|
|
|
|
অহোম রাজাদের মৈদাম সংরক্ষণে তৎপর কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
মিশরের পিরামিডের ধাঁচে অসমের প্রাচীন ওই রাজবংশের রাজাদের সমাধিস্থলে তৈরি হত ‘মৈদাম’। মাটির নীচে থাকত, সুড়ঙ্গ, একাধিক প্রকোষ্ঠ। মিশরের ফারাওদের মতো, এখানেও রাজাদের মরদেহের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, সহচর, পোষ্য, প্রচুর ধনরত্নও মৈদাম-এ সমাধিস্থ করার রীতি ছিল।
শিবসাগরের চড়াইদেও এলাকায় অহোম রাজাদের সেই ‘পিরামিড’গুলি বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করতে তৎপর হল কেন্দ্র।
মাজুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হতে না-পারায়, এশিয়ার বৃহত্তম নদী-দ্বীপকে ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকাভুক্ত করতে রাজি হয়নি ‘ইউনেসকো’। তাই অসমের তৃতীয় (কাজিরাঙা, মানসের পরে) ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ তকমার পেতে এ বার শিবসাগরের মৈদামকে তুলে ধরা হল। |
শিবসাগরে অহোম রাজাদের মৈদাম। —নিজস্ব চিত্র। |
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের গুয়াহাটি শাখার কর্তা এস এস গুপ্ত জানান, মৈদাম-সহ অহোম রাজবংশের আমলে তৈরি স্থাপত্যগুলিকে ইউনেসকো-র ‘কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ’ বিভাগের অধীনে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা চলছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফেও এ নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি’র কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে, চড়াইদেও মহকুমায় কয়েকটি মৈদামের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সংরক্ষিত মৈদামগুলির পাশাপাশি, অসংরক্ষিত মৈদাম ও কারেংঘর (রাজপ্রাসাদ), তলাতলঘর (শস্যভাণ্ডার), রংঘর (খেলার জায়গা), শিবদোল, জয়সাগর এবং গৌরীসাগর মন্দিরগুলিকে ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় রাখার
প্রস্তাব রয়েছে।
ওই সরকারি অফিসার জানান, রাজ্যে ৭৯টি সংরক্ষিত প্রত্নস্থল এএসআই গুয়াহাটি শাখার আওতায় রয়েছে। আগে এ রাজ্যে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছিল ১ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে তা দ্বিগুণ হতে চলেছে। শিবসাগরের শিব দোল, গৌরীসাগর ও গৌরীসাগরের মন্দিরে সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এ বার মৈদামগুলিও ঠিক করা হবে।
দক্ষিণ চিনের মোং মাও লিং থেকে এসে শিবসাগরে (তৎকালীন রংপুর) রাজধানী গড়েন প্রথম অহোম রাজা স্যুকাফা (১২২৮-৫৬)। ওই বংশের রাজাদের সমাধিস্থল ছিল শিবসাগর শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে চড়াইদেও এলাকায়। মিশরের পিরামিডের মতোই, রাজার মরদেহের উপরে এখানে মৈদাম স্থাপিত
হত। মাটির নীচে থাকত, সুড়ঙ্গ, একাধিক প্রকোষ্ঠ। অর্ধগোলাকার সমাধির মাথায় থাকত ‘চৌ-চালি’। আটকোণা বেঁটে দেওয়ালে ঘেরা থাকত প্রতিটি মৈদাম। ইতিমধ্যে বৃহত্তম ২ নম্বর মৈদামটি খনন করে, হাতির দাঁত ও কাঠের বাক্স, তামার বাসন, ঝিনুক, সোনার অলঙ্কার, কামানের গোলা-সহ বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে পাঁচটি মাথার খুলি, হাড়ও।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, চড়াইদেওতে ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় দেড়’শ মৈদাম রয়েছে। সে গুলির চারদিকে দেওয়াল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ওই আমলের ইটের সঙ্গে মিলিয়ে বিশেষ ধরনের ইট তৈরি করে নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। |
|
|
|
|
|