তিন নায়কের নেপথ্যের রসায়ন প্লাস্টিক বলে অনুশীলন থেকে ধ্যান
মিচেল জনসনের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজের সম্মুখসমরে নামার আগে দৈনন্দিন রুটিনটা একটু অদ্ভুত ছিল শিখর ধবনের। ভোরবেলায় উঠে ক্রিকেট কিট নিয়ে সোজা চলে যেতেন ছোটবেলার কোচের ডেরায়। ডিউস নয়, কোচের হাতে থাকত প্লাস্টিক বল। এবং নেটের ভিতর থেকে জাঠ যুবকের গলা থেকে মোটামুটি একটাই কথা ভেসে আসত, “স্যর, হিট করিয়ে সোজা বুকের কাছাকাছি তুলবেন। জনসনও কিন্তু ও রকমই তুলবে!”
অহেতুক মাঠে মাথা গরম করে ক্রিকেটীয় বোধবুদ্ধি হারানো নাকি বেশ কিছু দিন হল বন্ধ করে দিয়েছেন বিরাট কোহলি। মাঝেমধ্যে বকাঝকা খেয়ে। রাগটা আছে, আগ্রাসনও নিশ্চয়ই দেখান এখনও, কিন্তু ধরনটা কিছুটা পাল্টেছে। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ব্যাটিং-ধর্মটা বর্তমানে কিছুটা এ রকম: বোলার যদি আমাকে গালাগাল করে, তা হলে ওকে ‘খুন’ করতে নামব। কথাবার্তা থামিয়ে চুপ করিয়ে দেব। মুখটা কম চলবে, বেশি চলবে ব্যাট। উদাহরণজয়পুরের শেন ওয়াটসন। অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডারের মুখ চলেছে বিরাটকে দেখে। উত্তরে ওয়াটসন নির্মম ভাবে প্রহৃত হয়েছেন।
জয়পুর ‘ওপেনার’ রোহিত শর্মাকে যে নবজন্ম দিয়ে গেল, বুধবারের পর তা নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। ভারতবর্ষও মোটামুটি জেনে গেল ওপেনিং স্লটে তাঁর বদলে বীরু-গোতির কাউকে ঢোকানোর দাবি ওঠা অন্তত কিছু দিনের জন্য বন্ধ। কিন্তু ‘নবজন্মে’-র খোঁজে রোহিতের নিরন্তর খাটুনির খবর রাখেন ক’জন? যে রোহিত একটা সময় প্র্যাক্টিসে আসাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ওজন বাড়িয়ে ফিটনেসকে ভয়াবহ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিলেন, ওই একই লোক এখন নাকি নেটে পড়ে থাকেন চার-পাঁচ ঘণ্টা! রোজ দু’বেলা!
কোচেদের টোটকা
আগ্রাসনটা নিয়ন্ত্রণ
করতে হবে। মুখ বন্ধ
রেখে ব্যাটে জবাব দাও।
অন সাইডে খেললে
ব্যাটের মুখ অনে।
অফে খেললে থাকবে অফে।
অযথা ডিফেন্সিভ
হওয়ার মানে নেই।
নিশ্চিন্তে স্ট্রোক নাও।
ভারতীয় ক্রিকেটের উপরোক্ত তিন মহাতারকার জয়পুর-কীর্তি যদি আসমুদ্রহিমাচলকে ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও মায়াবী ঘোরে আছন্ন করে রাখে, তা হলে বিরাট-শিখর-রোহিতের সাম্প্রতিক সাধনার কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। দিল্লি এবং মুম্বইয়ে তাঁদের কোচেদের ফোন করে যা পাওয়া গেল। এবং সে সব শুনলে এ দিন বিকেল নাগাদ মোহালিতে ঢুকে পড়া অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক জর্জ বেইলির আরও ক’টা বাড়তি বিয়ারের বোতল লাগত কে জানে!
কী রকম?
