ওয়েস্টগেট মলে হামলার তদন্তজাল এ বার পৌঁছল সুদূর নরওয়েতেও। সেখানকার পুলিশ এমন সন্দেহভাজন এক যুবককে শনাক্ত করেছে, ওই হত্যাকাণ্ডে যার হাত থাকতে পারে বলে দাবি।
ওই যুবকের নাম হাসান আব্দি ধুহুলো। নাইরোবির ওই শপিং মলে হামলার সিসিটিভি ফুটেজে যে চার জঙ্গিকে দেখা গিয়েছে, তাদের মধ্যে হাসান এক জন কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
সেই সূত্রে তাঁরা কথা বলছেন হাসানের বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। নরওয়ের নাগরিক হলেও ওই যুবকের জন্ম সোমালিয়ায়। বয়স ২৩। ধুহুলোর পরিবার ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে সোমালিয়া থেকে চলে আসে নরওয়ে। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে নরওয়ে পুলিশ জানিয়েছিল, সোমালি বংশোদ্ভূত নরওয়ের এক নাগরিক নাইরোবির শপিং মলে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় জড়িত। তার পর থেকেই এ ব্যাপারে আরও খোঁজ শুরু হয়। নরওয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ধুহুলোর বোনকে। নাইরোবি থেকে ধুহুলো কখনও ফোন করেছে কি না, বিশেষ করে গত মাসে ওয়েস্টগেটে হামলার সময়ে কি তারা কোনও ফোন পেয়েছেন জানতে চেয়েছিল পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বোন বলেছেন, কোনও ফোন আসেনি ভাইয়ের কাছ থেকে। আর ওই হামলায় ভাইয়ের ভূমিকা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তাঁর বক্তব্য, “আমার বাবা-মা বা আমি এটা জানি না যে, ও বেঁচে আছে কি না। গোটা ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয়, ততই ভাল।” |
বিধ্বস্ত ওয়েস্টগেট। —ফাইল চিত্র। |
সোমালিয়ায় এর আগে এক রেডিও সাংবাদিককে খুনের অভিযোগে ধুহুলো নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ না মেলায় ছাড়া পেয়ে যায় সে। ধুহুলোর বোনের দাবি, বছর চারেক আগে ভাই হঠাৎ সোমালিয়া যেতে শুরু করে। মুখে বলত, ছুটি কাটাতে যাচ্ছি। তার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ফিকে হতে শুরু করে। বোন মনে করতে পারছেন না, শেষ কবে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এটা জানেন, ভাই অন্য রকম একটা জীবনে ঢুকে পড়েছে। সোমালিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠী আল শাবাবের সঙ্গে ভাইয়ের যোগাযোগ রয়েছে কি না, জানে না বোন। তাঁর কথায়, “কিছুতেই তবু বিশ্বাস হয় না ভাই এমন কাজও করতে পারে।”
নরওয়ের পূর্ব উপকূলে অসলোর দক্ষিণে ছোট্ট শহর লাভ্রিক। ৪৩ হাজার বাসিন্দা থাকেন সেখানে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এখানকারই একটি হাইস্কুলে পড়ত ধুহুলো। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করত সে। তার সঙ্গে স্কুলে পড়ত ক্রিস্টিনা স্যান্ডব্রেকেন নামে একটি মেয়ে। সে জানিয়েছে, সোমালিয়া থেকে ধুহুলোর মতো চেচনিয়া, কসোভো থেকেও অনেক মুসলিম বন্ধু পড়তে এসেছিল তাদের সঙ্গে। তবে সন্ত্রাসবাদ বা ধর্ম এগুলো কখনওই তাদের আলোচনার বিষয় হয়নি।
আল শাবাবের আন্তর্জাতিক গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করছেন কেনিয়া, আমেরিকা এবং নরওয়ের তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই নরওয়ের উপরে জোর দিয়েছেন তাঁরা। সোমালিয়ার উপকূল শহর বারাউই থেকে এ মাসের গোড়ার দিকেই শাবাবের মূল পাণ্ডা আব্দিকাদির মহম্মদ আব্দিকাদির ওরফে ইক্রিমাকে ধরার চেষ্টা করেছিল মার্কিন নেভি সিল। কিন্তু পারেনি। এই ইক্রিমাও ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত নরওয়েতেই ছিল।
|