জমি-মামলা তুলল রাজ্য, বিপন্ন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো
বিশ বাঁও জলে চলে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
তৃণমূল ইউপিএ সরকার ছেড়ে চলে আসার পর থেকে এমনিতেই এই প্রকল্প ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। তার পর, গত মাসে এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি আপিল মামলা থেকে সরে আসতে চেয়ে আর্জি জানায় রাজ্য সরকার। সরকারের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলা খারিজও করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য জমি পাওয়া ঘোরতর অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
রেল-কর্তাদের ধারণা, এই প্রকল্পে তাদের আর কোনও উৎসাহ নেই বোঝাতেই রাজ্য ওই মামলা থেকে সরে এসেছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন খোদ রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিষয়টি আদালতের এক্তিয়ারে বলে মুখে কুলুপ এটেছেন।
নিউটাউন থেকে শিয়ালদহ হয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর আসার কথা ছিল বর্তমান মেট্রো রেলের সেন্ট্রাল স্টেশন এলাকায়। সেখান থেকে মহাকরণ হয়ে হুগলি নদী পেরিয়ে হাওড়ায়। সেই মতো সেন্ট্রালে বড় ক্রসওভার স্টেশন করার জন্য বাম আমলে বৌবাজারে জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে জমি মালিকেরা হাইকোর্টে মামলা করেন। মাস দুয়েক আগে বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অবৈধ জানিয়ে জমি ফেরানোর নির্দেশ দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর পরিবহণসচিব আদালতকে জানান, তাঁরা আর এই মামলা চালাতে চান না। ফলে মামলা খারিজ করে দেয় বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত ও বিচারপতি মৃণালকান্তি সিংহের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পর মালিকদের অধিগৃহীত জমি ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না।
কেন এমন পথে হাঁটল রাজ্য?
রেল কর্তাদের অনেকের মতে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে বরাবর নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছেন তৃণমূল নেতারা। কেন্দ্রের নগরোন্নয়ন দফতর, রাজ্যের পরিবহণ দফতর মিলে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল বাম আমলে। প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে জাপান সরকারের সংস্থা জাইকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রী হওয়ার পরে রেল দাবি করে, তারাই এই প্রকল্প গড়বে। তাতে আপত্তি জানায়নি তৎকালীন বাম সরকার। প্রকল্প হস্তান্তর অবশ্য হয় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে। রেল কর্তাদের ওই অংশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে আসার পরে আবার ওই প্রকল্প সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে তৃণমূল।
অধীরবাবু এ দিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে যে দল সরকারে রয়েছে, তারা আগে দেখে কোনও প্রকল্পের কৃতিত্ব তারা দাবি করতে পারবে কিনা। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। রাজ্যের স্বার্থে একটা প্রকল্পের জন্য তারা রেলের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না, এটা দুঃখের। তবে এই প্রকল্পের জন্য রেল নিজেই লড়াই করবে।” রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রূপায়ণের জন্য গঠিত সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) ইতিমধ্যেই একটি আপিল মামলা দায়ের করেছে। হাইকোর্ট তা গ্রহণ করলেও এখনও শুনানি শুরু হয়নি।
রাজ্য সরকার কেন মামলা থেকে সরে এল, তার একটি অন্য ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে পরিবহণ দফতর সূত্রে। দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই রুটে মেট্রো যাক তা সরকার চায় না। সেই কারণেই মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বস্তুত, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের সংঘাতের অন্যতম ক্ষেত্র এই রুট বদলের প্রস্তাব। বৌবাজারে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আপত্তি ওঠার পরে মেট্রোর পথ ঘুরিয়ে হিন্দ সিনেমা, ধর্মতলা, লালদিঘি হয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল মন্ত্রক তৃণমূলের হাতে থাকার সময় রাইট্সকে দিয়ে এ ব্যাপারে সমীক্ষাও করানো হয়। কিন্তু অধীর মন্ত্রকে এসেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি রুট বদলের পক্ষপাতী নন। তাতে প্রকল্পের খরচ আরও কয়েকশো কোটি টাকা বাড়বে। যা দেওয়ার ক্ষমতা রেলের নেই। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের মতে, অধীরকে রুট বদলে বাধ্য করতেই মামলা তুলে নিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও তার জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গোটা প্রকল্পেরই ভবিষ্যৎ।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ঘিরে সঙ্কট ঘনীভূত হলেও মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল নেতারা। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “এটা আদালতের ব্যাপার। আমি পুরো বিষয়টি না-জেনে কোনও মন্তব্য করব না।”
রেলের কর্তারা বলছেন, শুধু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নয়, রাজ্যের জমি নীতির জেরে বিপাকে পড়েছে অন্য মেট্রো প্রকল্পও। মেট্রোর কর্তাদের সম্প্রতি মহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে রাজ্য সরকারের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর জমি অধিগ্রহণ করবেন না। ফলে ওই সব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রেল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.