হাঙর ধরতে অবাধে ডলফিন হত্যা
ল কেটে তরতরিয়ে এগোচ্ছিল নৌকোটা। আর পাশে পাশে ওরা। জলের মধ্যে অল্প উঁচিয়ে পাখনাগুলো। কখন লাফ দেবে ওরা? কখন জল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে? কখন দেখা যাবে সেই মনোরম দৃশ্য?
ডলফিনের দল দেখার জন্য নৌকায় অনেক উৎসাহী চোখ অপেক্ষায়। প্রশান্ত মহাসাগরে পেরুর মৎস্যজীবীদের নৌকায় সওয়ার হয়েছেন ওঁরাও। ব্রিটেনের একটি কাগজের এক জন পরিবেশ-সাংবাদিক, সঙ্গে আছেন চিত্র-সাংবাদিকও। কিন্তু চোখের পলকে মনোরম দৃশ্যটা হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর। যা দেখে শিউরে উঠলেন ওঁরা। ডলফিনরা যখন জলে খেলায় মগ্ন, নৌকার উপরে তখন হারপুনে শান দিচ্ছিলেন এক মৎস্যজীবী। আর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছেন ডলফিনের চলার ছন্দ। কয়েক মুহূর্ত পার। তার পরেই ৩০ কিলোগ্রাম ওজনের ভারী হারপুন আছড়ে পড়ল একটা ডলফিনের পিঠে। নৌকার উপরে তখন সোল্লাসে ওই মৎস্যজীবীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাঁর বন্ধুরা।
“হারপুনে প্যাঁচানো দড়ি বেঁধে ফেলেছে জখম প্রাণীটাকে। ভেঙে গিয়েছে মুখের সামনের অংশ। আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছে ডলফিনটা। সমুদ্রের জল গাঢ় লাল। নৌকা থেকে দু’জন দড়ি টেনে সামনে এগিয়ে আনছে তাকে।
পেরুতে ডলফিন শিকার। ছবি: ডেলি মেলের সৌজন্যে।
তখনও বাঁচার কী মরিয়া চেষ্টা,” বলছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। মৃতপ্রায় ডলফিন যখন নৌকার একেবারে কাছে, একটা চকচকে স্টিলের হুক গেঁথে দেওয়া হল তার মাথায়। আর হারপুন যেখানে বিঁধেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে নাড়িভুঁড়ি। নৌকায় টেনে তোলার পরেও মাঝে মাঝে ছটফট করছিল ডলফিন। নৌকায় এক জন তখন ছুরিতে ধার দিয়ে তৈরি তার পাখনা কেটে দেওয়া জন্য। কাজ সেরে পাখনা ছুড়ে ফেলে দেওয়া হল জলে।
শিকার-পর্ব শেষ। যদিও ১৯৯৭ সাল থেকে পেরুতে ডলফিন মারা নিষিদ্ধ। পরোয়া করে কে? মৎস্যজীবীরা কি জানেন না সে কথা? জানেন বইকি। তাঁরা সপাটে বলেন, “ডলফিন শিকার বেআইনি। কিন্তু এটা আমাদের প্রয়োজন।” কী প্রয়োজনে পেরুর মৎস্যজীবীরা প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার ডলফিন মেরে চলেছেন? উত্তরে জানা যাচ্ছে আরও একটা গল্প।
পেরুর এই মৎস্যজীবীদের মূল লক্ষ্য বিলুপ্তপ্রায় হাঙর। আর হাঙরকে টোপ দিতে দরকার ডলফিন। কারণ হাঙরের খাবার জোগাড় করতে অনেক খরচ হয়ে যায়। ডলফিন সহজলভ্য। হাঙরের জন্য লোভনীয় খাবার। তাই মৎস্যজীবীদের কোপ ওদের উপরেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে এখন ডলফিন হত্যায় এগিয়ে পেরু। আর বিলুপ্তপ্রায় হাঙর মেরে লাভের মুখ দেখেন মৎস্যজীবীরা। বন্দরে ওদের জন্য অপেক্ষা করেন ব্যবসায়ীরা। যাদের হাত ধরে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তে ডিনার প্লেটে পৌঁছয় সুস্বাদু হাঙরের মাংস। আর অসাধারণ স্যুপ তৈরির জন্য হাঙরের পাখনা পাড়ি দেয় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়।
ওই সাংবাদিক চাক্ষুষ করেছেন হাঙর শিকারও। একই ভাবে হুক গাঁথা হাঙর টেনে তোলা হল। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “তখন তার মধ্যে হাঙরসুলভ কোনও আভিজাত্যই অবশিষ্ট নেই। প্রায় অচেতন।” তাকে হিঁচড়ে টেনে তোলা হল নৌকায়। বাকি মৎস্যজীবীরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন ওটার উপরে। মুখের সামনের পুরো অংশটা কেটে দিলেন এক জন। এর পরে পাতলা লোহার রড দিয়ে মেরুদণ্ড বরাবর চিরে দেওয়া হল তার দেহ। পেটটা কাটতেই আবার ধাক্কা খেলেন সাংবাদিক। পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে এক ডজনেরও বেশি ছোট্ট হাঙর। সাংবাদিক বললেন, “গা গুলিয়ে উঠছিল। তবু ওদের বললাম যে বাচ্চাগুলোর দেহে তখনও প্রাণ আছে, ওদের অন্তত জলে ফেলে দাও, যদি বেঁচে যায়।” মৎস্যজীবীরা শুনেই হাসিতে ফেটে পড়লেন। তবে সাংবাদিকের অনুরোধ রেখে ছোট হাঙরদের ফেলে দিলেন জলে।
প্রশান্ত মহাসাগরের জলে শিশু-হাঙরের সাঁতার দেখে আশায় বুক বাঁধেন সাংবাদিক। শেষমেশ হয়তো পারবে না। কিন্তু একটা সুযোগ তো পেল। যদি বাঁচে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.