প্রতি বছর বর্ষার পরে একই ছবি চোখে পড়ে। কোথাও জলে ভরা খানাখন্দ, কোথাও আবার রাস্তা জুড়ে পিচ উঠে, ইট বেরিয়ে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত। প্রতি বর্ষায় এমনই হাল হয় সল্টলেক কিংবা পার্শ্ববর্তী কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান ও বেলেঘাটা এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন প্রথমে যুক্তি দেয়, বর্ষা না কমলে কাজ করা যাবে না। কিন্তু তার পরেও যে কাজটা হয় সেটা প্যাচওয়ার্ক ছাড়া কিছু নয়। শীতের মরসুমেই ফের রাস্তা খারাপ হয়ে যায়, ফের তা মেরামত করা হয়।
যেমন, সল্টলেকের দত্তাবাদের রাস্তা। গত কয়েক বছরে ওই রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। মেরামতিও হয়েছে। কিন্তু এ বছরেও বর্ষার মরসুম আসতেই সেখানে ফের মেরামতির আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়ল। রাস্তা ভেঙেচুরে বিপজ্জনক সব ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, জানাচ্ছেন গাড়িচালক ও পথচারীরা। |
শুধুমাত্র একটি রাস্তাই নয়, ময়ূখ ভবন থেকে করুণাময়ী যাওয়ার রাস্তা, নিকো পার্ক থেকে জিডি আইল্যান্ড যাওয়ার রাস্তা-সহ একাধিক পথ দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী, সল্টলেকের একাধিক আইল্যান্ডের মুখে তৈরি হওয়া গর্ত দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মত গাড়িচালকদের। পাশাপাশি, কাঁকুড়গাছি, বেলেঘাটা খালপাড়-সহ একাধিক এলাকাতেও রাস্তার ছবি কার্যত একই।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার রাস্তা মেরামত করার নামে এক শ্রেণির লোকেদের ভাঁড়ার পূর্ণ হয়। কাজের কাজ কিছু হয় না। তাঁদের প্রশ্ন, কেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হচ্ছে না? কেনই বা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে না? এ দিকে, সল্টলেকের পুর প্রশাসনের কথায়, রাস্তা মেরামতির জন্য টেন্ডার-সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া তৈরি হয়ে রয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, “বর্ষার মরসুমে রাস্তা মেরামত করে কোনও লাভ হয় না। মেরামত করলে তা স্থায়ী হয় না, উল্টে আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায়। তাই বর্ষার মরসুমের পরেই রাস্তা মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হবে।” |
সল্টলেক পুরসভা সূত্রে খবর, কোনও রাস্তা মেরামতি কিংবা নতুন করে তৈরি করার সময়ে দু’-তিন বছরের সময় নির্দিষ্ট করা থাকে। যে সময়ের মধ্যে রাস্তা খারাপ হলে ভারপ্রাপ্ত ঠিকাদারই দ্রুত তা মেরামত করবেন। না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। যদিও এ সব কথা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সল্টলেক পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্তের উত্তর, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাস্তা খারাপ হলে ভারপ্রাপ্ত ঠিকাদারকেই রাস্তা মেরামত করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে তা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়নি। তাঁদের ‘সিকিউরিটি মানি’ ফেরত কিংবা পরবর্তী কাজ দেওয়া হয় না।”
ঠিকাদারদের একাংশের বক্তব্য, সল্টলেকে গাড়ির চাপ বাড়লেও রাস্তার মান উন্নত হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তার অবস্থা ঠিক রাখতে যে পরিমাণ খরচ হওয়া উচিত, ততটা অর্থ প্রশাসন খরচ করে না। ফলে যথোপযুক্ত মেরামতিও সম্ভব নয়। অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অনুপমবাবু দাবি করেছেন, “সীমিত স্বার্থের মধ্যেও মেরামতিতে বরাদ্দ করা অর্থেই সন্তোষজনক মানের কাজ করা যায়।” যদিও রাস্তার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “সল্টলেক পুরসভার আয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা মুশকিল। রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে বলে পুরসভা পরিষেবা দিতে পারছে।”
এ প্রসঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে পুরসভাগুলি প্রস্তাব পাঠালে বাজেট অনুযায়ী নিশ্চিত ভাবেই চিন্তাভাবনা করা হবে। তবে রাস্তা মেরামতিতে ঠিকাদারদের যুক্তি মানা যায় না। সব জেনেই টেন্ডারে অংশ নেন ঠিকাদারেরা।”
সল্টলেকের বাসিন্দাদের সংগঠন সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “উন্নত মানের রাস্তার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশাসন কি আদৌ ভাবছেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হোক। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অবশ্যই করতে হবে। তার জন্য পুর-আয় বাড়ানোর দিকটির কথাও ভাবতে হবে। উন্নত পরিষেবা পেতে হলে বাসিন্দাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।” প্রশাসনের দাবি, উন্নত প্রযুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। |