২৭ ফুটের আড়বাঁশি তৈরি করে,
বাজিয়ে নজির গড়লেন পুষ্পেন্দ্র
নের কোণে কোথাও একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ রয়েছে বইকি। আর হবে নাই বা কেন? দ্বাপরের কৃষ্ণের চেয়ে কলির কেষ্টর বাঁশি যে কয়েক গুণ বেশি লম্বা! কিন্তু দেশের দীর্ঘতম বাঁশির স্রষ্টা এখনই থামছেন না। পরের নিশানা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁশির বাঁশুরিয়া হয়ে আরাধ্য কৃষ্ণের চরণেই সেই গৌরব নিবেদন করবেন।
ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস্-এ নাম তোলা পুষ্পেন্দ্র বোরার বাড়ি তেজপুরের দা-বেসারিয়া গ্রামে। কৃষ্ণসাধক, সরল, সাধাসিধা মানুষটি বরাবর এমন কিছু করে দেখাতে চেয়েছিলেন, যাতে তাঁর অকিঞ্চিৎকর অস্তিত্বটি মানুষের মনে স্থায়ী হয়ে থেকে যায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেই চমক দেখালেন বটে! তিন মাসের মধ্যে গড়ে ফেললেন ২৭ ফুট লম্বা বাঁশি, একেবারে আড়বাঁশি। ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এর পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
পুষ্পেন্দ্রবাবুর বানানো বাঁশের বাঁশি শুধুই বাহারের সামগ্রী নয়। তা রীতিমতো বাজানোও যায়। বৃদ্ধ বাঁশুরিয়ার কথায়, “ছোট থেকেই সুরের কারবারি আমি। আচমকাই মাথায় ঢুকে যায় বড় বাঁশি তৈরির চিন্তা। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। সঠিক বাঁশের সন্ধান করা, ঠিকঠাক জ্যামিতিক নক্সা গড়া, বাঁশ মাপমতো কাটা, ছাঁটা, ফুটো করায় বিস্তর পরিশ্রম হয়েছে।” কেবল দেখতে বড় হলেই হবে না, সে বাঁশি বাজতেও হবে। তিন কেজি ১০০ গ্রামের ওজনের বাঁশি বাজানো কী মুখের কথা? দুই দিকে বাঁশের খুঁটিতে ঠেকান দিয়ে তাতে সুর তুলতে হয়। পুষ্পেন্দ্রবাবুর নিষ্ঠা ও হাতের যাদুতে, ‘মেগা বাঁশি’ সুরের বাহারেও নিখুঁত।
পুষ্পেন্দ্রবাবু কাজ করতেন অসম সেচ বিভাগে। তবে ছোট থেকেই তিনি বাঁশি ও বাদ্যযন্ত্র অন্ত প্রাণ। ছ’বছর বয়সেই গ্রামের নামকরা বাঁশুরিয়া বদন শইকিয়ার বাঁশি শুনে সুরের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়। একদিন বদন তাঁর ভাঙা বাঁশিটি জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই বাঁশি কুড়িয়ে নিয়েই প্রথম ফুঁ। মায়ের কন্ঠে শোনা ‘ফাগুনোর পোসুয়া’ গানটি বাঁশিতে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। একলব্যের মতোই, বদন শইকিয়ার শিষ্য হয়ে ওঠেন তিনি। আজও বদনবাবুকে গুরু দ্রোণাচার্য বলেই মান্য করেন সত্তোরর্ধ পুষ্পেন্দ্র। ছোট থেকেই বিহু দলের সঙ্গে রাজ্য ঘুরে বাঁশি ও অন্যান্য বাজনা বাজানো ছিল তাঁর নেশা। বাজনা সারানোতেও বুৎপত্তি জন্মায় তাঁর। বাজনার অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেন তাঁর নিজের হাড়-পাঁজর।
এই বয়সেও, আগামী প্রজন্মকে দেশি বাদ্যযন্ত্র তৈরি শেখাতে ও তার তালিম দিতেই তাঁর সময় কাটে। ঘরের চারিদিকে ছড়িয়ে পেপা, একতারা, দোতারা, ঢোল, গগনা, ডগর, সুতুলি, কালি। তাঁর কন্ঠে অনায়াসে খেলে যায় কীর্তন, ঘোষা, বরগীত আর ভাওনার বোল।
নিজের দুই মেয়েকে শাস্ত্রীয় সংগীত, রাভা সংগীত প্রভৃতির তালিম দেওয়াচ্ছেন তিনি। তবে দেশের বৃহত্তম বাঁশি বানিয়ে কিন্তু থামছেন না পুষ্পেন্দ্র বোরা। এ বার তাঁর নজর বিশ্বে প্রথম হওয়ার দিকে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা, বাজাবার যোগ্য বাঁশির দৈর্ঘ্য মাত্র ১০.৬৬ ফুট। যা রয়েছে চিনে। সে ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পুষ্পেন্দ্রবাবুর বাঁশি চিনকে হারিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বড়। কিন্তু তিনি শুনেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বাঁশির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। তাই পুষ্পেন্দ্রবাবু আপাতত ৪২ ফুট লম্বা বাঁশি তৈরির কাজে মগ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.