স্টেশনে দালাল দৌরাত্ম্য, অতিষ্ঠ দূরপাল্লার যাত্রীরা
রাত থেকে ইট চাপা দিয়ে রাখা থাকে টিকিট সংরক্ষণের আবেদনপত্র। কাউন্টার খোলার আগেই সেখানে হাজির বেশ কিছু লোকজন। আবেদনপত্রগুলি নিজেদের দাবি করে লাইনে সবার আগে দাঁড়িয়ে পড়ে তারা। কাউন্টার খুলতে অবশ্য ইট চাপা কাগজগুলি আর জমা পড়ে না, পকেট থেকে বেরোয় অন্য আবেদনপত্র।
বার্নপুর স্টেশনে টিকিট সংরক্ষণের কাউন্টারটিতে দালালদের এই ধরনের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ-সহ রেলের কনসাল্টেটিভ কমিটির সদস্যেরাও। রেল কর্তৃপক্ষের তরফে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বার্নপুরের টিকিট সংরক্ষণ কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
রেলের টিকিট সংরক্ষণের জন্য বার্নপুর-সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা ওই কাউন্টারটি। প্রতিদিন কাউন্টার খোলা থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সেখানে উপছে পড়ে ভিড়। কিন্তু সকাল থেকে লাইন দিয়েও টিকিট পেতে নাকাল হতে হয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের। কারণ, বেশ কিছু দালাল কৌশলে কাউন্টারে ভিড় জমিয়ে পরপর টিকিট কাটতে থাকে। লাইনের সাধারণ যাত্রীরা অনেক সময়ে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না বলে অভিযোগ। তারা সংখ্যায় বেশি ও সঙ্ঘবদ্ধ থাকায় প্রতিবাদ করার সাহস হয় না, দাবি সাধারণ যাত্রীদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, দালালদের এই কাজে উৎসাহ দেন এক শ্রেণির রেলকর্মী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে চান না যে যাত্রীরা, তাঁদের থেকে মোটা টাকা নিয়ে টিকিট কেটে দেয় এই দালালেরা। নিয়ম অনুযায়ী, এক জন যাত্রী এক বার লাইনে দাঁড়িয়ে একটি মাত্র আবেদনপত্র জমা করতে পারেন। কিন্তু এই দালালেরা একাধিক আবেদনপত্র এক বারে জমা করলেও সংরক্ষণ কাউন্টারের বুকিং ক্লার্কেরা কোনও প্রতিবাদ করেন না বলে অভিযোগ। সাধারণ যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে মারমুখি হয়ে ওঠেন দালালেরা। সঞ্জয় কাবিরাজ নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, এক নিকট আত্মীয়কে চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে গিয়ে বিপদে পড়েন তিনি। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “দালালদের দাপাদাপির প্রতিবাদ করায় নিগ্রহ করা হয়। আমি রেলের ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি।”
বার্নপুর স্টেশনের টিকিট সংরক্ষণ কাউন্টারে এ ধরনের দালালচক্রের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব হয়েছেন আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীও। তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে চিঠি লিখেছি। এলাকায় আরও কয়েকটি কাউন্টার তৈরির আবেদনও করেছি।” একই অভিযোগ তুলে রেল প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন রেলের কনসাল্টেটিভ কমিটির সদস্য সুভাষ রায়। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই ওখানে দালাল-দৌরাত্ম্য চলছে। রেলকে জানিয়ে কিছু হচ্ছে না। তাই মন্ত্রীকে জানাতে বাধ্য হয়েছি।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার বিজয়কুমার মাজি বলেন, “এই অভিযোগের কথা জেনেছি। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তিনি আরও জানান, কাউন্টার খোলার সময় থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সেখানে আরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। সংরক্ষণের আবেদনপত্র ইট চাপা দিয়ে চলে যাওয়া যাবে না, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এক জন যাত্রী একটি মাত্রই আবেদনপত্র জমা দেবেন। বেনিয়মের সঙ্গে যদি কোনও রেলকর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ মেলে, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তাঁর আশ্বাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.