|
|
|
|
পুরনো-নতুনের দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে সিপিএমকে |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
সামনের লোকসভা ভোট কঠিন লড়াই। সে লড়াইয়ের সৈনিক বাছা হবে কাদের, সেই প্রশ্ন এখন ভাবাচ্ছে সিপিএমকে। কংগ্রেস সম্পর্কে মনোভাব নিয়ে বিতর্কের মতোই এই প্রশ্নেও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির দ্বন্দ্ব।
যে হেতু কঠিন লড়াই, তাই পুরনো অভিজ্ঞ মুখের উপরেই বেশি করে ভরসা রাখা যুক্তিযুক্ত হবে? নাকি পুরনো, প্রত্যাখ্যাত মুখ যথাসম্ভব ঝেড়ে ফেলে নতুন প্রার্থীদের উপরেই বাজি রাখার ঝুঁকি নেওয়া হবে? মূল বিতর্ক এই প্রশ্নেই। আগরতলায় আগামী ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা বেঁধে দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু কোনও অভিন্ন সূত্র সর্বত্র প্রার্থী মনোনয়নে আদৌ মেনে চলা সম্ভব হবে কি না, সন্দিহান দলের একাংশই! কেন্দ্রীয় কমিটির আলোচনাতেও চলতি বিতর্কের ছায়া পড়তে চলেছে বলে দলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত।
পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “আপাতত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে আমরা নজর রাখছি। অদূর ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতি কোন খাতে বইবে, তার পূর্বাভাস ওই নির্বাচন থেকেই অনেকটা পাওয়া যাবে। তার পরে ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে লোকসভা ভোটের জন্য দলের প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা ঠিক করা হবে।” এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রূপরেখা ঠিক করতে গিয়ে কী কী বিষয়ের উপরে জোর দেওয়া হবে? স্বচ্ছতার স্বার্থে দলের মধ্যে কেউ কেউ চাইছেন, তিন বার যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের এ বার তালিকার বাইরে রাখার একটা সাধারণ সূত্র মেনে চলা হোক। কিন্তু অভিন্ন সূত্র বার করতে গিয়েও পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের দু’রকম পরিস্থিতি জটিলতা তৈরি করছে!
কেরল সিপিএম গত বার লোকসভা ভোটেই বেশ কিছু নতুন মুখ আমদানি করেছিল। সে বার এলডিএফের ভরাডুবির বাজারে হাতে-গোনা যে কয়েকটি আসন বামেরা জিতেছিল, তার মধ্যেও সাফল্য পেয়েছিলেন যুব ও ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে-আসা প্রার্থীরা। পাঁচ বছর পরেই এখন আবার খুব বেশি প্রার্থী বদলানো প্রয়োজন বলে কেরল রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করছেন না। তা ছাড়া, কেরলের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাজ্যের ২০টা লোকসভা আসনের মধ্যে সিংহভাগই ঘরে তোলার আশা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এই অবস্থায় খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পক্ষপাতী নন দলের অনেকেই। যদি না ভি এস অচ্যুতানন্দন-পিনারাই বিজয়ন দ্বন্দ্ব শেষ মুহূর্তে কিছু হিসাব গোলমাল করে দেয়!
পশ্চিমবঙ্গের হাল আবার উল্টো! গত বার খারাপ হাওয়ার মধ্যে জেতা আসনের সবক’টিও এ বার ধরে রাখা যাবে কি না, সংশয় আছে! দলের একাংশ মনে করছেন, কিছু হারানোর নেই ধরে নিয়ে নতুন রক্তই এনে দেখা হোক। তাতে বরং মানুষের কাছে মুখ বদলের বার্তা দেওয়া যাবে। আবার দলের অন্য অংশের যুক্তি, কঠিন ভোটে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ বাহিনী নামিয়ে লড়াই কঠিনতর করে তোলার ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে কি? তার চেয়ে এলাকার খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবহিত, অভিজ্ঞ মুখদের রাখা হোক। তার সঙ্গেই কিছু নতুন মুখ এনে ৪২টি আসনে একটা ভারসাম্যের সূত্র মেনে চলা হোক।
এ রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এমনিতে চালু সূত্র হল, গত বারের জয়ী প্রার্থীকে আবার টিকিট দিতে হবে। আবার গত বার লড়ে হেরেছিলেন, এমন অনেককেই প্রার্থী করার প্রস্তাব প্রবল ভাবে আসবে। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কত মুখ বদল করা সম্ভব, ভেবে দেখতে হবে!” কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যেই কেউ কেউ অবশ্য এমনও বলছেন, গত বারের জয়ী বা পরাজিত প্রার্থীর সূত্র অন্ধ ভাবে এ বার মেনে না চললেও হয়। কারণ, আসনভিত্তিক পরিস্থিতি পাঁচ বছরে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তড়িৎ তোপদার, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীর মতো সিপিএমের চেনা সাংসদ হিসাবে অতীতে প্রথম সারিতে যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের অনেকেই এখন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তাঁদের আবার ভোটের ময়দানে এনে না ফেলে নতুন করেই ভাবা হোক।
ত্রিপুরা সিপিএমের অবশ্য এত সব ভাবনা নেই! রাজ্যের দু’টি আসনই ধরে রাখার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। ত্রিপুরা সিপিএম বরং দলের অর্ধ শতকের ইতিহাসে এই প্রথম আগরতলায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আয়োজন করা নিয়ে বেশি ভাবছে! দলের রাজ্য দফতরে না আগরতলারই অন্যত্র বৈঠকের স্থান নির্বাচন করা যায়, ভাবনাচিন্তা চলছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারের সহাস্য মন্তব্য, “ব্রডগেজ রেললাইনটা থাকলে ত্রিপুরা পার্টি কংগ্রেসই করে ফেলতে পারত!” |
|
|
|
|
|