এখানে কাশ ফোটে না। শিউলির দেখা মেলে না। সাদা মেঘ ঠিক বাংলার মতো চরে বেড়ায় না। তবে দেশের পুজোর গন্ধ প্রবাসে ঠিক পৌঁছে যায়। ভিন্ দেশে বা ভিন্ রাজ্যের বাঙালিরা মেতে ওঠেন দুর্গাপুজোয়।
পুজোয় লন্ডনকে টেক্কা দেবে বিদেশে এমন শহর মেলা ভার। এ শহরের ক্যামডেনেই হয় বিদেশে বাঙালির প্রথম দুর্গাপুজো। এমনই দাবি এই পুজোর আয়োজক ‘লন্ডন দুর্গাপূজা অ্যান্ড দশেরা কমিটি’র চেয়ারম্যান আনন্দ গুপ্তের। তিনি জানান, ১৯৬৩ থেকে এই পুজোর শুরু। ২০০৬-এ টেমস নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার কৃতিত্বও তাঁদের। প্রতি বার মাটির প্রতিমা থাকলেও এ বার ছিল ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা। মধ্য লন্ডনে, কিং ক্রস স্টেশনের উল্টো দিকে এ বারের পুজো দেখতে এসেছিলেন ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ। ছিল নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা।
দক্ষিণ ইংল্যান্ডে স্লাউ-এ ‘রয়্যাল বার্কশায়ার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুজো বরাবরের মতো নজর কেড়েছে। স্থানীয় হকি ক্লাবে মণ্ডপ করে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। উদ্যোক্তারা জানান, প্রতি দিন প্রায় ২০০০-২৫০০ দর্শনার্থী এ পুজো দেখতে এসেছিলেন। অষ্টমীর দিন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কেমব্রিজ-এর ‘ইন্ডিয়ান কালচার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুজো অবশ্য এক সপ্তাহ আগেই হয়ে যায়। তবে নবমীর দিন ছিল বিজয়া দশমী। |
লন্ডনের ক্যামডেনের দুর্গোৎসব। |
জুরিখের দুর্গোৎসব। |
ইংল্যান্ডে স্লাউ-এর দুর্গোৎসব। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
৩০ বছর ধরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় পুজোর আয়োজন করে আসছে ‘বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ’। পাঁচ দিন ধরে নিয়ম মেনে ‘পারটিক বার্গ হল’-এ এ বারের পুজো হল। সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পুজোর আয়োজন করেছিল বাঙালিদের সংগঠন ‘সুইস পুজো’। এ পুজোর বয়স ১২ বছর। উদ্যোক্তারা জানান, কাজের ফাঁকে সময় বার করে তিন মাস ধরে এঁরা মণ্ডপের তোরণ তৈরি করেন। পুরোহিত নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা থেকে।
সীমানা পেরিয়ে ইতালি। পিছিয়ে নেই সেখানের বাঙালিরাও। মিলান শহর থেকে ঘণ্টাখানেক দূরে নোভা মিলানেজে তাঁদের আয়োজন। এখানে মূল দায়িত্বে আছেন ও পার বাংলার বাঙালিরা। তবে এ পার বাংলার অনেকেই অংশগ্রহণ করেন। মূর্তি ফাইবার গ্লাসের। ঢাক, আলোকসজ্জা, তিলের নাড়ু, নারকেল নাড়ু, মনে হবে যেন বাংলার পুজো, জানালেন বিষ্ণুপ্রিয়া সেনগুপ্ত। অতলান্তিকের ও পারে যান। সেখানেও পুজোর সংখ্যা কম নয়। তার মধ্যে নিউজার্সির ‘কল্লোল’-এর পুজো, ‘হিউস্টন দুর্গাবাড়ি’র পুজো এ বারও নজর কেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন-এ ‘বেঙ্গলি সোসাইটি অফ কুইন্সল্যান্ড’-এর পুজোর জাঁকজমকও তাক লাগিয়ে দেয় বলে জানালেন এই পুজোর এক উদ্যোক্তা গৈরিক মজুমদার। |
|
|
ব্রিসবেনের প্রতিমা ও ব্রিসবেনের দুর্গোৎসব। ছবি: গৈরিক মজুমদার। |
|
বাংলার বাইরে দিল্লি বা মুম্বইয়ের দুর্গাপুজোর খ্যাতি তো রয়েছেই। ভারতের সিলিকন ভ্যালি বেঙ্গালুরুও পিছিয়ে নেই। ১৯৫০-এ বেঙ্গালুরুতে তৈরি হয় প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’। সেই শুরু। বেঙ্গালুরুবাসী আনন্দ দাশগুপ্ত জানালেন, এখন নর্থ বেঙ্গালুরু, প্রবাসী, জয়মহল, করমঙ্গলা, পুরবা, জে পি নগরের পুজোর খ্যাতি রয়েছে। গত তিন বছর ধরে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঐকতান ক্লাবের পুজো। ঢাকি, শিল্পীদের কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়। পুজোর থিমও রয়েছে। ঐকতানের থিম ছিল খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশন। পুজোর পাশাপশি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। |