চুক্তি নিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে বিবাদ প্রাণিবন্ধুদের

চুক্তি স্বাক্ষর করাকে কেন্দ্র করে রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সঙ্গে প্রাণিবন্ধুদের বিবাদ বেধেছে।
রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এক জন করে প্রাণিবন্ধু রয়েছেন। তাঁদের নিয়োগ করা হয় ২০০২ সালে। গ্রামে গৃহপালিত পশু, বিশেষ করে গরু-ছাগলদের কৃত্রিম প্রজননের কাজ করেন তাঁরা। এই সব পশুদের স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করেন বলে প্রাণিবন্ধুদের দাবি।
প্রাণিবন্ধুদের অভিযোগ, সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর তাঁদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে চাইছে। তা তাঁদের স্বার্থবিরোধী। চুক্তির কয়েকটি ধারা বাতিলের দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনেও নেমেছেন তাঁরা। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের হয়ে প্রাণিবন্ধুদের কাজকর্ম যে দফতর তত্ত্বাবধান করে, সেই পশ্চিমবঙ্গ গো-সম্পদ মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক সুভাষ বসুও চুক্তিটি নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দফতরের সঙ্গে প্রাণিবন্ধুদের যে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার কথা, তা পর্যায় ক্রমে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রাণিবন্ধু বেঁকে বসায় চুক্তির শেষ দিন বাড়ানোর চেষ্টা করার কথা ভাবা হচ্ছে।”

প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রের খবর, মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ১৮ বছরে উর্দ্ধে যুবকদের চুক্তির ভিত্তিতে ওই পদে নিয়োগ করা হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অবশ্য অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণদেরও নিয়োগ করা হয়। তাঁদের ৬ মাসের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। প্রাণিবন্ধুদের দাবি, নিয়োগের সময়ে তাঁদের বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন মেনে স্বনিযুক্তি প্রকল্পের আওতায় তাঁরা স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন। তাঁদের রেজিষ্ট্রেশন নম্বরও দেওয়া হবে। কিন্তু প্রাণী বন্ধুদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার স্থায়ী করা তো দূরের কথা, গত ৫ জুলাই থেকে নতুন করে চুক্তি করে তাঁদের কর্মজীবনের ক্ষতি করতে চাইছে।
—ফাইল চিত্র।
বর্ধমান জেলা প্রাণিবন্ধু সংগঠনের সভাপতি চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এই চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। কারণ এই চুক্তি সাক্ষর করলে প্রাণিবন্ধুরা ভবিষ্যতে কখনও নিজেদের সরকারি কর্মচারি বা পশু চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিতে পারবেন না। অথচ সরকারই পশুদের চিকিৎসা করার দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “নতুন চুক্তিতে এ কথাও রয়েছে প্রাণিবন্ধুরা সরকারের কাছ থেকে কোনও ধরনের ভাতা, পারিশ্রমিক বা সুবিধা দাবি করতে পারবেন না। উপরন্তু তাঁদের প্রতিদিনই পরিষেবা দিতে হবে।” ঝাড়খন্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে একই ধরনের কাজ করে প্রাণিবন্ধুরা মাসে ৭ হাজার টাকা করে ভাতা পান বলে চন্দনবাবুর দাবি।
চুক্তিপত্রে আরও যা রয়েছে তা হল, হিমায়িত গো-বীজ-সহ কৃত্রিম প্রজননের জন্য যে সব উপকরণ ও সরঞ্জাম দরকার তা প্রাণিবন্ধুদের মাত্র একবারই বিনামূল্যে দেওয়া হবে। পরবর্তিকালে এই সংক্রান্ত যে সব উপকরণ এবং সরঞ্জাম দরকার হবে তা নিজের খরচেই কিনতে হবে। ব্যয়ে করতে হবে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য ৩ লিটার তরল নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয়। চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে এই নাইট্রোজেন পেতে হলে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যক হিমায়িত গো-বীজ(স্ট্র) সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিকের কাছ থেকে নিতেই হবে। না-হলে প্রাণিবন্ধুকে আলাদাভাবে তরল নাইট্রোজেনের দাম দিতে হবে।
একবার চুক্তি সাক্ষর করলে তার মেয়াদ থাকবে তিন বছর। এই চুক্তিকে মানতে অস্বীকার করে প্রানীবন্ধুরা জানিয়েছেন, এটা সাক্ষর করে কাজ করা সম্ভব নয়। তাঁদের সাফ কথা, তাঁরা গ্রামেগঞ্জে ঘুরে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দুধের উৎপাদন বাড়াবেন, অথচ নুন্যতম পারিশ্রমিকটুকুও পাবেন না, এটা হতে পারে না।
বর্তমানে তাঁরা কী পদ্ধতিতে কাজ করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রাণিবন্ধুরা জানিয়েছেন, এখনও তাঁরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট ভাতা বা পারিশ্রমিক না-পেলেও কাজের নিরিখে তাঁদের উৎসাহভাতা দেওয়া হতো। নতুন চুক্তিতেও তো উৎসাহ ভাতা দেওয়ার কথা বলা আছে। তা হলে সমস্যা কোথায়? এ বিষয়ে প্রাণিবন্ধুরা জানান, নতুন চুক্তিতে এই উৎসাহভাতার বিষয়টি সরকারের ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণিবন্ধুরা এই উৎসাহভাতা দাবি করতে পারবেন না। অথচ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে না পারলে তাঁদের স্বীকৃতি বাতিল করা হওয়ার কথাও নতুন চুক্তিতে রয়েছে বলে প্রাণিবন্ধুরা জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ গো-সম্পদ বিকাশ সংস্থার মুখ্য নির্বাহী আধিকারিকের অবশ্য পাল্টা দাবি, কাজটি অনেকটা স্বনিযুক্তি প্রকল্পের মত। প্রকল্পের মতই। সরকার তাঁদের স্বীকৃতি দিচ্ছে। প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। উপার্জনের রাস্তা তাঁদের নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হবে। তবে নতুন চুক্তি নিয়ে বেশ কিছু জেলায় প্রানীবন্ধুরা নানা দাবি পেশ করছেন।” নতুন চুক্তি সাক্ষর করলেও প্রাণিবন্ধুরা আগের মতোই রোজগার করতে পারবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বর্তমানে কীভাবে রোজগার করতে পারেন প্রাণিবন্ধুরা? এ বিষয়ে গো-সম্পদ বিকাশ সংস্থার মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক জানান, সরকারি গো-প্রজনন কেন্দ্রে নিজের গরু নিয়ে গিয়ে প্রজনন করাতে হলে পশুপালক ২০ টাকা দেন। কিন্তু প্রাণিবন্ধুদের কাছে পশুপালকেরা যখন এই কাজটি করাতে যান তা হলে তিনি সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি টাকা পশুপালকদের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। এর ফলেই তাঁদের রোজগার অনেক বেশি বলে তাঁর দাবি। তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে অবশ্য প্রাণিবন্ধুরা জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বাড়তি কিছু তাঁরা নেন না। বাড়তি টাকা চাইলেই পশুপালকেরা সরাসরি সরকারি গো-প্রজননকেন্দ্রেই চলে যান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.