|
|
|
|
মাথায় হাত পুজো উদ্যোক্তাদের |
বৃষ্টিতে মেলা পণ্ড, স্টলের টাকা না পাওয়ায় সঙ্কট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পুজো শেষ। কিন্তু, চিন্তা যাচ্ছে কই!
শিল্পী-সহ পুজো বাবদ খরচার নানা অর্থ মেটাতে গিয়ে হিমশিম বড় পুজোর উদ্যোক্তারা। টান পড়েছে ভাঁড়ারে! কারণ, বৃষ্টির জন্য বিকিকিনিতে ভাটা। জেলার যে সব এলাকায় বড় পুজো হয়, সেখানে মেলা বসে। মণ্ডপের আশপাশের ফাঁকা এলাকায় থাকে ফাস্ট ফুড, ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম, ফুচকা, ভেলপুরি প্রভৃতির স্টল। থাকে নাগরদোলাও। পুজোর বাজেটের একটা অংশ আসে এই সব স্টল থেকে। স্টলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেন পুজো উদ্যোক্তারা। কোনও স্টল থেকে দিনপিছু ৮ হাজার টাকা আদায় হয়, আবার কোনওটা থেকে ৩ হাজারা। এক-একটি বড় পুজোর আশপাশে ৩০-৩৫টি স্টল থাকে। পুজোর বাজেট যেখানে ৯-১০ লক্ষ টাকা, সেখানে বাজেটের দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২-৩ লক্ষ টাকা আদায় হয় এই সব স্টল থেকে। কিন্তু, এ বার টানা বৃষ্টিতে মেলা পণ্ড হয়েছে। স্টলগুলোও সে ভাবে চলেনি। ফলে, স্টল মালিকরা চুক্তি মতো টাকা দিতে পারেননি। আর এতেই পুজো উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত। কী ভাবে সমস্ত শিল্পীদের পাওনা মেটানো হবে, তা ভাবতে গিয়ে আতান্তরে পড়েছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি ঠিক কী রকম?
খড়্গপুর শহরের বড় পুজোগুলোর মধ্যে সুভাষপল্লি সেবা সমিতির পুজো অন্যতম। এখানে বড় মাঠ রয়েছে। পুজোর ক’দিন এই মাঠে মেলা বসে। ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টিরও বেশি স্টল থাকে এখানে। এই স্টলগুলো থেকে ৪ লক্ষ টাকা মতো আদায় হয়। পুজো কমিটির দাবি, এ বার সেখানে আদায় হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস চৌধুরীর কথায়, সত্যিই আমরা বিপাকে পড়েছি। টানা বৃষ্টিতে সব পণ্ড হয়ে গেল। স্টলগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ আদায় হওয়ার কথা, তার নামমাত্র আদায় হয়েছে। এ বার কী হবে, কিছুই ভাবতে পারছি না। তিনি বলেন, “আমাদের মাঠে প্রচুর স্টল বসে। অনেক দর্শনার্থী আসেন। কয়েক লক্ষ আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল বিক্রি হয়। গেল বছর ১ লক্ষ ঠান্ডা পানীয়ের বোতল বিক্রি হয়েছিল। এ বার সেখানে মাত্র কিছু সংখ্যক বোতল বিক্রি হয়েছে। ফলে স্টলগুলো সে ভাবে চলেনি। তাই, স্টল মালিকেরা চুক্তি মতো টাকা দিতে পারছেন না। আর আমরাও তো জোর করতে পারছি না। চোখের সামনে দেখেছি, স্টলগুলো ফাঁকাই পড়েছিল।” পরিস্থিতি দেখে বোগদার বাবুলাইন পুজো কমিটি কিছু স্টলে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেদিনীপুর শহরের বড় পুজোগুলোর মধ্যে রাঙামাটি সর্বজনীন অন্যতম। এখানেও বড় মাঠে পুজো হয়। পুজোর ক’দিন মেলা বসে। থাকে ৫০টিরও বেশি স্টল। সেখান থেকে আদায় হয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শিবশঙ্কর দাসের কথায়, “স্টল মালিকেরা চুক্তি মতো টাকা দেননি। ফলে, স্টল থেকে আয়ও কম হয়েছে। এই ঘাটতি কী ভাবে মিটবে, সেটাই চিন্তার। খুব তাড়াতাড়ি আমরা আলোচনায় বসব। তেমন হলে সদস্যদেরই ফের কিছু চাঁদা দিতে হবে।” সদর শহরের বড় পুজোগুলোর মধ্যে বার্জটাউন সর্বজনীন অন্যতম। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা দুর্গাপদ চক্রবর্তী বলেন, “এ বার স্টল থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। যেটা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কথা ছিল। সে ভাবেই বাজেট তৈরি হয়েছিল। এখন বাকি যে টাকা কোত্থেকে আসবে!”
সারদা-কাণ্ডের পর এ বার শুরু থেকেই চিন্তায় ছিলেন জেলার বড় পুজোর উদ্যোক্তারা। কারণ, বেশ কয়েক বছর ধরে যে সব সংস্থা পুজোয় স্পনসর করে এসেছে, সারদা কাণ্ডের পর তাদের একাংশ হাত তুলে নিয়েছিল। জানিয়ে ছিল, গেল বছর স্পনসর বাবদ যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে, এ বার তা দেওয়া সম্ভব নয়। বাজারে মন্দা চলছে। প্রতিটি পুজো কমিটি এলাকার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। বাসিন্দারা যে যাঁর সাধ্য মতো চাঁদা দেন। সঙ্গে সদস্য চাঁদা রয়েছে। কিন্তু, এই দিয়ে তো আর বড় বাজেটের পুজো করা সম্ভব নয়। বাড়তি টাকা আসে নানা সংস্থার ফেস্টুন-ফ্লেক্স-বিজ্ঞাপন থেকে। পাশাপাশি থাকে স্টল থেকেও বাজেটের একটা অংশ আসে। ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতেও উদ্যোক্তারা সে ভাবে বাজেট কাঁটছাঁট করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে প্রতিযোগিতা থাকেই। অধিকাংশ পুজো মণ্ডপের আশপাশ রঙবেরঙের আলো দিয়ে সাজানো হয়। কোথাও টুনি বাল্ব, কোথাও বা এলইডি আলোর ঝলকানি চোখে পড়ে। এ বারও পড়েছে। তবে, টানা বৃষ্টিতে সবই সাজগোজই পণ্ড হয়েছে। অষ্টমীতে ঘুর্ণিঝড় দিয়ে দুর্যোগ শুরু হয়। তারপর থেকে টানা বৃষ্টি চলতে থাকে। নবমীর দিন ৪৩.৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। দশমীর দিন ৬.৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ঝড়বৃষ্টির ফলে বড় মণ্ডপগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সব মিলিয়ে, পুজো শেষ। কিন্তু, শুরু অন্য চিন্তার! |
|
|
|
|
|