নিয়োগ অবৈধ বলে বহরমপুর পুরসভার ২০৪ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বাতিল করে দেয় মুর্শিদাবাদ জেলাপ্রশাসন। ১৯৯৮ সালের ১৯ জুলাই তৎকালীন জেলাশাসক সঞ্জীবকুমার দাস ওই নির্দেশ জারি করেন। সরকারি ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে চার জন পুরকর্মী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী ওই চার জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
পুরকর্মীদের পক্ষে আইনজীবী সুফি মসিহ আফতাব বলেন, “১৯৯৮ সালের ১৯ জুলাই ছিল রবিবার। ওই ছুটির দিনে জেলাপ্রশাসন ওই ২০৪ জন পুরকর্মীর নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করে পুরসভায় একটি নির্দেশিকা জারি করে। ২০৪ জনের মধ্যে চার পুরকর্মী সরকারি ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে। অবশেষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী ওই পুরকর্মীদের স্বপক্ষে রায় ঘোষণা করে চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দেন।” বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য অবশ্য বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের কোনও কপি এখনও হাতে পাইনি। হাইকোর্টের রায়ের কপি হাতে পেয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফলে ওই বিষয়ে এখন কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
পুরসভা ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের দখলে থাকা বহরমপুর পুরসভার তৎকালীন পুরপ্রধান প্রদীপ মজুমদার করণিক-সহ বিভিন্ন পদে ২০৪ জন কর্মীকে চাকরির নিয়োগপত্র দেন। ১৯৯৮ সালের পুরনির্বাচনের কিছু দিন আগে ওই নিয়োগপত্র দেওয়ায় সেই সময়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই সময়ে জেলাপ্রশাসনের তরফে পুরসভার প্রশাসক পদে ছিলেন জেলাশাসক সঞ্জীবকুমার দাস। বিষয়টি জানতে পেরে জেলাশাসক ওই নিয়োগ অবৈধ বলে বাতিল ঘোষণা করেন। সরকারি ওই নির্দেশের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন চার পুরকর্মী। পুরকর্মীদের পক্ষে ওই আইনজীবী বলেন, “১৯৯৮ সালের ২০ জুলাই হাইকোর্ট অন্তবর্তীকালীন স্থিতাবস্থা জারি করে পুরসভাকে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতের ওই স্থিতাবস্থাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ওই পুরকর্মীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে বাতিল ঘোষণা করেন জেলাশাসক।”
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওই মামলা চলার পরে গত ২ অগস্ট পুর-কর্তৃপক্ষকে ওই পুরকর্মীদের নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। বর্তমান পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করে ওই পুরকর্মীদের নিয়োগ বাতিলের সরকারি নির্দেশিকা টুকু ছাড়া কোনও নথি জমা দিতে পারেনি। আইনজীবী সুফি মসিহ আফতাব বলেন, “এতে বিচারপতি দারুণ ভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনাও করেন। সেই সঙ্গে ওই নিয়োগ বাতিলের সরকারি নির্দেশকে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বাতিল ঘোষণা করে ওই চার পুরকর্মীকে পুনরায় কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন।”
এই চার জনের নাম হল ফিরোজ আহমেদ, এনামুল করিম, সামশুল সাবের এবং মুঙ্কু আব্দুর রহমান। ফিরোজ বলেন, “এত দিন যে কী কষ্টে দিন কেটেছে, তা কী করে বলব? তবে আশা ছিল, একদিন চাকরি ফিরে পাব। আদালতের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পেয়েছি। এ বার দেখি, পুরসভা কবে আমাদের কাডে ডেকে নেয়।” |