শুখার মরসুমে ছোট চা বাগানের জল সঙ্কট মেটাতে পারে সংরক্ষিত বৃষ্টির জল। ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছে বিকল্প আয়ের উৎসও হতে পারে এই পদ্ধতি। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিদের এমনই শেখালেন চা গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। কদমতলার এক হোটেলে চা পর্ষদের উদ্যোগে একটি কর্মশালা আয়োজিত হয়। কর্মশালাতেই চা চাষিদের কাছে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের সুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞরা।
২৫ একর পর্যন্ত চা বাগানকে ক্ষুদ্র বাগান বলা হয়। ওই পরিমাণ জমিতে একটি পুকুর বা জলাধার তৈরি করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা যেতে পারে বলে চা গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, নূন্যতম হাজার লিটার জল ধরতে পারে এমন জলাশয় তৈরি করলেই শুখার মরসুমের বেশ কয়েকমাস চা বাগানে জল সরবারহ সম্ভব। এমনিতেই চা গাছে সারা বছর জল দিতে হয়। বড় চা বাগানের ক্ষেত্রে ওই মরসুমে জল দিতে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে। চা গবেষণা কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, মূলধনী ব্যায়ের অভাবে বড় বাগানের মতো নিকাশি ব্যবস্থা ছোট বাগানে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পাশাপাশি জলের উৎসও ওই সময় অপ্রতুল হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল সংরক্ষণই বিকল্প উপায় হতে পারে।
তাঁরা জানান, বাগানেশ কয়েকটি জায়গায় লাগানো পাইপের সাহায্যে মাটির নিচে অথবা উপরে থাকা জলাধারে বৃষ্টির জল জমবে। বর্ষার সময়ে জলাধারের জল ব্যবহার করার প্রশ্ন নেই। গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ এস ভার্গিস বলেন, “জলাধারে জল ২-৩ মাস পর্যন্ত অনায়াসে থাকতে পারে। জলে যাতে শ্যাওলা না জমে তারও উপায় রয়েছে। গরমের মরসুমে এই জল পাইপের মাধ্যমে প্রতিদিনই চা বাগিচায় ছেটানো সম্ভব। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে শুখার মরসুমেও দু-একদিন বৃষ্টি হয়। তাতে জলাধার ফের কিছুটা ভরে যাবে। খরচও অনেক কম।”
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে বিকল্প আয়েরও ব্যবস্থা হতে পারে বলে এ দিন গবেষণা কেন্দ্রের তরফে চাষিদের বোঝানো হয়েছে। বৃষ্টির জল রাখা জলাধারে মাছ চাষ করা যেতে পারে। গোবর সার বা জলজ অর্থকরী গাছের চাষও হতে পারে। কর্মশালাকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি। সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, বাইরের কোনও উৎস থেকে জল টেনে এনে ১ একর চা বাগানে জল দিতে মাসে প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ হয়। পাশাপশি শুখার মরসুমে জলের উৎসও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে জলের দেওয়ার খরচ এবং উৎস দুটি বিষয়েই সমাধান মিলবে। জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এই পদ্ধতিটি এতদিন অজানা ছিল।” |