ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে একবার ইস্টবেঙ্গলের ট্রফিশালায় ঢুঁ মেরে গেলেন মেহতাব হোসেন। সযত্ন সাজানো ক্লাবের বহুমূল্য সম্পদগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে হাতে তুলে নিলেন আসিয়ান কাপের ট্রফিটা।
এক ঝলকে মনে হল, কিছু বলতে চাইছেন। আসিয়ান কাপের দশকপূর্তিতে কি ইতিহাস পুনরাবৃত্তির শপথ নিলেন লাল-হলুদ অধিনায়ক? মনের শব্দব্রহ্ম বাইরের জগতে বেরোতে না পারলেও, মেহতাব বলে গেলেন, “মরার আগে মরতে চাই না। কোনও সন্দেহ নেই যে কুয়েত শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে আমরাও সহজে হাল ছাড়ছি না।” |
মেহতাবের মতো ‘মরার আগে মরব না’-র মানসিকতা গোটা লাল-হলুদ শিবিরেই যেন মিলেমিশে একাকার! শুক্রবার সকালে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল, প্রবল আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন ফুটবলাররা। হাসি-ঠাট্টায় মজে চিডি-মোগা-ওপারা। আমেরিকো ফালোপার সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত গুরবিন্দর। মঙ্গলবারের প্রতিপক্ষ যে কুয়েত এসসি, সেটা বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই ফুটবলারদের শরীরী ভাষায়। মোগা তো বলেই ফেললেন, “ফুটবলে ছোট-বড় দল হয় না। প্রত্যেকটা দলকেই সম্মান করতে হয়। কুয়েতে কী হবে, জানি না। তবে আমরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।”
চিডিকে অবশ্য মোগার মতো এত আক্রমণাত্মক না শোনালেও, এএফসি কাপ সেমিফাইনালের মহা-চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি প্রস্তুত। অনুশীলনের পরে নিজের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “আমার ফুটবল জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। জিততে পারলে ইতিহাস। না পারলেও হারানোর কিছু নেই। কুয়েতের হোম ম্যাচ। তাই ওদের বাড়তি অ্যাডভান্টেজ থাকবে। তবে আমরাও সহজে জিততে দেব না ওদের।”
বহিরঙ্গে যা-ই থাকুক না কেন, ইস্টবেঙ্গলের অন্দরমহলে কি কোনও চাপ নেই? আছে। আর সেটা ফুটিয়ে তুললেন লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচ মার্কোস ফালোপা। কুয়েতে খেলতে যাওয়ার আগে তিনটে বিষয় নিয়ে অসম্ভব চিন্তিত ইস্টবেঙ্গল কোচ,
১) সুয়োকার চোট: জাপানি মিডিও-র বদলি হিসেবে কুয়েত যাচ্ছেন হরমনজিৎ সিংহ খাবরা ও কেভিন লোবো। তবে সুয়োকার অনুপস্থিতিতে চিডি-মোগাদের বল বাড়ানোর গুরুদায়িত্ব কোন ফুটবলারের কাঁধে দেবেন, সেটা এখনও ঠিক করতে পারেননি। আর হয়তো সে কারণেই শনিবার বিকেলে কুয়েতের উদ্দেশে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সকালে ফের অনুশীলন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ। ফালোপা বলছিলেন, “আলোন্সোর গতিতে ছুটতে চাই না। এক একটা সিঁড়ি আছে, যেখানে খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়। কুয়েত থেকে এক পয়েন্ট পেলেই আমি খুশি।”
২) রক্ষণের সংগঠন: কুয়েত দলের গড় উচ্চতা ৬ ফুট। শারীরিক ক্ষমতাও সৌমিক-অর্ণবদের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। ফালোপা নিজেও বলছিলেন, “ওদের ব্রাজিল এবং তিউনিশিয়ার দু’জন ভাল ফুটবলার আছে। তিউনিশিয়ার জেম্মার খেলা তো আমি ইউ টিউবেও দেখেছি। খুব আক্রমণাত্মক স্ট্রাইকার।” শুক্রবারের অনুশীলন দেখে মনে হল, কুয়েতের বিরুদ্ধে ৫ ডিফেন্ডারেও খেলতে পারে ইস্টবেঙ্গল। সে ক্ষেত্রে ৫-৪-১ ছকে একা স্ট্রাইকার চিডি। |
৩) রেফারি: কুয়েতে খেলতে যাওয়ার আগেই রেফারি নিয়ে ঘোর আশঙ্কায় ফালোপা। তাঁর ধারণা, উপসাগরীয় দেশের কোনও রেফারি থাকলে ম্যাচ ঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না। এমনকী সেই রেফারি বাড়তি সুবিধাও দিতে পারেন কুয়েতকে। লাল-হলুদ কোচ বলছিলেন, “আমি বৃহস্পতিবার রাতেই ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছি, যাতে উপসাগরীয় দেশের কোনও রেফারিকে ম্যাচে না রাখা হয়। তাতে অসুবিধা হতে পারে।”
সব মিলিয়ে ইতিহাস গড়ার স্বস্তির মধ্যেই আরও একটা ইতিহাস ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর ইস্টবেঙ্গল। বাস্তব এটাও, কুয়েত এসসি কিন্তু সেমেন পাদাং নয়!
|