আরও বাড়িতে ফাটল, আতঙ্কে বিনিদ্র এলাকা
খন-তখন পাতালে ঢুকে যাওয়ার আতঙ্কে রাতভর জেগেই কাটালেন সাঁকতোড়িয়া কলোনির ১২ নম্বর বস্তির বাসিন্দারা। কিন্তু কর্তাদের টনক নড়ল না।
কয়েক ঘণ্টা আগেই, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ বাড়ির উঠোন হাঁ করে গিলে ফেলেছিল বছর বিশেকের হেনা পারভিনকে। রাত বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে এলাকার আরও কিছু অংশ বসে যায়। ফেটে যায় বেশ কিছু বাড়ির দেওয়াল ও মেঝে। তড়িঘড়ি জিনিসপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নীচে জড়ো হন বাসিন্দারা। দুপুর পর্যন্ত তাঁদের ত্রাণের কোনও ব্যবস্থা করেনি মহকুমা প্রশাসন।
ধস কবলিত এলাকা ভরাট করার জন্য জায়গা ফাঁকা করছে ইসিএল। —নিজস্ব চিত্র।
সকালেই স্থানীয় বাসিন্দারা ডিসেরগড় রোড অবরোধ করে ইসিএলের তরফে দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং এক জনকে চাকরি দেওয়ার দাবি তোলেন। তাঁদের এবং আশপাশের কিছু বাড়ির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবিও ওঠে। পরে কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তাঁরা ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির থাকার জন্য ইসিএলের একটি খালি আবাসন দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে।
বৃহস্পতিবার রাতে যে গর্তে ঢুকে গিয়েছিলেন হেনা, তা থেকে ধোঁয়া বেরোনো অবশ্য অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে সকালেও ইসিএলের উদ্ধারকারী দল ওই গর্তের ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি। ফলে হেনার খোঁজও চালানো যায়নি। ইসিএল ধস কবলিত অংশ ভরাটের কাজ শুরু করেছে। ইসিএল সেখানে একটি জেসিবি মেশিন পাঠিয়েছে। বেশ কিছু বাড়িঘর ভেঙে জায়গা ফাঁকা করা হচ্ছে।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু ও বৃদ্ধদের সঙ্গে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসে আছেন অনেকে। বাড়ির উঠোনে ছড়ানো গেরস্থালির জিনিস। কেউ-কেউ স্থানীয় একটি ক্লাবঘরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদেরই এক জন তারান্নুম পারভিন বলেন, “মাঝরাতের দিকে হঠাৎ যেন মনে হল, ঘরটা দুলছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখি, দেওয়ালে ফাটল। মেঝেতেও মাকড়সার জালের মতো ফাটল ধরেছে। অপেক্ষা না করে জিনিসপত্র নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়েছি।” অপর এক বাসিন্দা মহম্মদ খলিল জানান, রাত থেকে তাঁরা কয়েকটি পরিবার নির্জলা রয়েছেন। ত্রাণ মেলা দুরের কথা, প্রশাসন তাঁদের কথা জানতেই আসছেন না।
ছবি: শৈলেন সরকার
আরও করুণ অবস্থা ক্লাবঘরের অস্থায়ী শিবিরটির। ছোট একটি ঘরে কয়েকটি পরিবার জিনিসপত্র নিয়ে গাদাগাদি করে রয়েছে। হেনার বাবা-মা তার মধ্যেই ছিলেন। এক নাগাড়ে বিলাপ করছিলেন মা হুনানা খাতুন। বলছিলেন মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। নভেম্বরে বকরি ঈদের পরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সান্ত্বনা দিয়েও পড়শিরা তাঁকে শান্ত করতে পারছিলেন না। হাতের সামনে যাকেই পাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরে জানতে চাইছেন, মেয়েকে কখন গর্ত থেকে তোলা হবে। সে আদৌও বেঁচে আছে কি না। কিন্তু যে গর্ত থেকে ক্রমাগত ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ ঠিকরে বেরোনোয় উদ্ধারকারী দল কাছে যেতে পারেনি, সেখানে পড়ে যাওয়ার অর্থ কী তা সম্ভবত সকলের কাছেই পরিষ্কার।
এ দিন ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জিএম গোরাচাঁদ বাউড়ির সঙ্গে দেখা করেন এলাকার বাসিন্দারা। গোরাচাঁদবাবু বলেন, “আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে একটি খালি আবাসনে থাকতে বলেছি। ওঁদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, খোঁজখবর নিয়ে ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য এলাকায় একটি দল পাঠানো হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.