একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণ না বাড়ালে মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের ৬টি জেলায় প্রকল্প খাতে রাজ্যের আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে। শুধু তা-ই নয়, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের দশটি জেলা প্রাপ্ত অর্থের ৬০ শতাংশ খরচ করতে না পারায় সেই সব জেলাগুলি একশো দিনের প্রকল্পে দ্বিতীয় দফার বরাদ্দ অর্থ হাতে পাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
সারা দেশে ওই প্রকল্পে প্রাপ্ত কাজের ৫১ শতাংশই মহিলা। অথচ এ রাজ্যে কাজ পেয়েছেন গড়ে ৩৫.২ শতাংশ মহিলা। ৩০ শতাংশের নীচে রয়েছে রাজ্যের ৬টি জেলা। মুর্শিদাবাদে কাজ পেয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ মহিলা। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অগস্ট পর্যন্ত এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলা প্রকল্পের প্রাপ্ত টাকার ৫১.৭৬ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। ৭৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার মধ্যে জেলায় খরচ হয়েছে মাত্র ৩৮ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। নয়ম অনুযায়ী ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ না করলে পরবর্তী দফায় অর্থ পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ওই টাকা মুর্শিদাবাদ জেলা পাবে কিনা তা নিয়েই সংশয়। মুর্শিদাবাদ ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে আরও দশটি জেলা। তবে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭২ ও ৭০ শতাংশ অর্থ খরচ করে বর্ধমান ও নদিয়া রয়েছে সাফল্যের তালিকায়।
একশো দিনের কাজে মুর্শিদাবাদকে অন্তর্ভুক্ত করেন তৎকালীন সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। চলতি বছর পর্যন্ত জেলায় এই প্রকল্পে জব কার্ড হাতে পেয়েছেন ২০ লক্ষ ১৫ হাজার ৪০০ জন। কিন্তু এ বছর এ পর্যন্ত মাত্র ৮৯,৪৩৮টি পরিবার এই প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, জেলায় ৩৫১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও জব-কার্ডধারীদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের।
কাজ না দিলে ভাতা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রিপোর্ট বলছে, এ ব্যাপারে ১৭৫৮ জন ভাতার জন্য আবেদন করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকেই তা দেওয়া হয়নি। জেলার প্রকল্প আধিকারিক কৌশিক সরকার মহিলাদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা যে রাজ্যের মধ্যে ১৯তম স্থানে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, “পয়লা অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রকল্পে অনেকটাই কাজের গতি পেয়েছে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৮ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ ৬০ শতাংশের উপরে। গত সপ্তাহে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এই সাফল্যের জন্য আরও ২০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “সে টাকায় বর্তমানে পুজো ও ঈদের আগে জেলা জুড়ে ২৬টি ব্লকেই ৪৫ হাজার করে শ্রমিক প্রতি দিন কাজ করছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন ও বর্ষার কারণে এ বছরের শুরুতে সে ভাবে কাজের অগ্রগতি হয়নি। সেই ঘাটতি পূরণ করতে প্রায় সব ব্লকেই কাজ চলছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে, পুজোর আগেই শ্রমিকদের মজুরির টাকা মিটিয়ে দিতে। এ বছর পর্যন্ত ৩৮ হাজার পরিবার গড়ে ১৩ দিন করে কাজ পেয়েছে। ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৭৮ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ১ কোটি ২২ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। জনপ্রতি ৩০ দিন কাজ পায় শ্রমিকরা। খরচ হয় ২৩৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে খরচ হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। ২১ দিন করে কাজ প্রায় শ্রমিকরা। এ বার তাঁদের ৩০ দিন কাজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” |