সুপ্রিম কোর্টের শুক্রবারের রায় শোনার পর অনেকেই আমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করছেন। জিজ্ঞেস করছেন, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে নিয়ে আদতে সুপ্রিম কোর্ট কী বলতে চাইল? শ্রীনিকে যে বলা হল, নির্বাচন হবে, তুমি সেখানে জিতেও আসতে পারো, কিন্তু এক জন প্রেসিডেন্টের যা যা কাজ, সে সব কিছুই তুমি করতে পারবে না এর মানে কী? কোন কোন কাজ করতে পারবে না শ্রীনি? আবার এটাও লোকে জানতে চাইছে, এর পরেও যদি শ্রীনি নির্বাচনে দাঁড়ায়, তা হলে ওকে কী ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হবে?
উত্তরগুলো দেওয়ার আগে একটা কথা আগেভাগে বলে নিই। আজ শুনলাম সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে যে, শ্রীনির প্রেসিডেন্টের চেয়ারে আসার এত ইচ্ছে কীসের? কেন এত ইচ্ছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর? আদালত আরও বলেছে: আমরা ক্রিকেট বুঝি, ভারতীয় বোর্ড বুঝি, কিন্তু কোনও ব্যক্তিকে বুঝতে যাব না। আমিও এই প্রশ্নটাই শ্রীনিকে করতে চাই। আপনার কীসের এত ইচ্ছে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার? কীসের জন্য বসতে চাইছেন? ক্রিকেটের জন্য? নাকি ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কথা ভেবে?
আজকের শুনানির মানে, শ্রীনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। আদালতই সেটা বলেছে। তাই কোনও আইনি জটিলতা এখানে নেই। শুনলাম উনি বলেছেন, দাঁড়াবেন। নির্লজ্জ লোক তো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যে ওঁর হাত-পা বেঁধে দিয়েছে, সেটাও আশা করি শ্রীনিবাসন বুঝতে পারছেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট মানে, যে কোনও ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁর। কোনও পলিসি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে ভারতীয় দল নির্বাচন কিছুই প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়া হয় না। কিন্তু আজকের পর শ্রীনিবাসনের আর সে সব কিছুই করা হবে না। তিনি কোনও কাগজপত্রে সইসাবুদ করতে পারবেন না।
আদিত্য বর্মার নতুন মামলায় এত ঝাঁঝ ছিল না যে সেটা শ্রীনিকে এতটা বিপদে ফেলতে পারত। ও বার্ষিক সভা শ্রীনির চেয়ার করার উপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, মূল মামলাটা তদন্ত কমিশন নিয়ে। যেটা কোনও ভাবেই শ্রীনির বার্ষিক সভা চেয়ার করা, বা নির্বাচনে দাঁড়ানোর উপর প্রভাব ফেলতে পারত না। সুপ্রিম কোর্ট যদি শুধু আইনি দিক থেকে ব্যাপারটাকে দেখত, তা হলে শ্রীনি বেঁচে যেতেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ব্যাপারটাকে দেখেছে নৈতিকতার দিক থেকে। জীবনের অনেক শিক্ষাই ক্রিকেট মাঠ থেকে পাওয়া যায়। সেখানে যদি দেখা যায় যে সেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে বসে এমন একটা লোক, যার নামে এখনও তদন্ত চলছে, যার জামাই গড়াপেটায় জড়িয়ে পুলিশের চার্জশিট খেয়েছে, সেখানে সেই লোকটাকে রেহাই দেওয়া মানে নৈতিকতা থেকে সরে আসা। শ্রীনিবাসনকে দেওয়া আদালতের বার্তাটা খুব পরিষ্কার। তুমি এখন কোনও ভাবেই প্রেসিডেন্টের কাজকর্ম চালাতে পারবে না। বরং এ বার ভেবে দেখা হবে, তুমি আদৌ আর প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার যোগ্য কি না। যার শুনানি সোমবার থেকে।
এক জন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আশা করব, এত ক্ষমতালোভী এক জনকে আর কোনও দিন যেন ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরতে না দেওয়া হয়। বোর্ডের কাজ হচ্ছে মুনাফা না করে ক্রিকেটকে প্রোমোট করা। শ্রীনিবাসন সেখানে শুধু মুনাফাটা বোঝেন। ক্রিকেটকে তিনি একটা জিনিসই আজ পর্যন্ত দিয়েছেন অপরিসীম লজ্জা!
|
(লেখক ভারতীয় বোর্ডের বিশিষ্ট প্রাক্তন আইনজীবী) |
ডুয়েলের খুঁটিনাটি |
২৮ মে ’১৩: আইপিএল-দুর্নীতির তদন্তে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করল গভর্নিং কাউন্সিল।
২১ জুন: কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এবং তদন্ত কমিশনের বৈধতা নিয়ে বম্বে হাইকোর্টে পিটিশন বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মার।
২৮ জুলাই: প্যানেল জানাল, আইপিএল মালিকদের দুর্নীতির প্রমাণ তারা পায়নি।
৩০ জুলাই: বম্বে হাইকোর্টের ঘোষণা, বোর্ডের তদন্ত কমিশনের গঠনই অবৈধ।
৫ অগস্ট: সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বোর্ড। স্পেশ্যাল লিভ পিটিশনে বম্বে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ।
২৮ অগস্ট: সুপ্রিম কোর্টে বিহার ক্রিকেট সংস্থার স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন জমা। আদিত্যর দাবি, সুপ্রিম কোর্টই তদন্ত কমিশন গঠন করে দিক।
১ সেপ্টেম্বর: বোর্ড নির্বাচনের আগে শেষ ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে হাজির শ্রীনিবাসন। তবে প্রেসিডেন্ট নয়, বিশেষ আমন্ত্রিতের ভূমিকায়।
১২ সেপ্টেম্বর: সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিন। কিন্তু সময় না থাকায় মামলা আদালতে উঠল না।
১৩ সেপ্টেম্বর: আইপিএল গড়াপেটা কাণ্ডে শ্রীসন্তদের আজীবন নির্বাসিত করল বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। মিটিং চেয়ার করলেন শ্রীনিবাসন। বলে দিলেন, “আমিই বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বার্ষিক সভা আমিই চেয়ার করব।”
১৪ সেপ্টেম্বর: চেন্নাইয়ে এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকও চেয়ার করলেন শ্রীনি।
২১ সেপ্টেম্বর: শ্রীনির জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনের বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশের চার্জশিট পেশ। বেটিং থেকে কার্যত ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত গুরুনাথ। নির্বিকার শ্রীনির জবাব, “আপনাদের পছন্দ না হলেও আমিই ২৯ সেপ্টেম্বর বৈঠক চেয়ার করছি। নির্বাচনটাও হয়তো জিতব।”
২৫ সেপ্টেম্বর: শ্রীনিবাসন যাতে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন, সেই আবেদন নিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টে আদিত্য। ২৭ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ।
২৭ সেপ্টেম্বর: সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, শ্রীনিবাসন নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। বোর্ড বৈঠকও হতে পারবে। কিন্তু যত দিন সুপ্রিম কোর্টে বোর্ডের মামলার নিষ্পত্তি না হচ্ছে, তত দিন বোর্ডের কোনও কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না শ্রীনিবাসন। |
|