরই মধ্যে গৌতমবাবুর পরিবারের তরফে যোগাযোগ করা হয় কোতোয়ালি থানায়। ভোরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
গৌতমবাবুর ভগ্নীপতি নিলয় চাকলাদার বলেন, “দুষ্কৃতীরা বারবার টাকা চেয়ে ফোন করছিল। দেরি করলে বা পুলিশকে জানালে খুনের হুমকিও দিচ্ছিল। পুলিশ অবশ্য দুষ্কৃতীরা কোন এলাকায় রয়েছে, তা জেনে যায়। অপহরণকারীরা টাকা নিতে এলে পুলিশ তাড়া করে এক জনকে ধরে ফেলে। বাকিরা পালিয়ে যায়।” গৌতমবাবুকে শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে, পুলিশ জানতে পেরেছে ধৃত ভবতোষ ও তার শাগরেদরা মূলত ট্রেনে ছোটখাট অপরাধ করত। এ দিন ফাঁকা ট্রেনে মওকা বুঝে তারা গৌতমবাবুকে অপহরণ করে। ঘটনার একদিন পরেও চোখে মুখে আতঙ্কের রেশ কাটেনি গৌতমবাবুর। তিনি বলেন, “আমাকে তো আবার রাতেই বাড়ি ফিরতে হবে। রাতের ট্রেনকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছি না।”
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে নিত্যযাত্রী মহলে। রাতের ট্রেনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এসআরপি (শিয়ালদহ) সুভাষ নস্করের আশ্বাস, “রাতে ট্রেনে যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।” তবে কৃষ্ণনগরের জিআরপি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন কেবল মহিলা কামরায় তিন জন সশস্ত্র পুলিশ ছিলেন। তাঁরা কালীনারায়ণপুর থেকেই উঠেছিলেন। |