|
|
|
|
ঢঙের নাউ বাঁচানোর উদ্যোগ পুজোকর্তাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
হারিয়ে যেতে চলেছে প্রাচীন লোকঐতিহ্য ‘ঢঙের নাউ’।
করিমগঞ্জ জেলার কালীগঞ্জ এলাকার বাঙালিদের কাছে পুজোর বড় আকর্ষণ ছিল এটিই। কেউ কেউ নাম দিয়েছেন ‘অর্ধার নাউ’ও। ইংরেজিতে ‘ওয়াটার ট্যাবলো’।
ঢঙের নাউ কী?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩-৪ দাঁড়টানা নৌকা পাশাপাশি রেখে তার উপর বাঁশ-কাঠের মঞ্চ তৈরি করা হয়। দশমীতে তা নিয়ে যাওয়া হয় যদুটিলার বিসর্জন ঘাটে। সঙ্গে থাকে ট্যাবলো। মহিষাসুর বধ, রাম-রাবণের যুদ্ধ আরও কত কী থাকে তাতে। নরসিংহ অবতার, জটায়ু, বাঘও সাজেন কেউ কেউ। নারী চরিত্রে পুরুষরাই। কাঁকড়া নদীর দুই তীরের মানুষ ভিড় জমান কুশীলবদের দেখতে। মির্জানগর, রামপাশা, বরাতেলি, খালেরপার, নয়টিলা—আগে সব জায়গা থেকে ‘ঢঙের নাউ’ আসত যদুটিলায়। এ বার সাকুল্যে এসেছে শুধু চণ্ডীদাস এলাকার ট্যাবলো। গত বছর থেকে এরাই সবেধন নীলমণি।
কবে এর সূচনা বা কী ভাবে তা চালু হল, সে ইতিহাস কারও জানা নেই। ৫৬ বছরের জয়ন্তবিকাশ পুরকায়স্থ, ষাটোর্ধ্ব জিতেন্দ্র দাস, কৃষ্ণ পালরা বললেন, “ছোটবেলা থেকেই তো দেখে আসছি।”
কেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য? চণ্ডীদাস সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক জিতেন্দ্র দাস জানান, আগে রাস্তাঘাট ছিল না। নদীপথেই প্রতিমা নিয়ে আসা হত বিসর্জনঘাটে। একসঙ্গেই আসত ‘ঢঙের নাউ’। এখন কাঁকড়া নদীর গভীরতা কমছে। অক্টোবরে জল থাকে না বললেই চলে। ফলে, সড়ক পথেই যাতায়াত চলে। তবু তাঁরা চান
পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে। তাই আগের মতোই ঢঙের নাউ নিয়ে আসা হয় এখনও।
দশমীর ওই আকর্ষণ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন করিমগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। বাগবাড়ি সর্বজনীন পুজো কমিটি তাই এ বার দশমীর পরই জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছর ‘ঢঙের নাউ’ বের করবেন তাঁরাও।
কমিটির কর্মকর্তা জয়ন্তবিকাশ পুরকায়স্থ বললেন, “কাঁকড়া নদীর উপর কয়েকটি সেতু তৈরি হওয়ায় নৌকায় প্রতিমা ও ট্যাবলো নিয়ে আসা সমস্যার। তবু ঐতিহ্য ধরে রাখতে সে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।”
কীলাগঞ্জের প্রবীণ নাগরিক কৃষ্ণ পাল আশাবাদী, আরও এক-দুটি কমিটি এগিয়ে এলেই পুরনো চেহারায় ফিরবে করিমগঞ্জের ওয়াটার ট্যাবলো—‘ঢঙের নাউ’।
বরাক উপত্যকার লোক-গবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, “পুজোর সময় অন্যত্রও ‘ঢঙের নাউ’ করা গেলে শিল্পটি বেঁচে যাবে।” |
|
|
|
|
|