চলছে তরজা, পুনর্বাসন মিলবে কবে
ক দিন আগে যেখানে উঠোন ফেটে খাদানের আগুন-জ্বলা গর্তে ঢুকে গিয়েছিলেন তরুণী, সাঁকতোড়িয়ার সেই অঞ্চলকে ২০০৩ সালেই ‘ধসপ্রবণ’ বলে ঘোষণা করেছিল ইসিএল। কিন্তু পুনর্বাসন দেওয়া শুরু হয়নি।
শুক্রবার কুলটির সাঁকতোড়িয়ায় গিয়ে বোঝা যায়, পুনর্বাসনের প্রশ্নে স্থানীয় বাসিন্দারা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) উপরে ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম খান বলেন, “জনবিন্যাসের সমীক্ষা হয়েছে। ছবি-সহ কার্ড হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন পাচ্ছি না। তা পেলেই এই মৃত্যুপুরী ছেড়ে চলে যাব।” একই রকম ক্ষুব্ধ সীমা খাতুন। তাঁর কথায়, “ছোট ছেলে নিয়ে বাস করি। ধসের ঘটনায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। প্রশাসন আমাদের জন্য কিছুই করছে না।”
ঘরে ফাটল, সব নিয়ে তাই ঠাঁই খোলা আকাশের নীচে। শুক্রবার ছবি তুলেছেন শৈলেন সরকার।
১৯৯৭ সালেই প্রথম রানিগঞ্জ-আসানসোল খনি এলাকার ১৪৬টি অঞ্চলকে ‘ধসপ্রবণ’ বলে ঘোষণা করে ইসিএল। ওই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলা করেন এককালীন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়। ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট ইসিএলকে পুনর্বাসন ও স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়। ইসিএলের খনি বিশেষজ্ঞ, ডিরেক্টর জেনারেল (মাইনস সেফটি) এবং কোল মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইনিং ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞেরা ‘মাস্টার প্ল্যান’ বানান।
তাতে উল্লেখ করা হয়, কিছু জায়গায় মাটির তলায় জল ও বালির মিশ্রণ পাঠিয়ে ভূগর্ভের ফাঁকা অংশ ভরাট করে ধস আটকানো সম্ভব। আবার কিছু এলাকা একদম ফাঁকা করে দিতে হবে। কারণ, সে সব অঞ্চলে মাটির তলায় জল ও বালির মিশ্রণ পাঠিয়ে ‘স্থায়ীকরণ’ সম্ভব নয়। এ রকম পাঁচটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের আগে সরাতে হবে। সেগুলি হল সালানপুরের সামডি, রানিগঞ্জের কেন্দা, জামুড়িয়ার হরিপুর, পাণ্ডবেশ্বরের বাঙালপাড়া ও কুলটির সাঁকতোড়িয়া। ওই সব অঞ্চলে মাটির তলার কয়লার স্তরে প্রচুর মিথেন গ্যাস আছে। তা কোনও ভাবে বাতাসের সংস্পর্শে এলেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগুন ধরে যাচ্ছে। তাতে ভূগর্ভের কয়লা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় মাটির তলার অংশ আলগা হয়ে ধসে যাচ্ছে। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে সরাতে হবে।
রানিগঞ্জ-আসানসোল খনি এলাকার ধসপ্রবণ অঞ্চলের মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ২০০৯ সালের ২৬ অগস্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার তরফে ২৬২৯ কোটি টাকা খরচ করার অনুমোদন পায় কয়লামন্ত্রক। বলা হয়, পুনর্বাসনের যাবতীয় কাজ করবে রাজ্য সরকার। অর্থ দেবে কয়লামন্ত্রক। কারিগরি সহায়তা দেবে ইসিএল। রাজ্য সরকারের তরফে সেই সময়ে জানানো হয়, সরকারের পক্ষে পুনর্বাসনের কাজ করবে এডিডিএ। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “পুনর্বাসন দিয়ে এলাকা ফাঁকা করার সব দায়িত্ব এডিডিএ-র। আমরা কয়েকশো কোটি টাকাও দিয়েছি।” এডিডিএ জানায়, প্রাথমিক কাজ করার জন্য ইসিএলের কাছ থেকে তারা প্রায় ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে। কিন্তু কাজ তত এগোয়নি।
গোটা বিষয়টি যখন শুরু হয়, তখন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সরকার বদলের পরে এডিডিএ-র ক্ষমতা যায় তৃণমূলের হাতে। বংশগোপালবাবু দাবি করেন, “জনবিন্যাসের কাজটা আমরাই শুরু করেছিলাম। কিন্তু গত দু’বছরে এডিডিএ কিছুই করেনি।” এডিডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান, তৃণমূলের নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “পুনর্বাসনের কাজে অনেকটাই এগিয়েছি। ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরের সিদ্ধান্ত নেব।”
নেতাদের তরজা নয়। পুনর্বাসন দেওয়া কবে শুরু হবে, এলাকার মানুষ এখন শুধু সেটাই জানতে চান।

কাজ কতটা এগোল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.