|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
ফিরছেন দুর্গতেরা, ত্রাণ শিবির কমে ১৮ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। সর্বত্রই জল নামতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্লকস্তরেও সব দফতরের কাজকর্মের উপর নিয়মিত নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি। জেলাশাসকের নির্দেশে শুক্রবার মেদিনীপুর সদর এবং কেশপুরে গিয়ে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত। কৃষি, সেচ-সহ বিভিন্ন দফতরের ব্লক আধিকারিকেরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ কর্মাধ্যক্ষরা। মূলত, তিনটি দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এক, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্লকস্তরে কী কী করা হয়েছে। দুই, কোন কোন ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব থেকে যাচ্ছে। এবং তিন, এরপর কী কী করতে হবে। বেশ কিছু এলাকা থেকে ত্রাণ নিয়ে নালিশ আসতে শুরু করেছে। দুর্গতদের বক্তব্য, সকলের কাছে সময় মতো ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না। কয়েকটি এলাকায় নামমাত্র ত্রাণ বিলি হয়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, ত্রাণের অভাব নেই। ক্ষতিগ্রস্ত সবক’টি এলাকায় ত্রাণ বিলির কাজ চলছে। দরকারে আরও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হবে। জেলাশাসক বলেন, “অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সব এলাকা থেকেই জল নামছে। পরিস্থিতি উপর নজর রাখা হচ্ছে।” |
|
জলমগ্ন কেশপুরের ঝলকার চাতালে পারাপার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
টানা বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর জল ছাড়ায় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৬টি ব্লকই কমবেশি দুর্যোগের কবলে পড়ে। জলমগ্ন হয় ১২টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপীবল্লভপুর ১ ও ২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, কেশিয়াড়ি, দাঁতন ১, মোহনপুর। সুবর্ণরেখা নদী ছাপিয়ে এই সব ব্লক প্লাবিত হয়। কংসাবতীর জল উপচে প্লাবিত হয় ঘাটাল, দাসপুর-১, খড়্গপুর-২, মেদিনীপুর সদর, কেশপুর। জলের তোড়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ ভাঙে। ফলে, পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। একের পর এক এলাকায় হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। ঘাটাল, দাসপুর- ১ এর মতো কিছু এলাকায় এখনও কোমর সমান জল রয়েছে। সেই জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে জলের স্রোতে ভেসে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। সাপে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর সদরের উপরডাঙ্গার বাসিন্দা চায়না সিংহর (১৮) সাপে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, বেলপাহাড়ির ভেলাইডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জল নামায় ইতিমধ্যে বহু মানুষ শিবির থেকে বাড়ি ফিরেছেন। গোড়ায় ৬২টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল। শুক্রবার জেলায় ১৮টি ত্রাণ শিবির চালু ছিল। এর মধ্যে কেশপুরে ৬টি, মেদিনীপুর সদরে ৩টি, সাঁকরাইলে ২টি, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে ২টি, নয়াগ্রামে ২টি, দাসপুর-১ ব্লকে একটি এবং খড়্গপুর-২ ব্লকে ২টি। ত্রাণ শিবিরে ২৮৬৪ জন রয়েছেন। নতুন করে বৃষ্টি হয়নি। তবে, শুক্রবারও জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়েছে। তবে তা তুলনায় কম। গালুডি থেকে এ দিন ২৬ হাজার ৪৬৬ কিউসেক জল ছাড়া হয়। চার দিন আগে ছাড়া হয়েছিল ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক জল। কংসাবতী থেকে এ দিন ৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। চারদিন আগে ছাড়া হয় ২৫ হাজার কিউসেক জল।
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্লকস্তরেও সমস্ত দফতরের কাজকর্মের উপর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। সেই মতো শুক্রবার মেদিনীপুর সদর বিডিও অফিসে বৈঠক হয়। ছিলেন বিডিও ঋত্বিক হাজরা সহ অনান্য আধিকারিকেরা। বিকেলে কেশপুর বিডিও অফিসে বৈঠক হয়। ছিলেন বিডিও মহম্মদ জামিল আখতার সহ অনান্য আধিকারিকেরা। দু’টি বৈঠকেই ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বিলির নির্দেশ দেন মহকুমাশাসক (সদর)। কিছু সমস্যার কথা উঠে আসে। জল জমে থাকার ফলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এই সব সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়। বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ত্রাণ শিবিরে থাকা মানুষদের বিশেষ ত্রাণ বিলি করতে হবে। দুর্গতদের মধ্যে বিলি করতে হবে প্যাকেট। যেখানে থাকবে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি চিঁড়ে, ৫০০ গ্রাম গুড়, ৫০০ গ্রাম মুড়ি। বুধ এবং বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাংসদ মুকুল রায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিলি করেন। শুক্রবারও শিবিরে শিবিরে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত ব্লক থেকে ত্রিপল চেয়ে আবেদন আসছে জেলায়। আবেদন খতিয়ে দেখে সমস্ত ব্লকে ত্রিপল পাঠানোও হচ্ছে। জেলা থেকে শুক্রবারও সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর- ১ এর মতো ব্লকে ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি ব্লকে ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখে আরও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রচুর মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে, জল নামতে শুরু করায় এখন পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। অনেকেই শিবির থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। শুক্রবারও প্রচুর মানুষ বাড়ি ফিরেছেন।” |
|
|
|
|
|