সবার মুখে এখন একটাই নাম বিরাট কোহলি। ঠিক যখন ক্রিকেট মাঠ থেকে গ্রেটেস্ট বিদায় নিতে চলেছে, সেই মুহূর্তেই আর একজন ভারতীয় সুপারস্টার ব্যাটসম্যানের উত্থান ঘটছে। আটের দশকের শেষের দিকে ঠিক যে ভাবে সুনীল গাওস্কর তাঁর বুট জোড়া তুলে রাখার সময় তেন্ডুলকরের আবির্ভাব ঘটেছিল, তার সঙ্গে যেন কোনও পার্থক্য নেই এ বারের কোহলির।
ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে আশীর্বাদ যে, গত চল্লিশ বছর ধরে খুব বিশেষ মুহূর্তে একটা না একটা ব্যাটিং-ভূমিকম্পের দুধর্র্র্র্ষ উদগীরণ ঘটেছে। গাওস্কর-রাজ বিশ্ব ক্রিকেটে চলেছে ১৬ বছর। তেন্ডুলকর-সাম্রাজ্য ২৪ বছর। আর এখন কোহলি আলোচনা-আকর্ষণ যা-ই বলুন, তার কেন্দ্রে। ভাববেন না যে, আমি এক মুহূর্তের জন্যও গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, সহবাগ, দ্রাবিড় কিংবা ভিভিএস লক্ষ্মণ এই নামগুলোকে উপেক্ষা করছি। কিন্তু ওই তিনজন স্পেশ্যাল মানুষের চূড়ান্ত নিয়তি ভীষণই উজ্জ্বল।
শিখর ধবন, রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারাদের প্রতিভা, ফোকাস আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখার পর বলতেই হচ্ছে যে, ভারতীয় ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের হাত থেকে ব্যাটনটা যথার্থ ভাল হাতেই জমা পড়েছে। সাত আর আটের দশক যদি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান গ্রেটদের হয়ে থাকে, তার পর নয় আর একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকটা যদি অস্ট্রেলীয় সুপারস্টারদের হয়, তা হলে বিশ্ব ক্রিকেটের বর্তমান সময়টা ভারতীয়দের শাসনাধীন। এখন ভারতীয় ক্রিকেটের সোনালি অধ্যায় চলছে।
যদিও এই রায় বহাল রাখার জন্য সাবধানতা অবলম্বনও দরকার। অন্তত পরের আট মাসের জন্য তো বটেই। এই সময়ের মধ্যেই ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ড সফরে যাবে। দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলাররা বাউন্সি পিচে সত্যিকারের ছবিটা দেখিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেই পরিস্থিতিতেও ভারতের এই ব্যাটিং লাইন আপ ভালই করবে। হাজার হোক, কোহলি গত বছরই পারথের পিচে নিজের স্কিল দেখিয়ে এসেছে, টেস্ট সেঞ্চুরি করে। পূজারাও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যথেষ্ট ভাল ব্যাট করেছে। |
ভারতীয় বোলিংকে অবশ্য বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে। অশ্বিনকে নিয়েও এখন দুশ্চিন্তা। ওর বোলিংয়ের মান নিয়ে যদিও কোনও সন্দেহ নেই। মনে হয়, প্রথম টেস্টের আগে কিছুটা বিশ্রাম পেলে সেটা ওর পক্ষে ম্যাজিকের মতো কাজ করতে পারে। বরং বিনয় কুমার আর ইশান্ত শর্মা আরও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াকে তিনশো রানের ইনিংসগুলো যেন উপহার দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দু’-একজনকে শনিবারের মোহালি ওয়ান ডে-তে সুযোগ না দিলে বড় ভুল হবে। মোহালিতে অস্ট্রেলিয়া ওদের প্রথমে ব্যাট করার স্ট্র্যাটেজির ব্যাপারে নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচনা করে দেখবে। জয়পুরে সন্ধে-রাতের শিশিরে বল করা যতটা অসুবিধের হয়েছে, মোহালিতে তার চেয়ে কিছু কম হবে বলে মনে হয় না।
চলতি সিরিজ রানের মহাভোজের দিকে এগোচ্ছে। প্লেয়িং কন্ডিশন যদি একেবারে ওলটপালট না করা হয়, তা হলে ওয়ান ডে ম্যাচে বিশাল স্কোর ওঠাটা এ রকম নিয়মই হয়ে উঠবে। পনেরো ওভারের পাওয়ার-প্লে, তার পরেও সারাক্ষণ তিরিশ গজ বৃত্তের বাইরে সর্বাধিক চারজন ফিল্ডার রাখতে পারার বর্তমান নিয়ম ব্যাটসম্যানদের বিগ হিটের আরও বেশি সুযোগ এনে দিয়েছে। সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কল্যাণে তো কিছু বাড়তি তির ব্যাটসম্যানদের তূণে এমনিতেই ইদানীং ঢুকে পড়েছে!
|