পুজোয় নবদ্বীপের মঠে রকমারি ভোগ
রূপোর বাটিতে বাটিতে সাজানো ক্ষীর, ননী, মাখন। রূপোর গ্লাসে সুগন্ধী পানীয় জল। মঙ্গলারতির পর এই দিয়েই প্রাতঃরাশ সারেন নবদ্বীপেশ্বর মহাপ্রভু।
তারপর দ্বিপ্রাহরিক ভোজনে রূপোর থালা বাটিতে থরে থরে সাজানো সুগন্ধী গোবিন্দভোগের সাদা ধবধবে অন্ন। কলমি এবং লাল নটে বাদে যে কোনও একটি শাক। তেতো শুক্তো, মোচার ঘন্ট, নারকেল দিয়ে কচুর শাক। পাঁচ তরকারি দিয়ে চচ্চড়ি আর তাতে থোর থাকবেই। দু’রকম ‘রসা’- ছানা বা পনীরের, সঙ্গে ফুলকপি, পটল, এচোঁড় যখন যেটা পাওয়া যায়। ধোকার ডালনা, পুষ্পান্ন, ঘন ডাল, পোড়ের ভাজা, চাটনি, পরমান্ন, দই। সঙ্গে রসগোল্লা, সন্দেশ বা অন্য কোনও মিষ্টি।
বিকেলে ছানা, ফল। আর রাতে শয়ন আরতি শেষে ঘিয়ের লুচি এবং ক্ষীর। এ ভাবেই পুজোর দিনগুলোতে ভোগের আয়োজন করা হয় নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী সেবিত মহাপ্রভুর। মহাপ্রভুবাড়ির সেবাইত তথা বিষ্ণুপ্রিয়া সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “দুর্গাপুজো বলে নয়, বছরভর এ ভাবেই ভোগরাগ হয় মহাপ্রভুর। বরং সামনেই নিয়মসেবার মাস, কার্তিক মাস। সেই সময় ভোগের কিছু রদবদল ঘটবে।”
মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত এই পক্ষে বাঙালির শাক্ত পুজো নিয়ে মাতামাতির মধ্যে নবদ্বীপের দেড়শোর বেশি মঠেও তার ছোঁয়াচ লক্ষ করা যায়। অনেক বৈষ্ণব মঠেই দুর্গাপুজো হয়। তবে কোথাও তাঁকে যোগমায়া, কোথাও কাত্যায়ণী আবার কোথাও পার্বতী হিসাবে পুজো করা হয়। দেড়শো বছরের প্রাচীন নবদ্বীপ হরিসভা মন্দির। ব্রজনাথ বিদ্যারত্ন স্থাপিত নাটুয়া গৌরের পুজো হয় এই মন্দিরে। ব্রজনাথই প্রথম নবদ্বীপে প্রকাশ্যে মূর্তি গড়ে চৈতন্য ভজনা শুরু করেন। এই মন্দিরে সারা বছর গৌর সেবা হলেও পুজোর অষ্টমীর দিন শ্বেতপাথরের শিব পার্বতীর পুজো হয় ষোড়শপোচারে। হরিসভার প্রধান বিবেকবন্ধু ব্রহ্মচারী বলেন, “এ দিন খিচুড়ি ভোগের আয়োজন হয়। খিচুড়ি, চচ্চড়ি, ভাজা,চাটনি, পায়েস এবং নানা রকম মিষ্টি। এর সঙ্গে নাটুয়া গৌরকে নিবেদন করা হয় অন্ন, শুক্তো, কচুর শাক, মোচার ঘন্ট, ছানার রসা, ধোঁকার ডালনা, পুষ্পান্ন, বেগুনি, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি।”
নবদ্বীপের আর এক প্রাচীন মঠ সমাজবাড়ি। সেখানে চিত্রপটে চার দিন পুজো করা হয় যোগমায়ার। সমাজবাড়ির নরহরি দাস বলেন, “‘বৃহৎ নন্দীকেশ্বর’ এবং ‘আনন্দবৃন্দাবনচম্পূ’এই দুই গ্রন্থ অনুসারে আমাদের পুজো হয়। এই পুজোয় যোগমায়াকে সবার আগে জগন্নাথদেবের প্রসাদ ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। পুরীর মন্দির থেকে আনা হয় খাজা, মালপোয়া, মহাপ্রসাদ।” সমাজবাড়ির চার দিনের মহাপুজোয় কী থাকে বলার থেকে কী থাকে না সেটা বলা সহজ। দুপুরে অন্নভোগের সঙ্গে আনুষাঙ্গিক পদ তো থাকেই। সারাদিন ধরে দফায় দফায় দেওয়া হয় হাজারো সুখাদ্য। কচুরী, রাধাবল্লভী, পুরি, ডালপুরি, লুচি, মালপোয়া, পাটিসাপটা, গজা, খাজা, জিলিপি, অমৃত্তি, রসবড়া, নিমকি ছাড়াও থাকে নানা রকম ভাজা মিষ্টি। সেই সঙ্গে থাকে নারকেলের বহু রকম নাড়ু, মোয়া, তিলের নাড়ু, চিড়ের নাড়ু, চন্দ্রপুলি, তক্তি, ক্ষীরের নাড়ু, লবঙ্গলতিকা, কাজুর বরফি, হালুয়া, মোহনভোগ এবং নানা ধরনের সন্দেশ। নরহরি দাস বলেন, “উৎসবের আগে থেকে এই সব কিছুই তৈরি হয় মঠে।”
নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে চার দিন ধরে চিত্রপটে মহামায়ার পুজো হয়। এখানে সন্ধিপুজো নেই। বিসর্জনও হয় না। মঠাধ্যক্ষ অদ্বৈত দাস বলেন, “দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের সময় আমরা মহামায়াকে গঙ্গা দর্শন করিয়ে আনি। তবে পুজোর ক’দিন ভোগের চরিত্র বদলে যায়।” ‘মগজনাড়ু’ এখানে দেবীর ভোগের প্রধান উপকরণ। তার সঙ্গে মাসকলাই, মুগকলাই, অঙ্কুরিত ছোলা দেওয়া হয়। থাকে অন্নভোগ, নানা সব্জি, কাজু, কিসমিস দিয়ে খাঁটি ঘিয়ের খিচুড়ি। নানা ধরনের ভাজাও থাকে। পাশাপাশি পোলাও, নানা ধরনের পুরি, কচুরী, ধোঁকার ডালনা, ছানা-পনিরের তরকারি, মরসুমে মেলে না এমন দুষ্প্রাপ্য সব্জির তরকারিও থাকে। সেই সঙ্গে চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি তো থাকেই।
তাই মহাপুজোর চার দিনে বাঙালি যেখানে যত বিদেশি খানাই খান না কেন নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠের রকমারি ভোগের থালাও কম আকর্ষণীয় নয়। আর এ সবের দামও নাগালের মধ্যেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.