বেশি পিছোতে হবে না। গত গণেশ পুজোর দিনই ‘গুরু’ দীনেশ লাডের বাড়ি গিয়েছিলেন রোহিত। এক ফাঁকে বলেও ফেলেছিলেন, সবই হচ্ছে। শুধু মোক্ষম সময়ে জঘন্য শট খেলে আউট হয়ে যাচ্ছি। কী করা যায়? “আমি ওকে শুধু বলেছিলাম, যদি অনে খেলো, তা হলে দেখো ব্যাটের মুখ যেন অনের দিকে থাকে। অফে খেলতে চাইলে, অফে,” মুম্বই থেকে ফোনে বলছিলেন দীনেশ। যিনি প্রিয় ছাত্রের ওঠাপড়া দেখেছেন খুব কাছ থেকে। দেখেছেন একটা সময় যে ছেলের নৈশজীবন নিয়ে মিডিয়ায় তীব্র লেখালেখি চলত, সেই একই ছেলের বর্তমান ‘টু ডু’ লিস্টে থাকছে চোখ বন্ধ করে ধ্যান! “ও খুব ছোটবেলায় ওপেন করত। কিন্তু গত কাল যা খেলল, সেটা একজন পারফেক্ট ওপেনারের ইনিংস। স্পিনারদের কী ভাবে ছাড়ছিল দেখেছেন?”
এবং রোহিতের কোচ ছাত্রের পারফরম্যান্সে যতটা খুশি, কথা বলতে বলতে এক সময় শিখরের ‘দ্রোণাচার্য’-কে ঠিক ততটাই বিরক্ত মনে হল। “বারবার ওকে বলেছি যে অযথা ডিফেন্সিভ শট খেলতে যেও না। কাল যেটা আউট হল, স্রেফ ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে। অথচ ওই একই বলে আগে ও স্টেপ আউট করে ফেলে দিয়েছে,” দিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন মদন শর্মা। যিনি ঠিক করেছেন ফোনে ছাত্রকে বলবেন যে, ব্যক্তিগত স্কোরটা নয় হোক কিংবা নিরানব্বই, নিশ্চিন্তে স্ট্রোকটাই খেলতে হবে। অন্য কিছু নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের আগে প্লাস্টিক বল নিয়ে পড়া কেন? শিখরের কোচের যুক্তিটা সহজ প্লাস্টিক বল আসে ডিউসের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত। এবং ডিউসের ক্ষেত্রে পায়ের অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য যে সময়টা থাকে, এখানে পাওয়া যায় তার অনেক কম। হালফিলে আবার আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণে যোগব্যায়ামও নাকি শুরু করেছেন শিখর। যেটা পুরোদমে চলছে এখন।
যদিও দিল্লিওয়ালাদের মানসিক কাঠিন্যের আরও একটা গূঢ় কারণ পাওয়া গেল। যেটা আবার শোনালেন বিরাটের কোচ রাজকুমার শর্মা। এবং কাঠিন্যের পিছনে আছে নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবেশ। উত্তরের ঠান্ডা আবহাওয়া, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ আর পিচের কারণে পাঁচশো রান খুব কমই হয়। বরং রঞ্জিতে একটা টিম একশো তিরিশে শেষ হয়ে গেলে অন্যটা বড়জোড় তুলতে পারে দেড়শো! এবং একদম গোড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধাঁচটা আলাদা বলে উত্তরের ছেলেদের কাঠিন্যটাও ভিন্ন। রাজকুমার বলছিলেন, “ঠিক এই জন্য বিরাট বা শিখরকে চাপের মুখে একই সঙ্গে সহজ ও কঠিন লাগে। তবে শিখর অনেক বেশি রিল্যাক্সড। বিরাট এখন বোলার খুব গালিগালাজ না করলে ধ্বংসের রাস্তায় যায় না। অনেক বকাঝকার পর যেটা ও এখন আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে। তাই গত কালের ইনিংসটার জন্য ওকে দশে দশ কেন, সম্ভব হলে তার চেয়ে বেশি দেব।”
তিন কোচের ডায়েরি তা হলে কী বোঝাচ্ছে?
বোঝাচ্ছে, অজিদের শর্ট পিচড ডেলিভারির পাল্টা উত্তর আগে থেকেই ছিল, পুণে ম্যাচটা ব্যতিক্রম। বোঝাচ্ছে, অস্ট্রেলীয়দের ‘বিখ্যাত’ স্লেজিংয়েও হয়তো আর কিছু হবে না।
শোনা গেল, শনিবাসরীয় ম্যাচের পিচেও যথেষ্ট নাকি বাউন্স আছে, বল ব্যাটে আসবে ভাল এবং জয়পুর না হলেও রানের বিশেষ পানভোজনের ব্যবস্থা থাকবে।
অন্য কেউ নন, মোহালি কিউরেটর দলজিৎ সিংহ-ই ইঙ্গিতটা ছেড়ে রাখলেন।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.