পেঁচাকে ছুটি দিয়ে স্কুটির পিঠে লক্ষ্মীরা
ক্ষ্মীমন্ত মেয়ে-বউদের এখন বড্ড ছুটোছুটি।
এই হাটবাজার, তো ওই মেয়ের নাচের স্কুল। রাঁধা-চুল বাঁধার পাট চুকিয়ে সোজা স্কুল কিংবা অফিস।
কিন্তু বাহন? আদ্যিকালের পেঁচা তো ভোর হতে না হতেই ঘুমে ঢুলে পড়ে। আগে যখন চাঁদনি রাতে জোছনা গায়ে মেখে লক্ষ্মী বণিকের ঘর খুঁজে ফিরতেন, তখন সে চাকরিতে ঢুকেছিল। এখন আর তাকে দিয়ে চলে না।
এ কালের লক্ষ্মীরা তাই নতুন বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন দু’চাকার স্কুটিকেই। চাকরিজীবী থেকে কলেজ পড়ুয়া, ব্যবয়ায়ী থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা— সকলেই স্কুটি চড়ে ভোঁ-ও-ও। কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর, নবদ্বীপ থেকে রানাঘাট সর্বত্র স্কুটির প্রতি মহিলাদের আকর্ষণ বাড়ছে।
স্কুটির কল্যাণে যে বিলক্ষণ লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন বিভিন্ন মোটরসাইকেল শো-রুমের মালিকেরা। কৃষ্ণনগরের সৌম্যজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “এখন আর স্কুটির জন্য আলাদা করে মার্কেটিং করতে হয় না কোনও কোম্পানিকে। স্কুটি কিনবেন বলেই সরাসরি আসছেন ক্রেতারা। এঁদের আশি শতাংশই কিনছেন প্রয়োজনে। বাকি কুড়ি শতাংশ হয়ত শখ করে।” সৌম্যজিৎবাবুর হিসেবে, ২০১২ সালে তাঁর শো-রুম থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো স্কুটি বিক্রি হয়েছিল। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংখ্যাটা ৪৭৮। এর মধ্যে বেশির ভাগই আবার বিক্রি হয়েছে নগদে।
করিমপুরের শো-রুম মালিক রণেন্দু বিশ্বাসের মতে, “স্কুল শিক্ষিকারাই বেশি স্কুটি কিনছেন। তবে অন্য পেশার বহু মহিলারাও আছেন। তাঁদের পরে ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন কলেজ-ছাত্রীরা। কর্মস্থল বা কলেজ একটু দূরে হলেই মহিলারা বাস বা অন্য যানবাহনের বদলে স্কুটি বেছে নিচ্ছেন।” তাঁদের হিসেবে, গত তিন বছর ধরেই হুহু করে বাড়ছে স্কুটির বিক্রি। ২০১১ সালে তাঁদের শো-রুম থেকে ৭০টি স্কুটি বিক্রি হয়েছিল। এ বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সংখ্যাটা ৮০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

রাস্তায় বেরোতে স্কুটিই এখন মেয়েদের ভরসা। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গাড়ি কারবারিদের ব্যাখ্যা, গিয়ার না থাকায় অন্য মোটরসাইকেল বা বাইকের তুলনায় স্কুটি চালানো সহজ। ডান হাতে সামনের চাকার ব্রেক, বাঁ হাতে পিছনের চাকার— হুবহু সাইকেলের মতোই। কাজেই সাইকেল চালাতে জানলেই অনায়াসে স্কুটি চালানো যাচ্ছে। শহরে-গাঁয়ে সাইকেল তো অনেকেই ছোট থাকতে শিখে ফেলে। ফারাকের মধ্যে, সাইকেলের মতো প্যাডেল করার কষ্ট নেই, শুধু অ্যাক্সিলেটর ঘোরালেই দু’চাকা ছুটছে। দাম নাগালের মধ্যে। এক লিটার পেট্রোলে ছোটে গড়ে ৪৫ কিলোমিটার, অর্থাৎ মাইলেজও ভাল।
কৃষ্ণনগরের তিয়াসা খাঁয়ের কথায়, “আমার মেয়ের স্কুল, নাচের ক্লাস এবং টিউশন পড়ার জায়গা— সবগুলোই বাড়ি থেকে বেশ দূরে। রিকশা চড়া ভাড়া হাঁকে, তা-ও আবার সব সময়ে মেলে না! বিরক্ত হয়ে স্কুটি কিনে ফেললাম। এখন দিব্যি চলছে।” পাকা গিন্নির মতোই হিসেবটা বুঝিয়ে দেন তিয়াসা— “আগে রিকশার পিছনেই মাসে হাজার-বারোশো টাকা গুনতে হত। পেট্রোলের চড়া দাম সত্ত্বেও এখন সব জায়গায় যাতায়াত করে মাসে খরচ পড়ে বড় জোর পাঁচশো টাকা। সুতরাং...।”
শুধু খরচ বাঁচানো নয়, স্কুটি আসলে মেয়েদের দিয়েছে নিজের মর্জিমাফিক চলাফেরার স্বাধীনতা, যা কি না এত দিন বাইক-শোভিত পুরুষদেরই একচেটিয়া ছিল।
নবদ্বীপের শিক্ষিকা নন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। তিনি বলেন, “নয় কিলোমিটার আমি বাসে যেতে পারি। কিন্তু বাকি দুই কিলোমিটার যেতে ভ্যানরিকশা ছাড়া গতি নেই। তা-ও সব সময় মেলে না। তাই বাধ্য হয়েই স্কুটি কিনেছি। এখন শুধু হয়রানি নয়, আগের থেকে প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে বাড়ি থেকে বেরোই। ফিরিও তাড়াতাড়ি।” ঘর-বার দুই-ই সামলাতে হয় নবদ্বীপের পলি দাসকে। তাঁর কথায়, “আগে সবচেয়ে সমস্যা হত সময় নিয়ে। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে হয়তো ব্যাঙ্কে যেতে হবে। কিন্তু রিকশাই পেতাম না বহু দিন। স্কুলে দেরি তো হতই, ব্যাঙ্কের কাজেও ঝামেলা বাড়ত। কিন্তু স্কুটি কেনার পরে কাজের সময়টা নিজের ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কোথাও সময়ে পৌঁছনোর জন্য এখন আর টেনশন করতে হয় না।”
পেঁচার ছুটি। বাধাবন্ধহীন গতির আনন্দেই এখন শহর-গঞ্জের পথ জুড়ে ছুটে চলেছেন হাজার-হাজার লক্ষ্মী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.