পথের হাল ফেরাতে মামলা, সারাতে নামল পূর্ত দফতরও
ত দিনেও টনক নড়েনি কারও। অবশেষে, যশোহর রোডের বেহাল অবস্থার প্রতিবিধান চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাটি করেছেন আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য। আবেদনে ওই রাস্তার ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক অবস্থা বর্ণনা করে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে রাস্তা সারাইয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। বুধবারই অবশ্য রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানিয়েছেন, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে যশোহর রোড সারাইয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। এর জন্য একটি শর্ট টেন্ডারও করা হয়েছে।
জনস্বার্থ মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, এই রাস্তা ধরেই বিমানবন্দরে যাতায়াত করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাও সেটিই। কিন্তু বর্তমানে রাস্তা বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অসুবিধা হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রায় বন্ধ। স্কুল, অফিস যাতায়াত কার্যত বন্ধ হওয়ার মুখে। রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সংস্থা বারংবার আবেদন জানিয়েও কোনও সুরাহা পায়নি। সরকার উদাসীন। শুক্রবার মামলাটির শুনানি হতে পারে।
এ বিষয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, “বৃহস্পতিবার এই রাস্তার মেরামতির কাজ শুরু হবে। রাস্তাটির দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। তাঁরা রাস্তা দেখভালের জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। রাজ্য সরকার জনগণের অসুবিধার কথা ভেবে ওই রাস্তা মেরামতির জন্য দু’কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।” পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, রাস্তাটি পাকাপাকি ভাবে রাজ্যের হাতে দিতে চেয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। যদিও রাস্তাটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেখভাল করার কথা তাঁদেরই। কিন্তু রাজ্য চায়, ভাঙাচোরা সারানোর পরেই রাস্তা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। এই টানাপোড়েনেই আটকে রয়েছে যশোহর রোডের সংস্কারের কাজ।

যশোহর রোড এখন যেমন। —নিজস্ব চিত্র
এ দিকে, বারাসত থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমাটির দীর্ঘ যশোহর রোডের অবস্থা কিন্তু বেশ ভাল। কিন্তু বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট থেকে বারাসত পর্যন্ত নয় কিলোমিটার খানা-খন্দে ভরা কঙ্কালসার যশোহর রোডে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা বিমানবন্দর থেকে নিউ ব্যারাকপুর পর্যন্ত পর্যন্ত মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তার।
অথচ এই রাস্তাটি নিছক ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক নয়। এটি আর্ন্তজাতিক রাস্তাও। এই পথেই চলে ঢাকা-কলকাতা বাস এবং এশিয়ার অন্যতম স্থলবন্দর বনগাঁর পেট্রোপোল দিয়ে পণ্য পরিবহণ। এমনকী, কলকাতা থেকে সড়কপথে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্যও রাস্তাও এটিই। খুব কম দূরত্বে চারটি প্রধান সড়ক, ভিআইপি রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, টাকি রোড ও ব্যারাকপুর রোডের কেন্দ্রবিন্দু যশোহর রোডকে এমনিতেই প্রচুর ভার বইতে হয়। কলকাতা যাতায়াতের জন্য এই একমাত্র রাস্তাটি পার হতে হয় বারাসত, সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, দমদম-সহ বনগাঁ ও বসিরহাটের বাসিন্দাদের।
মাঝেমধ্যেই রাস্তার পিচ-পাথর উঠে নীচের ইট-মাটি বেরিয়ে পড়েছে। কিছু দূর অন্তর বিশাল বিশাল গর্তে বর্ষার জল জমে রয়েছে। সেই চড়াই-উতরাইয়ে টাল খেতে খেতে চলছে যানবাহন। গর্ত পার হতে গিয়ে মালবোঝাই ট্রাক, বাস উল্টে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ভিআইপি রোড ছেড়ে বিমানবন্দরের চৌমাথায় পড়তেই বেহাল রাস্তায় যানজটে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। নিত্যযাত্রীরা জানান, সব সময়েই লেগে রয়েছে যানজট। ৩০ মিনিটের পথ এখন দুই-আড়াই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন রুটের বাস।
এর পাশাপাশি রয়েছে পুরনো কিছু সমস্যাও। ট্রাফিক ব্যবস্থা দুর্বল। রাস্তার পাশে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ও ভ্যান-রিকশা চলাচল নিয়ে হেলদোল নেই পুলিশের। অনেক সময়ে দেখা যায়, ফাঁকা রাস্তায় মাল-বোঝাই ভ্যানরিকশা চলছে ধীর গতিতে। তার পিছনে চলছে উত্তরবঙ্গের রকেট কিংবা ঢাকা-কলকাতার মতো সুপারফাস্ট বাসগুলি। পণ্য বা লম্বা বাঁশ নিয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বেআইনি ভ্যান-রিকশা। সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানদের যশোহর রোডে ভ্যান-রিকশা বন্ধের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ছাড়াও দু’পাশ দখল করে আছে অটো ও ট্যাক্সির স্ট্যান্ড। অবলীলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে চালকবিহীন ট্রাক। অটোরিকশাগুলি যেখানে সেখানে থেমে রাস্তায় যাত্রী তুলছে। ফলে ছোট হয়ে আসা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ছোট-বড় গাড়িকে। যাত্রীদের ভোগান্তি চলছেই।

পুরনো খবর





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.