জমি-জটে আটকে রয়েছে কলকাতা মেট্রো রেলের চারটি প্রকল্পের কাজ। ফিরে যাচ্ছে টাকাও। এ অবস্থায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজকেই বিশেষ প্রাধান্য দিতে চাইছে রেল বোর্ড। তবে একইসঙ্গে খুঁড়িয়ে চলা কলকাতা মেট্রোকে কী ভাবে আরও চাঙ্গা করা যায়, তা নিয়েও শুরু হয়েছে ভাবনাচিন্তা।
জমি অধিগ্রহণের সমস্যা এবং রেলের অর্থ ভাণ্ডারের কথা মাথায় রেখে রেল বোর্ড আপাতত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পটিকেই পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে। চলতি বাজেটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে একশো কোটি টাকা। যার ম্যাচিং গ্র্যান্ট হিসেবে আরও চারশো কোটি টাকা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ইস্ট-ওয়েস্ট কর্তাদের মতে, চলতি বছরের জন্য আরও প্রায় ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে তাঁদের। তাই মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এখন কী ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায়, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “অন্য কোনও খাত থেকে ওই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
রেল বোর্ড সূত্রের বক্তব্য, তুলনামূলক ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে জমি-সমস্যা অন্য প্রকল্পের চেয়ে কিছুটা কম। এই মেট্রোর বেশির ভাগ অংশই যাবে মাটির উপর দিয়ে। কিছুটা অংশ যাবে মাটির নীচ দিয়ে। মাটির নীচে যেটুকু জায়গায় জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে (বিশেষত সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন লাগোয়া), তা মেটানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মাটির তলায় কোথা দিয়ে মেট্রো যাবে, তা নিয়েও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। জমি সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই জোরকদমে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে দাবি মন্ত্রকের।
তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত মেট্রোর নতুন প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ কী? এ বিষয়টি নিয়ে বোর্ড কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, গত বছর রেল বাজেটে মেট্রোর প্রকল্পগুলির জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগটাই খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। টাকা ফেরত আসায় স্বাভাবিক নিয়মে কমে গিয়েছে বরাদ্দ। মন্ত্রকের অবশ্য বক্তব্য, টাকা খরচ করতে না পারার পিছনে প্রধান কারণ জমি সমস্যা।
শুধু নতুন জমি অধিগ্রহণ করাই নয়, যে জমিগুলি রেলেরই মালিকানায় রয়েছে, সেই জমিও এখন দখলদারদের সরিয়ে উদ্ধার করতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, দখলদার হটাতে গেলে রাজ্য সরকারের যে সাহায্য প্রয়োজন তা মিলছে না। রেল বোর্ড কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জমি সমস্যা না মেটা পর্যন্ত ওই সব প্রকল্পে টাকা বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর কোনও মানেই হয় না। বরং ওই টাকা দিয়ে পরিকাঠামোর উন্নতি করা আশু প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
গত কয়েক বছর ধরেই মেট্রোর যাত্রী পরিষেবা শিকেয়। নিয়মিত লেগে রয়েছে মেট্রোর গোলমাল। রেকগুলি পুরনো হয়ে যাওয়ায় সমস্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। একদিন বাতানুকূল যন্ত্র তো অন্য দিন ব্রে-শু্য আটকে যাওয়া। এমন কি কামরারগুলিতে ছাদ থেকে জল ঝরে পড়ায় ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। প্রায় প্রতিদিনই পরিকাঠামোগত সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। মেট্রোর ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, মেট্রোর বহু পদ খালি রয়েছে দীর্ঘ দিন। নিয়োগ কার্যত বন্ধ। পূর্ণ সময়ের জেনারেল ম্যানেজারও নেই। অনেক চালকের পদও ফাঁকা। মেট্রোর কাজে গতি আনতে এখন তাই পূর্ণ সময়ের জন্য জেনারেল ম্যানেজার বসাতে চাইছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই পদে সম্ভাব্য নাম নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।
মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য কলকাতায় কেউ যেতেও চাইছেন না। তাই দীর্ঘ সময় ধরে খালি মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পদটি।” মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধু মেট্রো নয়, একাধিক জোনে জেনারেল ম্যানেজারের পদ খালি। সেগুলি পূরণের জন্য সম্ভাব্য তালিকাও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটির কাছে। তারা সবুজ সঙ্কেত দিলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। |