ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো
প্রায় শেষ সুড়ঙ্গ, তবু সমস্যা
বেলেঘাটা খালের নোংরা জলের তলা দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ। বাইপাসের ধারে সুভাষ সরোবর থেকে বেলেঘাটা খাল পেরিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের ৬৬০ মিটার আগে দু’দিকে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। আপাতত সুড়ঙ্গের ভিতরে রেললাইন পেতে জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা চলছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সুভাষ সরোবর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত দু’দিক থেকে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ করে ফেলা যাবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা।
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, ২০১২-এর ফেব্রুয়ারিতে সুভাষ সরোবর থেকে ফুলবাগান হয়ে বেলেঘাটা খালের তলা দিয়ে শিয়ালদহের কাছে পর্যন্ত ওই সুড়ঙ্গ তৈরি শুরু হয়। ফুলবাগানের কাছে সুড়ঙ্গের একটি মুখের কাজ শেষ হলেও সুড়ঙ্গের অন্য মুখটি ২৫ জুন জোড়া লাগবে।
কাজ চলছে সুড়ঙ্গে। ছবি: দেবাশিস রায়।
তবে দত্তাবাদে জমি দিতে সমস্যায় পড়েছে রাজ্য। এই এলাকায় মাটির উপর দিয়ে ১২টি কংক্রিটের স্তম্ভ ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তার জন্য ১৪৮টি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হবে। অগত্যা মেট্রো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ৩০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করে ৭টি বড় স্তম্ভ তৈরি করলে মাত্র ৬০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করলেই কাজ করা সম্ভব হবে। উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসীদের জন্য পাশেই একটি সরকারি জমি কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি)-কে দিয়েছে নগরোন্নয়ন দফতর। কোন পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা হবে, তা চিহ্নিত করার কথা নগরোন্নয়ন দফতর ও বিধাননগর পুরসভার। কিন্তু তারা তা করতে না পারায় ওই এলাকায় কাজ আটকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা একটি কমিটি গড়ে দিয়েছি। সেই কমিটিতে বিধাননগরের পুর-চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী, ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, এবং সল্টলেকের ল্যান্ড ম্যানেজার রয়েছেন। তাঁরা সমীক্ষা করে রিপোর্ট দিলে কত জনকে পুনর্বাসন দিতে হবে তা জানার পরে আমরা জমি দেব। কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না।” বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, “আমরা উচ্ছেদ করব না। পুনর্বাসন দিয়ে তবেই কাজ করা হবে। সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ৬০টি না ৭৫টি পরিবারকে সরাতে হবে, তা দেখা হচ্ছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জমি দেওয়া হয়েছে। বাড়ি তৈরি করতে বলেছি। বাড়ি হলেই ওই পরিবারগুলি সরে যাবে।” বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বলেন, “পঞ্চায়েত নিয়ে ব্যস্ত আছি। এখন কিছু বলতে পারব না।”
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন পথ দিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো যাবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে মতান্তর। এক পদস্থ কর্তার কথায়, “প্রথমে যখন আমরা সমীক্ষা করি, তখন ঠিক হয়েছিল, সেক্টর ফাইভ থেকে সুভাষ সরোবর পর্যন্ত মাটির উপর দিয়ে মেট্রো চলবে। দত্তাবাদ ছাড়া মাটির উপরের কাজ শেষ হয়েছে। সুভাষ সরোবর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত প্রথম দফায় মাটির নীচে সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে মেট্রো চলবে। সেই কাজই চলছে। শিয়ালদহ থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট বরাবর সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন হয়ে লালবাজার স্ট্রিট দিয়ে রাধাবাজার হয়ে টি বোর্ডের সামনে দিয়ে ব্রেবোর্ন রোডের উপরে মহাকরণ স্টেশন হওয়ার কথা। তার পরে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়া স্টেশনের ১৫ এবং ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখান দিয়ে শরত্‌ সদন পর্যন্ত পুরোটাই মাটির নীচ দিয়ে যাওয়ার কথা।” ওই কর্তা জানান, রাজ্য সরকার এই রুট বদলে ঠিক করেছে, শিয়ালদহ থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা দিয়ে রাজভবন-লালদিঘি হয়ে মেট্রো পৌঁছবে মহাকরণ স্টেশন। তার পরে ব্রেবোর্ন রোড ধরে আর্মেনিয়ান ঘাট হয়ে গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়ায় শরত্‌ সদনে লাইন নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে সরকার। এই রুটে যেতে হলে লাইনের দৈর্ঘ্য ১৮৭৮ মিটার বেড়ে যাচ্ছে। খরচ বাড়ছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বাড়ছে একটি স্টেশন। হাওড়া ময়দান থেকে কাজ শুরু হয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। রুট চূড়ান্ত না হওয়ায় আটকে গিয়েছে দ্বিতীয় দফার কাজ।
মহাকরণ এবং কেএমআরসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ১৪.৫৮ কিলোমিটার রাস্তায় ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো চলাচল করবে। ৪৮৭৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প মঞ্জুর হয় ২০০৮ সালে। এই মেট্রো মাটির উপর দিয়ে যাবে ৫.৭৪ কিলোমিটার। বাকি অংশ যাবে মাটির নীচ দিয়ে। মাটির উপরে ৬টি স্টেশন এবং মাটির নীচে ৬টি স্টেশন হওয়ার কথা। সেন্ট্রাল পার্কে ডিপো তৈরি হয়েছে। সেখানেই সমস্ত ট্রেন থাকবে। এই প্রকল্প তৈরির সময়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শেয়ার ছিল ৫ শতাংশ করে। জাপানি সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ২২৫৩ কোটি টাকা। ২০১০ সালে রাজ্য সরকার তাদের শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে সিদ্ধান্ত নেন, রেল এই প্রকল্পের শেয়ার নেবে। ২০১২ সালে ২৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয়, এই প্রকল্প থেকে রাজ্য সরকার শেয়ার ছেড়ে দেবে। রেলকে ৭৪ শতাংশ শেয়ার দেওয়া হয়। বাকি ২৬ শতাংশ শেয়ার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের থেকে যায়। মেট্রোর এক কর্তা বলেন, “সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত প্রথম দফার কাজ ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। হাওড়া ময়দান পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের অক্টোবরে। কিন্তু রুট পরিবর্তন চূড়ান্ত না হওয়া এবং জমি জটে আটকে গিয়ে প্রকল্পের কাজে দেরি হয়ে গিয়েছে। ফলে এই রুটে প্রথম দফায় মেট্রো চলাচল ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের আগে সম্ভব নয়।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.