পাণ্ডাদের হাতে হেনস্থার নালিশ, অবরোধ
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
পুজো দিতে এসে তারাপীঠ মন্দিরের পাণ্ডাদের কাছে হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন তারাপীঠ ঢোকার মুখে রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তার উপরে, আটলা-কবিচন্দ্রপুর মোড়ে ঘণ্টাখানেক ধরে ওই অবরোধ চলে। অবরোধের জেরে অবশ্য খানিকটা নাকালের মধ্যে পড়েন মা তারার দর্শনার্থীদের একাংশও। শেষমেশ তারাপীঠ ফাঁড়ির পুলিশ এসে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা আন্দোলন থেকে বিরত হন। এ দিকে তারাপীঠ মন্দির কমিটির পক্ষে তারামাতা সেবাইত সঙ্ঘের আবার দাবি, হেনস্থার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। অবরোধকারীরাই বরং বেলাইন দিয়ে পুজো দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। উভয়পক্ষই পুলিশের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ দু’পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখছে। |
|
অবরোধ ডিঙিয়ে তারাপীঠে পুজো দিতে যাচ্ছেন পুণ্যার্থীরা। শুক্রবার আটলা মোড়ে। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথা মাফিক আশ্বিন মাসের চতুর্দশী তিথিতে তারা মায়ের আর্বিভাব উপলক্ষে বিগ্রহকে মূল মন্দির থেকে মন্দির চত্বরে থাকা ‘বিরামমঞ্চ’ নামে একটি মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। এই একটি মাত্র দিনই বিগ্রহের মুখ পশ্চিম দিকে করে রাখা হয়। বছরের বাকি সময় মুখ থাকে উত্তর দিক করে। এই উৎসব উপলক্ষে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার পাশাপাশি দূর-দূরান্তের পারিবারিক দুর্গাপুজোর উদোক্তারাও তাঁদের মানসিক পুজো নিবেদন করতে আসেন। ফলে সকাল থেকেই তাঁরা মন্দিরে জড়ো হতে শুরু করেন। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রামপুরহাট থানার আটলা গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব সরকার, জয়দেব সরকারদের অভিযোগ, “প্রাচীন ও পারিবারিক প্রথা মেনে পুজো দেওয়ার জন্য ভোরবেলাতেই মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু পাণ্ডাদের একাংশ আমাদের পুজো দিতে বাধা দিয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। আমরা ওই পাণ্ডাদের বোঝানোর চেষ্টা করি, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চতুর্দশী তিথির পুজো সেরে ফেলতে হবে। তাঁরা সেই অনুরোধে কান দেননি। ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে স্থানীয় মানুষদেরকে বাইরের মানুষ ভেবে পুজোর জন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন।” আটলা গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা সনৎ ভাণ্ডারির অভিযোগ, “তারাপীঠের সেবাইতরা এখন পয়সা ছাড়া কিছু বোঝেন না। তারা স্থানীয় মানুষদের ভিআইপি গেট দিয়ে টাকার বিনিময়ে ঢুকতে বাধ্য করেছে।” সনৎবাবুর দাবি, দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষ পাণ্ডাদের এই অত্যাচার সহ্য করে আসছেন। কিন্তু তাঁরা অবরোধ করে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছেন। |
আবির্ভাব তিথি |
|
তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মা তারাকে বিরামমঞ্চে
নিয়ে এসে পুজো করা হয়। শুক্রবার তারাপীঠে। |
এ দিন তারাপীঠ মন্দিরে যে পাণ্ডার দায়িত্বে পুজো চলছিল, সেই সেবাইত রাজা চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “আমার সঙ্গে কারও গণ্ডগোল হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” অন্য দিকে, তারামাতা সেবাইত সঙ্ঘ তারাপীঠ ফাঁড়িতে পুজো দিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ ভাণ্ডারির নামে প্রণামী বাক্স থেকে টাকা ছিনতাই করার অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্তের অবশ্য দাবি, “পাণ্ডারা নিজেদের অপরাধ আড়াল করতেই ঘটনার অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।” তিনি পুলিশের কাছে একজন পাণ্ডার নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ দিকে সঙ্ঘের সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “তারাপীঠে সারা দেশ থেকে মানুষ পুজো দিতে আসেন। সুষ্ঠু ভাবে পুজো দেওয়ার জন্য বিরাম খানায় ৬টি গেট তৈরি করা হয়েছে। তিনটি দিয়ে পুণ্যার্থীরা ঢোকেন। বাকিগুলি দিয়ে বেরিয়ে যান।” তাঁর দাবি, “রাত তিনটে থেকে এই ব্যবস্থায় পুজো চলছিল। সকাল ৯টায় অনুপবাবু পুজো দিতে এসে সমস্ত ব্যবস্থাকে বানচাল করে দেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়।” সঙ্ঘের সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় পয়সা নিয়ে ভিআইপি গেট দিয়ে পুণ্যার্থী ঢোকানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
|
ছবি তুলেছেন অনির্বাণ সেন। |
|