শর্ট ডেলিভারির নীতি থেকে কোনও ভাবেই সরে আসা নয়। উইকেটে বাউন্সটা ঠিকঠাক থাকলে মোহালিতেও শর্ট বল প্রবল ভাবে থাকছে।
জেমস ফকনার দিয়ে চলবে না। ও মন্থর পিচে ঠিক আছে। কিন্তু ধোনিদের মারতে হলে দরকার আগুনে পেস। অতএব আবার আনো পুণে ম্যাচের কোর্ট-নাটালেকে।
একটা ম্যাচ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বরং বারবার যে ভুলটা ভারতীয়রা করে চলেছে, সেটাতেই ওদের আরও পিষতে হবে! স্পিনের দেশে ওরা এমন সব উইকেট বানাচ্ছে যা আদতে স্পিনারদের বধ্যভূমি! টার্গেটটা তাই সেই দিকেই হওয়া দরকার।
স্কোরবোর্ডে ৩৫৯ তুলেও খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়ার পর একটা টিমের মানসিকতাটা ঠিক কী হওয়া উচিত? সাধারণ বোধবুদ্ধি বলে, ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ মার্কা কিছু। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বের এই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের মনন বোধহয় একটু আলাদা মশলায় তৈরি। নইলে জয়পুরে চরম থেঁতলানি খাওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে এতটা পাথুরে মনোভাব দেখানো যায়? অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক কী ভাবে মুচকি হেসে-হেসে বলে যেতে পারেন, “শর্ট বলটা বন্ধ হচ্ছে, কে বলল? জয়পুরে বাউন্সটা ছিল না। এখানে পেলে দেখবেন!”
কখনও অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। কখনও টিম অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ কেউ। যাঁদের কথার্বাতার ধরনধারণ শুনলে বেশ আশ্চর্য লাগবে। মনে ধন্ধ হবে যে, জয়পুরে তা হলে ঠিক কারা হারল? অস্ট্রেলিয়া? নাকি ভারত!
অস্ট্রেলীয় কোচ স্টিভ রিক্সন নাকি জয়পুর ম্যাচের পর টিমের বিপর্যস্ত বোলারদের নিয়ে বসেছিলেন। এবং সিরিজে প্রত্যাবর্তনের সোজাসাপ্টা টোটকা দিতে গিয়ে বলে দিয়েছেন যে, ‘এখানে যা ঘটতে দেখলে, সেটা মিরাক্ল। একদিন হয়ে গিয়েছে। তেতাল্লিশ ওভারে তিনশো ষাট পরের ম্যাচগুলোতে উঠবে না, নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।’ চলতি সিরিজ কভার করতে আসা সিডনির এক সাংবাদিক ঘটনাটা বলছিলেন। এমনিতেই নাকি অস্ট্রেলিয়া শিবির ভারত সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। দিন কুড়ি পরেই অ্যাসেজ শুরু। পুরো টিমটার আগ্রহ সম্পূর্ণ ওই দিকে ঘুরে গিয়েছে। উদাহরণ চাই? স্টিভ স্মিথ যেমন। অ্যাসেজের কথা ভেবে তাঁকে ভারত সফরে ওয়ান ডে-র জন্য আনাই হয়নি। অথচ শেন ওয়াটসন বাদে ওয়ান ডে সফরে অস্ট্রেলিয়ার দুর্ধর্ষ বাজি হতে পারতেন স্মিথ।
তবে এটাও ঠিক, অ্যাসেজের কথা তুলে অস্ট্রেলীয় শিবির থেকে ব্যাপারটাকে যতটা লঘু করে দেখানো হচ্ছে, আদতে ততটাও নয়। নইলে পঞ্জাবের কাঠফাটা রোদ্দুরে বারবার পিচের দিকে কেন ঢুঁ মারবেন কোচ-ক্যাপ্টেন? কেন-ই বা দলজিৎ সিংহের তৈরি বাইশ গজ দেখে কোর্ট-নাটালেকে নামিয়ে দেওয়ার লোলুপ ইচ্ছে জাগবে টিমের মস্তিষ্কে? সিরিজকে পুরোপুরি উপেক্ষা করতে চাইলে তো ওপেনার ফিল হিউজেরও ভারত সফরের আগে স্পিনের ওয়ার্কশপে নাম লেখানোর কোনও প্রয়োজন ছিল না!
সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলছিলেন, “ভারত সফরের যে চ্যালেঞ্জটা বরাবর থাকে, সেটা এ বার থাকবে ধরেই আমরা এসেছিলাম। ভারতে এলে এখানকার পরিবেশ, উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াতে চ্যালেঞ্জ থাকে। ঠিক ওরা আমাদের দেশে গেলে যেমন হয়।” একটু থেমে বেইলির পরবর্তী সংযোজন, “কিন্তু এ বার দেখছি, স্পিনারদের জন্য বলতে গেলে কিছুই নেই। অশ্বিনদের তাই আমি পুরো দোষ দেব না। একটুআধটু সাহায্য-ই যদি না পায়, তা হলে ওরা আর কী করবে?”
ঘটনা হচ্ছে, অজি অধিনায়ক মুখে যতটা বললেন, ঘনিষ্ঠমহলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় স্পিনার তৈরির পরিকাঠামো বলতে গেলে কিছুই আর নেই। শেন ওয়ার্ন দূরের ব্যাপার, একটা স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলও এখন আর ওঠে না। শোনা গেল, ওয়ার্ন নাকি একটা চেষ্টা-চরিত্র করছেন, কিন্তু তাতেও কত দূর কী করা যাবে নিশ্চিত নয়। তাঁরা ধরেই রেখেছিলেন, ভারতে ঢোকামাত্র স্পিনের তপ্ত কড়াইয়ে তাঁদের ভেজে ফেলা হবে। বাস্তবে হচ্ছে উলটপুরাণ। অতিথি শিবিরে নাকি বলাবলি চলছে যে, এতটা আশা করা যায়নি। বিপদ তো ভারতেরই হবে। যে দিন শিখর-বিরাটরা আটকে যাবেন, তখন?
সাড়ে তিনশো তো রোজ রোজ তাড়া করা যাবে না! |