গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চালানোর পথে হাঁটলেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা বজায় রাখলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
শুক্রবার দার্জিলিঙের ভানু ভবনে জিটিএ-র নতুন ‘চিফ এগজিকিউটিভ’ পদে মনোনীত করা হল জেলবন্দি বিনয় তামাঙ্গকে। তামাঙ্গের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে
|
বিনয় তামাঙ্গ |
নাগরাকাটায় ভাঙচুর, আগুন লাগানো, শিপ চুতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। মোর্চার অন্দরের
খবর, রাজ্য সরকার যাঁকে পাহাড়ে সাম্প্রতিক অশান্তিতে গুরুঙ্গের অন্যতম মদতদাতা বলে সন্দেহ করছে, তাঁকেই জিটিএ-র সর্বোচ্চ পদে মনোনীত করে সংঘাত অব্যাহত রাখার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন গুরুঙ্গ। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির কথায়, “রাজ্য নতুন চিফ-এর নাম চেয়েছিল। তা দেওয়া হয়েছে। এখন কী ভাবে, কী হবে সেটা রাজ্য ঠিক করবে। আমরা রাজ্যের কোর্টে বল গড়িয়ে দিয়েছি।”
গুরুঙ্গ অবশ্য নতুন চিফ নির্বাচনের বৈঠকে এ দিন যাননি। জিটিএ-সভার চেয়ারম্যান মোর্চা নেতা প্রদীপ প্রধান বলেন, “দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তামাঙ্গকে নতুন চিফ মনোনীত করা হয়েছে।” জিটিএ-র প্রধান সচিব রামদাস মিনা বলেন, “রাজ্যের নির্দেশ মতো পরের পদক্ষেপ করা হবে।”
নতুন জিটিএ-চিফ মনোনয়নের সিদ্ধান্তকে সতর্ক ভাবেই স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য। সেই সঙ্গে এ দিনই মোর্চাকে পাল্টা চাপে রাখতে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, জিটিএ চালানোর নামে খামখেয়ালিপনা, পাহাড়ের জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকির রাস্তা গুরুঙ্গরা না ছাড়লে কড়া পদক্ষেপ বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “নতুন চিফ মনোনয়নের সিদ্ধান্ত শুনেছি। যদি পূর্ণ মেয়াদ (পাঁচ বছর) জিটিএ চালানোর প্রকৃত সদিচ্ছা মোর্চা দেখায়, তা হলে সহযোগিতা করা হবে। না হলে পাহাড়ে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী সব ধরনের পদক্ষেপ করবেন।”
রাজ্যের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন গুরুঙ্গও। কারণ, জিটিএ-চিফ পদে শপথ নেওয়া এবং পরে জিটিএ চালানোর জন্য বিনয় তামাঙ্গকে জামিন পেতে হবে। এ দিন জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের আদালতে তামাঙ্গের বিরুদ্ধে যে দু’টি মামলা চলছে, তাতে জামিনের আর্জি জানানো হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা তীব্র বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত জামিনের আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক। পরেও সরকার পক্ষের বিরোধিতায় জামিন না মিললে, জিটিএ অচল করে রাখার জন্য রাজ্যকে কাঠগড়ায় তোলার সুযোগ তৈরির কৌশলও ভেবে রেখেছেন গুরুঙ্গরা। মোর্চা সূত্রের খবর, দু’-এক দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে তামাঙ্গের জামিনের জন্য আর্জি জানানো হবে। মোর্চার সাম্প্রতিক আন্দোলন-পর্বে তাদের ১২ জন জিটিএ সদস্য-সদস্যা গ্রেফতার হন। তাঁদের মধ্যে বিনয়-সহ ৯ জন এখনও জামিন পাননি।
দার্জিলিঙের নর্থ পয়েন্ট কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের কর্ণধার হন বিনয় তামাঙ্গ। পরে ঠিকাদারি করতেন। জিএনএলএফ-এর আমলে নির্দল হিসেবে মিরিকে দাঁড়িয়ে পার্বত্য পরিষদের ভোটে হারেন। তিনি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমানে জিটিএ-র তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে পাহাড়ের নানা জায়গা থেকে অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করে অশান্তি জিইয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এমন এক জনকে জিটিএ-চিফ করল কেন মোর্চা? মোর্চা সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে ওই পদে ইস্তফা দিয়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি এখনই ফের ‘চিফ’ পদে বসলে সমালোচনার আশঙ্কা রয়েছে। বরং ‘একান্ত ঘনিষ্ঠ’ বিনয় তামাঙ্গকে মনোনীত করে গুরুঙ্গ কার্যত জিটিএ-র কর্তৃত্ব নিজের হাতেই রাখলেন। দরকারে তামাঙ্গকে সরিয়ে তিনি চিফ পদে চলে আসতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
মোর্চার এই সিদ্ধান্তে তাদেরই উদ্যোগে গঠিত ‘গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র (জ্যাক) শরিকদের অনেকেই হতাশ। কমিটির কার্যকরী সভাপতি এনোস দাস প্রধান বলেন, “মোর্চা জিটিএ ছাড়বে, এই শর্তেই জ্যাক-এ যোগ দিই। এখন ওরা অন্য রাস্তা নিল। সোমবার জ্যাক-এর বৈঠক রয়েছে। সেখানে দেখি কী হয়!” রোশন গিরি অবশ্য জানান, জিটিএ কবে ছাড়া হবে, ফের কী ভাবে আন্দোলন হবে, সে সবই দলের সভাপতি পরে জানাবেন।
|