পদ্মার ভাঙনের ধাক্কায় বিপন্ন লালগোলার ময়া ও পন্ডিতপুর গ্রাম। রাজ্য সেচ দফতরের পাথর বাঁধানো স্পার ধসে গত দশ দিনে প্রায় সাড়ে চারশো মিটার এলাকা জুড়ে শুরু হওয়া ভাঙন ইতিমধ্যেই ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ২০১১ সালেও ময়ার ঘোষপাড়ায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিলে রাজ্য সেচ দফতর ভাঙন ঠেকাতে দেড় কোটি টাকা দিয়ে বালি বোঝাই বস্তা ফেলে। সেই ভাঙন এলাকা থেকে আড়াইশো মিটার দূরে পূর্ব দিকে এবার ফের শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন।
গত দশ দিনে প্রায় দু’শো মিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে পদ্মা। পদ্মার ধারে ২০ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি বাড়ি থেকে সমস্ত আসবাব সরিয়ে নিলেও বাড়ির লোকজন এখনও ভিটে আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন সেখানেই। সমস্ত এলাকাটাই স্পার দিয়ে বাঁধানো ছিল। এখন আর তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা দবির সেখ বলেন, “দশদিন ধরে ভাঙন চলছে। প্রশাসনের লোকজন এসে ভাঙনের ভয়াবহতা দেখেও গিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি। বাড়ি লাগোয়া পাঁচ বিঘা জমিও চলে গিয়েছে পদ্মাগর্ভে। জমির সব পাট কাটতেও পারিনি।” পারুলনেশা বেওয়া বলেন, “জানি ভিটে বাঁচবে না। তবুও আঁকড়ে পড়ে রয়েছি। যদি কেউ এসে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করেন। রাতে পাড় ভাঙার শব্দে দু’ চোখের পাতা এক করতে পারছি না। এই কটা দিন আত্মীয় স্বজনদের পাঠানো খাবারে চলছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ মেলেনি। জানিনা আর কত দিন এইভাবে চলবে।” |
লালগোলা ব্লকের একেবারে শেষ প্রান্তে ময়া ও পন্ডিতপুর গ্রাম। লালগোলার বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা বলেন, “ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। পরিস্থিতির কথা সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। ময়া গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধানকেও বলা হয়েছে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে আমার কাছে পাঠাতে। সেই মতো ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেই তালিকা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।” এতদিন পরেও কেন তালিকা তৈরি হ’ল না। গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের দীপিকা সাহার সাফাই, “পুজোর ছুটিতে বাইরে ছিলাম। তাই তালিকা তৈরি সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ির মালপত্র সরাতে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শনিবার শুরু হবে।”
ভাঙন রোধের অবস্থাও তথৈবচ। পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে ভাঙন রোধের ব্যাপারে ততই যেন কাজিয়া বাড়ছে। দায় এড়াচ্ছে দু’পক্ষই। রাজ্য সেচ দফতরের রঘুনাথগঞ্জ ডিভিসনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পদ্মার ওই এলাকার ভাঙন রোধের দায় ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের, রাজ্যের নয়।” ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ কুমার সিংহের কথায়, “ভাঙনের খবর আমাদের কাছেও আছে। কিন্তু অর্থ মঞ্জুর না হলে আমাদেরও কিছু করার নেই।” এলাকার বিধায়ক কংগ্রেসের আখরুজ্জামান বলেন, “ভাঙনের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। উপরের বৃষ্টি ও নীচের জলের ধাক্কায় পাড়ের মাটি সহজেই ধসে পড়ছে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই। ভাঙন রোধের দায় কার এ নিয়ে কাজিয়া চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই।” এরমধ্যেই নাড়ুখাকির চরে বিএসএফের আউট পোস্টের ঘেরা প্রাচীরের অনেকটাই ভাঙনে ধসে পড়েছে। পন্ডিতপুরের পাশেই এ্যাফ্লেক্স বাঁধ। সেই বাঁধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন বিএসএফ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। |